বুধবার রাত ১২:১০, ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং

চমস্কি-অরুন্ধতিরা পুঁজিবাদী গোলাম

জাকির মাহদিন

পুঁজিবাদী পুরস্কার, মিডিয়া, ব্যক্তিত্ব তাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। এ জাতীয় প্রতিবাদী ও বিপ্লবীরা তলে তলে পুঁজিবাদীদের মাসতুতো ভাই। অরুন্ধতিরা জানে না এদের নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মকাণ্ডের মূল গলদ কোথায়। এরা দিন দিন লেখক হন, বিজ্ঞানী হন, কিন্তু মানুষ হন না।

একশত মরা মানুষের বিচ্ছিন্ন হাত-পা, নাক-মুখ-মাথা একত্রিত করলেও যেমন একজন জ্যান্ত মানুষ হবে না, কয়েক হাজার অন্ধ, বধির ও বোবা মানুষকে একত্রিত করলেও যেমন একজন পূর্ণ  মানুষ হবে না, চমস্কি-অরুন্ধতিদের অবস্থাও ঠিক এমনই। এই শ্রেণির প্রতিবাদী ও বিপ্লবী লেখক-লেখিকারা নিজ নিজ নির্দিষ্ট সমাজের সামান্য একটা অংশের বস্তুগত কিছু আংশিক সমস্যা তুলে ধরেন। চিৎকার-চেঁচামেচি করে প্রচুর জল ঘোলা করেন। লক্ষ-কোটি মানুষের বিচ্ছিন্ন বিভক্ত আংশিক সমস্যা সমাধানে সংগ্রাম করেন। কিন্তু বিশ্বের একজনমাত্র মানুষেরও পূর্ণাঙ্গ সমস্যা তুলে ধরতে পারেন না। মাত্র একজন মানুষেরও জীবনের পূর্ণরূপ, পূর্ণচাহিদা ব্যাখ্যা করতে পারেন না। একজন মানুষের পূর্ণ শিক্ষার পাঠ্যসূচি বা কারিকুলাম দিতে পারেন না।

এরা দিন দিন লেখক হন, বিজ্ঞানী হন, কিন্তু মানুষ হন না। আজকের বিশ্বে প্রত্যক্ষমান এই কথিত গণতন্ত্র ও সাম্রাজ্যবাদ টিকিয়ে রাখতে এবং উত্তরোত্তর সম্প্রসারণ করতে নোম চমস্কি এবং অরুন্ধতিদের মতো কিছু ‘প্রতিবাদী’ ও ‘বিপ্লবী’ লেখকের প্রয়োজন আছে। এরা পুঁজিবাদের সরাসরি কেনা গোলাম। বিশ্বের বিশেষ একটা শক্তিশালী শ্রেণিকে কিছু মাল-মশলা দিয়ে এরা যুগের পর যুগ শান্ত রাখে। এই শান্ত শ্রেণিটা এটা ভেবেই জীবন পার করে যে বিপ্লব হবে, হচ্ছে, এই তো হয়েই যাচ্ছে…। এদের মানস-বাপ-দাদারাও এভাবেই জীবন পার করেছে। ভবিষ্যতে এদের মানস-নাতিপুতিরাও এভাবেই জীবন পার করবে।

এই শ্রেণির প্রতিবাদী ও বিপ্লবী লেখক-লেখিকারা নিজ নিজ নির্দিষ্ট সমাজের সামান্য একটা অংশের বস্তুগত কিছু আংশিক সমস্যা তুলে ধরেন। চিৎকার-চেঁচামেচি করে প্রচুর জল ঘোলা করেন। লক্ষ-কোটি মানুষের বিচ্ছিন্ন বিভক্ত আংশিক সমস্যা সমাধানে সংগ্রাম করেন। কিন্তু বিশ্বের একজনমাত্র মানুষেরও পূর্ণাঙ্গ সমস্যা তুলে ধরতে পারে না। মাত্র একজন মানুষেরও জীবনের পূর্ণরূপ, পূর্ণচাহিদা ব্যাখ্যা করতে পারেন না।

অরুন্ধতিদের মতো কয়েক হাজার লেখকও বাংলাদেশের মতো একটা ছোট্ট রাষ্ট্রকে বর্তমান অবস্থা থেকে তেমন একটা বের করতে পারবে না। কারণ অরুন্ধতিরা জানে না এদের নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মকাণ্ডের মূল গলদ কোথায় এবং তথাকথিত গণতন্ত্র ও পুঁজিবাদের ক্ষমতা কতো। সমস্যা সমাধানের জন্য এরা লেখে না, ‘সাহিত্য’ সৃষ্টির প্রয়োজনে লেখে, পেটপূঁজা, খ্যাতি ও পুরস্কারের লোভে এরা লেখে। আর লেখার স্বার্থে কিছু সমস্যা তুলে ধরে, এই যা।

তাই শহীদুলের মতো আগাগোড়া অগঠনমূলক ব্যক্তিত্ব আর আনিসুল হকের মতো কমেডিয়ান পুঁজিবাদী লেখকদের সাথেও এদের ভালো খাতির। পুঁজিবাদী পুরস্কার, মিডিয়া, ব্যক্তিত্ব তাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। এই অরুন্ধতি রায়ের অন্যতম গুরু আমেরিকান ‘প্রতিবাদী’ লেখক নোম চমস্কি। যিনি প্রবল প্রতিবাদ ও বিপ্লবের ভেতর দিয়েও দিব্যি ভালোই আছেন। এ জাতীয় প্রতিবাদী ও বিপ্লবীরা তলে তলে পুঁজিবাদীদের মাসতুতো ভাই। অবশ্য এখন তলে তলে নয়, প্রকাশ্যেই।

 

জাকির মাহদিন : সমাজগবেষক, কলামিস্ট

zakirmahdin@yahoo.com

ক্যাটাগরি: মিনি কলাম

ট্যাগ:

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply