ইসলামি নামাজ, ইসলামি রোজা, ইসলামি হজ্ব, ইসলামি জেহাদ বলে যেমন কিছু নেই, তেমনি ইসলামি এই-সেই বলেও কোনো কিছুর অস্তিত্ব নেই। বরং মাবকল্যাণে পরীক্ষিত, প্রমাণিত ও চ্যালেঞ্জিং রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, শিক্ষাব্যবস্থাগুলোই ইসলামি। ইসলাম বলতেই মানব জীবনের সব বিষয়কে বোঝায়। সুতরাং সেসব বিষয়ের পূর্বে ‘ইসলামি’ শব্দ প্রয়োগ করে সঙ্কীর্ণ শ্রেণিকরণ করার কোনোই প্রয়োজন নেই।
জাকির মাহদিন : ইসলামি রাজনীতি, ইসলামি অর্থনীতি, ইসলামি সমাজ- এভাবে শ্রেণিগত সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিকোণ থেকে ইসলামকে না দেখে বরং সামগ্রিক ও সর্বব্যাপী দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতা আপনি কীভাবে নিজের মধ্যে বিকশিত করলেন? সমসাময়িক আলেমদের মধ্যে তো এমনটা দেখা যায় না।
ফরীদ উদ্দীন মাসউদ : আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিকাশ, অর্থনীতি ও সমাজবিজ্ঞানে কমিউনিজমের বিস্তার ইত্যাদির ফলে আলেমগণের চিন্তা-চেতনায় একটা পরাজিত মানসিকতার ভাব লক্ষ করা যায়। ফলে সমাজতান্ত্রিক ও পুঁজিবাদী অর্থনীতি-রাজনীতি ইত্যাদিকে টেক্কা দিতে বা সেগুলোর মোকাবেলায় নিজেদের বিষয়গুলোর স্বাতন্ত্র্য ফুটিয়ে তুলতে আলেমগণ প্রায় প্রতিটি বিষয়ের আগেই এভাবে ইসলামি শব্দটি জুড়ে দেন। এটা উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ পরবর্তী এবং সাম্প্রতিক কালচার। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ইসলামি নামাজ, ইসলামি রোজা, ইসলামি হজ্ব, ইসলামি জেহাদ বলে যেমন কিছু নেই, তেমনি ইসলামি এই-সেই বলেও কোনো কিছুর অস্তিত্ব নেই। বরং মাবকল্যাণে পরীক্ষিত, প্রমাণিত ও চ্যালেঞ্জিং রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, শিক্ষাব্যবস্থাগুলোই ইসলামি। ইসলাম বলতেই মানব জীবনের সব বিষয়কে বোঝায়। সুতরাং সেসব বিষয়ের পূর্বে ‘ইসলামি’ শব্দ প্রয়োগ করে সঙ্কীর্ণ শ্রেণিকরণ করার কোনোই প্রয়োজন নেই। ইসলাম একটি সামগ্রিক জীবনবোধ ও সামগ্রিক জীবনব্যবস্থার নাম। মানুষের জন্য কল্যাণকর কোনো কিছু এর বাইরে নেই, থাকতে পারে না। আমাদের পরাজিত মানসিকতা, ইসলাম-বিচ্ছিন্নতা, সমাজবিচ্ছিন্নতা আমাদেরকে এমন সঙ্কীর্ণ গণ্ডিতে আটকে ফেলেছে যে আমরা অর্থনীতিকে, সমাজনীতিকে ইসলাম-বিচ্ছিন্ন বিষয় মনে করে এসবের ‘ইসলামিকরণের’ জন্য এখন প্রায় প্রতিটি বিষয়ের আগে আলাদা করে ইসলাম শব্দটি ব্যবহার করি।
জাকির মাহদিন : আমাদের চিন্তা-চেতনা, দর্শন, কাজ ইত্যাদিতে যে গভীরতা, তাত্ত্বিকতা, শক্তি ও মান দরকার তা নেই কেন? এমনকি আপনার বক্তব্য-বিবৃতিগুলোও সমসাময়িক চিন্তাশীল, বুদ্ধিজীবী, সমাজবিজ্ঞানীদের চিন্তা ও বিশ্লেষণের মানের সঙ্গে যায় না। যে কারণে ইসলামি শব্দ লাগিয়ে আলাদা করে নিজেদের চিন্তা-কর্মগুলোর পরিচয় দিতে হয়। যদি আলেমদের চিন্তা-কর্মগুলো সমসাময়িক পরিস্থিতি মোকাবেলায় যথেষ্ট শক্তিশালী ও মানসম্পন্ন হতো তাহলে নিশ্চয় এভাবে পদে পদে ‘ইসলামিকরণের’ প্রয়োজন ছিলো না।
