শুক্রবার সন্ধ্যা ৭:৫২, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং

মৌলবাদ, বিজ্ঞানবাদ ও আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা

মোজাম্মেল হক

বাদ হলো- কথন, ভাষণ, উক্তি। অর্থাৎ মৌলবাদ মূলের কথা বলে, উৎপত্তির কথা বলে। নানাবিধ কারণে মৌলবাদ শব্দের সঙ্গে ধর্ম যুক্ত হয়ে ধর্মীয় মৌলবাদ কথাটির উদ্ভব ঘটিয়েছে। আসলে যে কোনো মত, দর্শন বা আদর্শের মূল বা উৎস থাকে। সেইভাবে ধর্মসমূহেরও তা আছে। ধর্মের মূল হলো বিশ্বাস।

মূল হলো শিকড়, গোড়ার অংশ, বৃক্ষমূল। যা থেকে ধীরে ধীরে বৃক্ষটির বিকাশ ঘটে। পরিচর্যা ও জলসিঞ্চনে বেড়ে ওঠে। শাখা-প্রশাখা, পত্র-পল্লবের বিস্তার ঘটে। ফুলে-ফলে সুশোভিত হয়ে বৃক্ষটি পরিপূর্ণতা লাভ করে। তাই মূলকে আদি, প্রথম, ভিত্তি, উৎস বা উৎপত্তিস্থলও বলা হয়। আর মৌল শব্দের অর্থও অনুরূপ। অর্থাৎ মূল থেকে যা উৎপন্ন হয়। তার সাথে ‘বাদ’ যুক্ত হয়ে মৌলবাদ শব্দটি গঠিত হয়েছে।

বাদ হলো- কথন, ভাষণ, উক্তি। অর্থাৎ মৌলবাদ মূলের কথা বলে, উৎপত্তির কথা বলে। নানাবিধ কারণে মৌলবাদ শব্দের সঙ্গে ধর্ম যুক্ত হয়ে ধর্মীয় মৌলবাদ কথাটির উদ্ভব ঘটিয়েছে। আসলে যে কোনো মত, দর্শন বা আদর্শের মূল বা উৎস থাকে। সেইভাবে ধর্মসমূহেরও তা আছে। ধর্মের মূল হলো বিশ্বাস। প্রণেতা বা প্রবর্তক হাজার হাজার বছর আগে যে ভূভাগে যাঁর জন্ম, যে ধর্মের যিনি গোড়াপত্তণকারী তিনি যা বলেছেন, বিশ্বাস করে প্রকাশ প্রচার করেছেন, নিজে ধারণ ও আচরণ করেছেন তাই তাঁর অনুসারীদের জন্য বাক্য ব্যয় না করে প্রশ্নহীনভাবে গ্রহণীয়, পালনীয় এবং বিশ্বাস্য। এর কোনো ব্যত্যয় ঘটানোর সুযোগ নেই।

ধর্মের দোহাই পেড়ে যারা অন্ধভাবে মৌলবাদ সমর্থন করে যা পরে জঙ্গীরূপ ধারণ করে, তাদের প্রতি বিনীত প্রশ্ন- বিজ্ঞানের বিকাশমান ধারার পরিবর্তে মূলে প্রত্যাবর্তনের মৌলবাদী ধারায় ফিরে যাওয়া কি মননশীল চেতনাসম্পন্ন কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব?

তবে মানুষ তো চেতনারহিত বোবা প্রাণী নয়। অন্ধ আবেগ-ভালোবাসার পাশাপাশি মানুষের মধ্যে যাচাই-বাছাই করার ক্ষমতা, দক্ষতা, বুদ্ধি, বিবেচনা, প্রজ্ঞাও আছে। তাই সময়ে সময়ে মানুষ প্রশ্ন তুলেছে, উত্তর খুঁজেছে, অনেক বিষয়ে সমাধানও করতে পেরেছে। এতে অন্ধ বিশ্বাসের স্থলে রহস্য ও অন্ধকার দূর করে বিজ্ঞানের আলো অনেক অচেনা অজানা বিষয়কে মানুষের সম্মুখে উন্মোচিত করেছে। এর ফলে বিশ্বাসের সাথে বিজ্ঞানের বৈরী সম্পর্ক স্থাপিত হয়। পাদ্রী, পুরোহিত, যাজকগণ বিশ্বাসের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেয়, তাঁরা অনুসারীদের সংঘবদ্ধ করে বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। যুগে যুগে আক্রান্ত হয় সক্রেটিস, ব্রুনো, হাইপেশিয়া, ইবনে সিনা, মেকিয়াভেলিসহ কত শত সহস্র গুণীজন।

তারপরও বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা থামানো যায়নি। গোটা ইউরোপে যাজকতন্ত্র জেঁকে বসে। ফলে শতশত বছরব্যাপী গৃহযুদ্ধ চলে, লক্ষ লক্ষ বিশ্বাসী সাধারণ মানুষের মৃত্যু ঘটে। এখন ধর্ম সেখানে মানবসেবার ব্রত নিয়ে বিশ্বের দেশে দেশে মিশনারী কার্যক্রম চালাচ্ছে। এখন ঐ দেশগুলোতে স্বাধীন ইচ্ছা ও মত প্রকাশে কেউ বাধা দেয় না। রাষ্ট্রীয় সুরক্ষায় যে কেউ তার দর্শন, বিশ্বাস ও মত প্রকাশ, প্রচার করতে পারে। ধর্ম বা বিশ্বাসের জন্য রাষ্ট্র কোনো নাগরিকের অধিকার সংকুচিত কিংবা বাতিল করে না। সকল নাগরিকের সমান অধিকার। তবে ধর্মকেন্দ্রিক উগ্রবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদ দমনে তাদের কোন প্রকার শৈথিল্যও পরিলক্ষিত হয় না।

ধর্মের দোহাই পেড়ে যারা অন্ধভাবে মৌলবাদ সমর্থন করে যা পরে জঙ্গীরূপ ধারণ করে, তাদের প্রতি বিনীত প্রশ্ন- বিজ্ঞানের বিকাশমান ধারার পরিবর্তে মূলে প্রত্যাবর্তনের মৌলবাদী ধারায় ফিরে যাওয়া কি মননশীল চেতনাসম্পন্ন কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব? গর্ভধারিনী জন্মদায়িনী মাকে পাষণ্ড ছাড়া সবাই ভালবাসে। এটাই প্রাকৃতিক ও স্বাভাবিক। কিন্তু মানুষ কি শত দু:খেও পুনর্বার মাতৃগর্ভের নিশ্চিন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে ফেরার প্রত্যাশা করতে পারে?

লেখকের সব লেখা

মোজাম্মেল হক: চিন্ত্যক, কলামিস্ট

ক্যাটাগরি: মিনি কলাম

ট্যাগ: মোজাম্মেল হক

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply