জিহাদ অনেকটা রাষ্ট্রীয় পুলিশ, প্রশাসন, সেনাবাহিনীর মতো। যা রাষ্ট্রের সংবিধান ও মৌলিক নীতি মেনে পরিচালিত হতে হবে।
জিহাদ ছেড়ে দেয়া নয় বরং জ্ঞান অন্বেষণ ও ‘সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ’ ছেড়ে দেয়াই মুসলমানদের চরম দুঃখ-দুর্দশার কারণ। আজকের মুসলিম শাসক এবং মুসলমানদের চিন্তা-জ্ঞানের দুর্বলতা এতই প্রকট যে, জিহাদের সংজ্ঞা, শর্ত, মূল উদ্দেশ্য বোঝারও সামর্থ্য প্রকাশিত নয়। তাই শুধু নামধারী আবেগপ্রবণ সাধারণ মুসলমানরা নয়; আলেম-মুফতি হিসেবে পরিচিত বড় বড় ব্যক্তিত্ব, ইসলামি স্কলার, এরদোগান-মাহাথিরের মতো মুসলিম শাসকরাও জিহাদ নিয়ে চরম বিভ্রান্তিতে আছে এবং বিশ্বে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে তথা পরিস্থিতি উত্তপ্ত করছে।
এরা জিহাদের সময়, শর্ত, উদ্দেশ্য এবং সর্বোপরি জিহাদ ও যুদ্ধের পার্থক্য মানব জাতির সামনে তুলে ধরতে পারছে না। বরং জিহাদ নিয়ে বলতে গিয়ে বারবার সাম্প্রদায়িকতা ও সংকীর্ণ মনোভাবের পরিচয় দিচ্ছে। আবেগতাড়িত হচ্ছে। সাধারণ মানুষের প্রবৃত্তিাজত চোখ দিয়ে জীবনকে দেখছে। কৃত্রিম শ্রেণিবৈষম্য তৈরি করছে।
ধর্মের সঠিক শিক্ষা না পেলে ধর্মের নামে আবেগ, অন্ধত্ব, মূর্খতা ইত্যাদি বড়ই মারাত্মক। এ কারণে পৃথিবীর বহু বড় বড় পণ্ডিত, রাজনীতিক, চিন্তাশীল, মানবতাবাদী ব্যক্তি ধর্মে বিশ্বাস করেন না বা করতে পারেন না।
অন্যান্য সমস্ত ধর্ম, সম্প্রদায় এবং গোষ্ঠীর লোকেরা নিজ নিজ ধর্ম, সম্প্রদায়, শ্রেণি ও গোষ্ঠীর স্বার্থেই সবকিছু করে। আর একমাত্র মুসলমানরাই সমস্ত মানবজাতির স্বার্থে সবকিছু করে এবং সর্বক্ষেত্রে নিজেদের জাগতিক স্বার্থটা ছোট করে দেখে। এটাই অন্যান্য ধর্ম, মতবাদ, সম্প্রদায়, শ্রেণির সাথে মুসলমানদের মূল পার্থক্য। যখন মুসলমানরা এমনটার পরিচয় ও প্রমাণ রাখতে পারবে না তখন মুসলমানদের চেয়ে দুর্ভাগা ও দুর্দশাগ্রস্ত জাতি দ্বিতীয় কেউ হবে না।
আরো পড়ুন> দুঃখই জীবনকে পরিপূর্ণতা দেয়
জিহাদের অনেকগুলো বৈশিষ্ট্যের একটা হচ্ছে- এটা অনেকটা রাষ্ট্রীয় পুলিশ, প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর মতো। এটা রাষ্ট্রের সংবিধান ও মৌলিক নীতি মেনে পরিচালিত হতে হবে। যে কেউ চাইলেই জিহাদের নামে যখন তখন তলোয়ার হাতে নিতে পারবে না। গুলি, বোমা মারতে পারবে না।
আরেকটি কথা, প্রচুর চিন্তা, জ্ঞান অন্বেষণ ও সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের পথ ছেড়ে দিলে মুসলমানরা নিজেদের মধ্যেই দলাদলি, হানাহানি মারামারির কোনো কূল-কিনারা করতে পারবে না। যা আজ ইসলামি দল ও গোষ্ঠীগুলোতে হচ্ছে। এমতাবস্থায় রাষ্ট্রক্ষমতা পেলে এরা একটি রাষ্ট্রকে সাক্ষাৎ-দোযখ বানিয়ে ফেলবে।
কারণ ধর্মের সঠিক শিক্ষা না পেলে ধর্মের নামে আবেগ, অন্ধত্ব, মূর্খতা ইত্যাদি বড়ই মারাত্মক। এ কারণে পৃথিবীর বহু বড় বড় পণ্ডিত, রাজনীতিক, চিন্তাশীল, মানবতাবাদী ব্যক্তি ধর্মে বিশ্বাস করেন না বা করতে পারেন না। ধর্মে তাদের আস্থার জায়গাটি আমরাই নষ্ট করে দিচ্ছি।
জাকির মাহদিন : সাংবাদিক ও কলামিস্ট। সম্পাদক, দেশ দর্শন
zakirmahdin@gmail.com
ক্যাটাগরি: মিনি কলাম
[sharethis-inline-buttons]