আজকাল কে কার আগে সংবাদ পরিবেশন করবে তা নিয়ে সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমগুলোর মধ্যে একটা চরম প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যায়। অথচ নেতিবাচক ‘বাস্তবতাকে’ ইতিবাচকে রূপান্তরিত করার কোনো পদক্ষেপ-প্রয়াস তাদের কারো মধ্যেই দেখা যায় না। তারা মনে করেন, সংবাদের পেছনে দৌড়ালেই দায়িত্ব শেষ! যতসব অনাকাঙ্ক্ষিত সংবাদ সংগ্রহ ও প্রকাশ নিয়ে তারা রীতিমত গর্ববোধও করেন।
বছরখানেক আগে দেশ দর্শন সম্পাদক জাকির মাহদিন দৈনিক আজকালের খবরে দৌড় সাংবাদিকতা শিরোনামে একটি কলাম লিখেছিলেন। সেদিন মার্কিন মুল্লুকে কথিত ‘সংবাদ’ সংগ্রহে এক নারী-সাংবাদিকের ‘দৌড়’ দেখে বিশ্ব হতবাক! আমরাও বাস্তবে ‘দৌড় সাংবাদিকতা কাহাকে বলে’ তা বাস্তবে অবলোকন করলাম। এ দৌড় বিশ্বের সংবাদ মাধ্যগুলোতেও তাৎক্ষণিক ঝড় তুলেছে। এ দৌড়কে ঠিক কীভাবে প্রকাশ যায় আমাদের জানা নেই।
অমন দৌড় সাধারণত অলিম্পিক প্রতিযোগিতায় হয়ে থাকে। সাংবাদিকের নাম, ক্যাসি সেমিয়ন। সে মুহূর্তে তিনি নীল ড্রেস পড়া ছিলেন। ঘটনাটি ঘটেছে, গত ২১ আগস্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক চাকুরে- পল ম্যানাফোর্টের আলোচিত মামলার রায়ের দিন। তার সে দৌড়কে তখনই কেউ কেউ লাইভে দেখায়। অন্য সাংবাদিকদের দৃষ্টি তখন মামলার রায় নয় বরং তার দৌড়ের দিকে। এরপর মামলার রায়কে ছাপিয়ে এনবিসির সেই নারী সাংবাদিকের দৌড়ই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোরও আলোচনার প্রধান বিষয় হয়ে উঠে। এ দৌড়ের ছবি দিয়ে অনেক পত্রিকা নিজেদের প্রধান খবরও প্রকাশ করে।
আজকাল কে কার আগে সংবাদ পরিবেশন করবে তা নিয়ে সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমগুলোর মধ্যে একটা চরম প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যায়। অথচ নেতিবাচক ‘বাস্তবতাকে’ ইতিবাচকে রূপান্তরিত করার কোনো পদক্ষেপ-প্রয়াস তাদের কারো মধ্যেই দেখা যায় না। তারা মনে করেন, সংবাদের পেছনে দৌড়ালেই দায়িত্ব শেষ! যতসব অনাকাঙ্ক্ষিত সংবাদ সংগ্রহ ও প্রকাশ নিয়ে তারা রীতিমত গর্ববোধও করেন। দিন-মাসশেষে মাইনেটাই তাদের আসল উদ্দেশ্য। অবশ্য যারা এ উদ্দেশ্যে কিছুটা বা অনেকটা ছাড় দেন তাদেরও চিন্তা, কাজ এবং কলাকৌশলগুলো যথেষ্ট খোঁজাখুঁজির অপেক্ষা রাখে।
প্রায় সব সংবাদিকই কোন্ সংবাদটা সমস্যাপূর্ণ আর কোনটা সমস্যাপূর্ণ না- তা বাছাই করতে পারে না। বলতে গেলে, সংবাদ ও সাংবাদিকতা সম্পর্কে তাদের ন্যূনতম জ্ঞান নেই্। তাদের ‘প্রভুরা’ যা তাদের শেখায়, যেভাবে শেখায়, তারা তাই করে, সেভাবেই করে। আজকের বিশ্বের এ জাতীয় সাংবাদিকতায় বিশ্ব আরো বেশি এবং দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে বিশ্লেষকগণ মনে করছেন।
এ ধরনের সাংবাদিকতা ও প্রতিযোগিতা আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে উঠে, যখন এর পক্ষে সাফাই চলতে থাকে। আর এ ঘটনায় শুধু সাফাই নয়, সাংবাদিক নিজে এবং তার প্রতিষ্ঠান এনবিসি গর্বিত!
ক্যাটাগরি: প্রধান খবর, বিশেষ প্রতিবেদন
[sharethis-inline-buttons]