দুঃখই জীবন ও জীবনের মূল্যকে উপলব্ধি করতে শেখায়। দুঃখই জীবনকে পরিপূর্ণতা দান করে। অবশ্য যদি দুঃখকে ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করা যায়। মানসিক দুঃখ-যাতনা ছাড়া জীবন অর্থহীন। দুঃখ-কষ্ট না থাকলে পশু-পাখী ও অন্যান্য প্রাণীর সাথে মানুষের জীবনের কোনো মৌলিক পার্থক্য থাকে না।
অথচ মানুষ গণ্ডমূর্খের মতো সারাজীবন একে ভয় পায়। এ থেকে দৌড়ে পালায়। যতসব কর্ম ও চেষ্টা-তদবীর- সব দুঃখ-কষ্ট থেকে বাঁচার জন্যই। কিন্তু পরিশেষে আবার এর খপ্পড়েই পড়তে হয়। কেন? কারণ পৃথিবীতে আসার অন্যতম উদ্দেশ্যই তো দুঃখ-কষ্টের মুখোমুখি হয়ে জীবনের পরিচয় নেয়া। জীবনকে সঠিক পথে পরিচালিত করা। সহ্যসীমার ভেতরে উচ্চতর দুঃখ-কষ্ট ছাড়া জীবনকে বুঝার ও সঠিক পথে পরিচালিত করার দ্বিতীয় কোনো পথ নেই।
আরো পড়ুন> জন্মনিয়ন্ত্রণ করুন, জন্মহত্যা নয়
প্রশ্ন আসবে, তাহলে দুঃখ-কষ্টের দ্বারা কারো মৃত্যু হলে জীবনের এই পরিচয় ও উপলব্ধি কী কাজে লাগবে? হ্যাঁ, মূল প্রশ্নটা তো এখানেই। মানুষ মাত্র পঞ্চাশ-একশো বছর বাঁচতে জন্ম নেয়নি। মানুষ এমন এক শক্তি, এর ভেতরে এক সীমাহীন শক্তি ও সীমাহীন আশা-আকাঙ্ক্ষা বসবাস করে। এর কোনো মৃত্যু নেই, তবে রূপান্তর আছে। হয় এটি চিরস্থায়ী যন্ত্রণায় রূপান্তরিত হবে, নতুবা চিরস্থায়ী শান্তিতে।
মানুষের জীবন যদি সীমতই হতো, তাহলে এর ভেতরে সীমাহীন আশা-আকাঙ্ক্ষা বসবাস দূরের কথা, ঢুকতেই পারতো না। আজ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এতসব আবিষ্কারে মানুষ নিজের প্রতি হতাশ। অধিকাংশ ধর্মীয় ও অন্যান্য লোকজন মানুষকে বিভিন্ন বস্তু ও প্রাণীর সঙ্গে তুলনা করে দৃষ্টান্ত দেয়। অথচ মৌলিক জায়গায় মানুষ ব্যতিক্রম ও অনন্য। সৃষ্টিজগতে একমাত্র মানুষই সীমাহীন সুখ, শান্তি, চেন্তা-চেতনা ও বেঁচে থাকার আশা-আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে।
জাকির মাহদিন : সাংবাদিক ও কলামিস্ট।সম্পাদক, দেশ দর্শন
zakirmahdin@gmail.com