ফরীদ উদ্দীন মাসউদ : আমি আপনার সঙ্গে একমত। তবে এখানে দুটো বিষয় আছে, ভাষার মান এবং ভাবনার মান। ভাষার মান ভালো না হলেও আলেমদের ভাবনার মান কিন্তু তথাকথিত বুদ্ধিজীবী চিন্তাশীলদের চেয়ে যথেষ্ট উন্নত। অন্যদিকে, বাংলা ভাষাই হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ভাষা যার লালন-পালন হয়েছে আলেমদের হাতে। এ ভাষার উদ্ভব ও বিকাশের ক্ষেত্রে আলেমদের অবদানই সবচেয়ে বেশি। কবি আলাওল, সুলতান প্রমুখ মূলত আরবি শিক্ষিত ছিলেন। আলেমদের ভাষার মান কেন এমন হল জানি না। এর একটা কারণ এই হতে পারে, ব্রিটিশ আমলে স্বাধীনতার জন্য উলামায়েকেরাম এভাবে উঠেপড়ে লেগেছিলেন যে তারা ব্যক্তি ও পারিবারিক স্বার্থ ভুলে নিজেদের পুরো মাত্রায় উৎসর্গ করেছিলেন। তারা মনে করেছিলেন আগে স্বাধীনতা আসুক, তারপর ভাষা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে নজর দেয়া যাবে। এ সুযোগে হিন্দুরা সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা ও ভাষার উন্নতিতে নিজেদের নিয়োগ করে। তারা স্বাধীনতার জন্য খুব একটা চিন্তিত ছিলো না। কারণ তাদের কাছে মুসলিম শাসন ও ব্রিটিশ শাসন একই, কেবল মালিক বদল। তাই আলেমগণ যেখানে ব্রিটিশ খেদানো ও স্বাধীনতার জন্য বন-বাদারে ঘুরে বেড়িয়েছেন, ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলেছেন, সেখানে অন্য অনেকে নিশ্চিন্তে ব্রিটিশ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে আধুনিক শিক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সাহিত্যচর্চা করেছেন।
জাকির মাহদিন : ভাবনা প্রকাশের ভাষাগত (বাংলা) যোগ্যতা সমসাময়িক আলেমদের অনেকেরই আছে। যেমন আবু তাহের মেসবাহ, যাইনুল আবেদীন, উবায়দুর রহমান খান নদভী, আপনি…। তারপরও কেন আপনারা সাহিত্য, সমাজ, অর্থনীতি, দর্শন ও তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে পিছিয়ে?
ফরীদ উদ্দীন মাসউদ : গুটিকতক ব্যক্তির যোগ্যতা দিয়ে একটা সামগ্রিক সংস্কৃতি বা স্রোত মোকাবেলা করা কিংবা একটা ভাষার ‘মেজাজ’ বদলানো যায় না। সামগ্রিকভাবে আলেমদের বাংলা ভাষায় দখল খুবই দুর্বল। আপনি যাদের নাম বললেন তাদের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, তাদের লেখনি শুদ্ধ হওয়ার আরো অনেক বাকি। ভাষার শুদ্ধ ব্যবহার, বাক্য গঠন ও শব্দের সঠিক প্রয়োগ অনেক চর্চার ব্যাপার। সেই চর্চার সময় সুযোগ এখনো আমাদের হয়ে ওঠেনি। বর্তমানে যেগুলোকে ইসলামি সাহিত্য বলা হচ্ছে (আপনাকে বোঝানোর জন্য আমি এখানে ‘ইসলামি’ শব্দটি প্রয়োগ করছি। নতুবা এটি এভাবে আমি ব্যবহার করি না) তা অধিকাংশই অনুবাদনির্ভর, তাও কাচা হাতের অনুবাদ। তবে আমি আশাবাদী, এই সীমাবদ্ধতা দ্রুতই কেটে যাবে।
জাকির মাহদিন : ইসলামি ব্যাংকিং আপনি কীভাবে দেখেন। এটা কি সুদমুক্ত? কিছুদিন আগে এক অনুষ্ঠানে ইসলামি ব্যাংকের শরীয়াহ বোর্ডের সেক্রেটারি বা পদস্থ একজন স্বীকার করলেন ইসলামি ব্যাংক সুদমুক্ত না। তবে তিনি এও বললেন যে অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি বোঝেন, ব্যাখ্যা করতে পারেন, সুদমুক্ত অর্থনীতির সঠিক পথ-পদ্ধতি দেখাতে পারেন এমন আলেমের খোঁজে পুরো বাংলাদেশ চষে বেড়িয়েও তেমন একজন আলেম পাওয়া যায়নি।
ফরীদ উদ্দীন মাসউদ : ইসলামি ব্যাংক সুদমুক্ত না। বর্তমান পরিবেশে বিচ্ছিন্নভাবে সুদমুক্ত হওয়ার কোনো পথও নেই। কারণ ইসলাম একটি সামগ্রিক জীবনবিধান ও জীবনব্যস্থার নাম। সামগ্রিক প্রতিষ্ঠা ছাড়া বিচ্ছিন্নভাবে এর কোনো বিধান পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যায় না। ক্ষমতা দিয়েও না। সেই পদস্থ কর্মকর্তা আলেমের ব্যাপারে যা বললেন তা সঠিক নয়। তিনি হয়তো বিশেষ কোনো রাজনৈতিক দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে তালাশ করেছেন, তাই পাননি। আমার জানামতে বাংলাদেশে এমন কিছু আলেম আছেন যারা অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি খুব ভালো বোঝেন ও ব্যাখ্যা করতে পারেন। এমনকি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে আমিও এর সহজ সমাধান দিতে পারি। কিন্তু ইসলামি ব্যাংকের লোকজন যে ‘দলীয় দর্শন’ লালন করে তারা হয়তো আমাদের সহগযোগিতা নেবে না।
দ্বিতীয়ত, ‘আধুনিক ব্যাংক ব্যবস্থার’ মূল কাঠামোটাই সুদভিত্তিক এবং ইহুদিদের তৈরি ও পরিকল্পিত। এর ভিত্তিই সুদ এবং সুদ। এর বীজটাই বিষযুক্ত। এটা একটা বিষবৃক্ষ। এতে যতই মধু ঢালেন লাভ নেই। এই ব্যাংকিং সিস্টেমে ইসলাম শব্দটা লাগানো মানে ইসলামের একটা চরম অবমাননা। হাটহাজারী মাদরাসার মুহতামিম এবং প্রখ্যাত মুফতি ও আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব আব্দুস সালামসহ অত্যন্ত সুনামের অধিকারী এ উপমহাদেশের একশত জন আলেম একবাক্যে বলেছেন যে কথিত ইসলামি ব্যাংকগুলো আসলে ইসলামি নয়। তারা বেশ আদবের সঙ্গে মুফতি তকী উসমানী সাহেবেরও সমালোচনা করেছেন। তকী সাহেবের উপর আমার আফসোস হয়, তিনি কীভাবে এই অনৈসলামিক কাজে সহযোগী হলেন? তিনি আমার প্রায় সমসাময়িক এবং আমাদের মধ্যে ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক রয়েছে। তাকে আমি যথেষ্ট শ্রদ্ধাও করি।
কিন্তু আমি আশ্চর্যবোধ করছি, তার মতো একজন ধীমান ব্যক্তি, আমি যতটুকু শুনেছি তিনি হংকং ব্যাংকের (এইচ.এস.বি.সি) শরীয়াহ বোর্ডের চেয়ারম্যান হয়েছেন। ব্যাংক মানেই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিস্তৃত পুঁজিগুলো চুষে নিয়ে এক জায়গায় জমা করা। তারপর লাভের যৎসামান্য একটা অংক সমাজকে দিয়ে বাকি টাকাগুলো নিজেদের ইচ্ছেমতো ব্যবহার ও বিনিয়োগ করা। ইহুদিদের পলিসি কত মারাত্মক। ওরা যখন দেখল মুসলমানদের টাকার বিশাল অংশ তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে, তখন তাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থা ঠিক রেখে পাকিস্তানকে ইসলামি রাষ্ট্র দেখিয়ে (এবং কিছুটা মিশর-সিরিয়াও) সেখানকার মৌলভীদের সুযোগ সুবিধা দিয়ে ইহুদিদের সহযোগী বানিয়ে নিয়েছে। এর মাধ্যমে অন্যান্য মুসলিমপ্রধান রাষ্ট্রকে তারা আকৃষ্ট করছে। এখানে একটু ইসলাম, ওখানে একটু ইসলাম, এভাবে ইসলামে তারা পট্টি বা তালি লাগাচ্ছে। উচিত ছিল, ইসলাম যে অর্থনীতি পেশ করেছে সেটা বাস্তবায়ন করা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা জিজ্ঞেস করে, হে নবি, আল্লাহর পথে আমরা কী খরচ করব? বলুন, প্রয়োজনের অতিরিক্ত সব কিছুই।’ ইসলামের অর্থনীতি আ’ফ-ভিত্তিক, যাকাতভিত্তিক নয়। প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ-সম্পদ কোনো ব্যক্তির নয়, সমাজের। এমনকি বিশেষ সময় বা (সমাজের) প্রয়োজনে ব্যক্তিমালিকানাও ইসলাম রহিত (স্থগিত) করতে পারে। এর বহু প্রমাণ হাদিসে আছে।
জাকির মাহদিন : ইসলাম যদি ব্যক্তি মালিকানাও রহিত করে তাহলে সমাজতন্ত্রের সঙ্গে এর পার্থক্য কোথায়?
ফরীদ উদ্দীন মাসউদ : অনেক পার্থক্য। ইসলামে সমাজের বিশেষ প্রয়োজনে বা বিশেষ মুহূর্তে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এটা করার অনুমতি থাকলেও মূলত ‘সীমিত ব্যক্তিমালিকানা’ স্বীকৃত। কিন্তু সমাজতন্ত্রে ব্যক্তিমালিকানা মোটেই স্বীকৃত নয়। আবার গণতন্ত্রে সুদভিত্তিক ব্যাংক ব্যবস্থা, ব্যক্তির বৃহৎ পুঁজি ও অবাধ মালিকানা স্বীকৃত হওয়ায় এতে বৈষম্য এড়ানো অসম্ভব। এ দুটি পরস্পরবিরোধী অবস্থানের বিপরীতে একমাত্র ইসলামই সমাজ ও জাতির ভারসাম্যপূর্ণ এবং মধ্যপন্থা অবলম্বনকারী জীবনব্যবস্থার সন্ধান দেয়। সমাজতন্ত্র মানুষের আবেগ ও ভালোবাসার যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারেনি। এটা গাণিতিক ও বস্তুতান্ত্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষকে বিচার করে। তাই চরম মার খেয়েছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, মানুষের জীবন রুক্ষ নয়, গাণিতিক নয়। ইসলাম মানুষের আবেগ, ভালোবাসা ও যুক্তি-বুদ্ধির সমন্বয় ঘটায়।
জাকির মাহদিন : সুদমুক্ত অর্থনীতি বা সমস্যামুক্ত অর্থনীতির যে মূল ভিত্তি তা কি জামায়াত বা সরকারের সহযোগিতায় আপনারা আলেমগণ বাস্তবায়ন করতে পারবেন?
ফরীদ উদ্দীন মাসউদ : না। কারণ আমি আগেই বলেছি, বিচ্ছিন্নভাবে শুধু অর্থনীতিকে সমস্যামুক্ত করা সম্ভব নয়। সমস্যামুক্ত সামগ্রিক ব্যবস্থাগুলো নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে।
জাকির মাহদিন : যাদের সঙ্গে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি মিলে না সেসব দলমতের বিরুদ্ধে আপনার যে অবস্থান ও বক্তব্য বিবৃতি তা তো গতানুগতিক, আক্রমণাত্মক। অন্যান্য কথিত লিডারদের মতোই। বিশেষ কোনো পার্থক্য বা সৌহার্দ্যমূলক মনোভাব নেই।
ফরীদ উদ্দীন মাসউদ : আমি আপনার প্রশ্ন বুঝতে পারছি না। তবুও বলি, আমি শুধু বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করি না। এটাকে জায়েজও মনে করি না। আমার বক্তব্যে কোনো আক্রমণ নেই বরং সৌহার্দ্যপূর্ণ মনোভাবই প্রকাশ পায়। তবে আমি আমার কোরআন হাদিসের অধ্যয়ন অনুযায়ী অনেকের চিন্তার বৈকল্য জোরালোভাবে তুলে ধরি এবং সমাধানও বলি। এতে অনেকে নাখোশ হয়। আমি আমার নবী (সা.) এর এ কথাকে বিশ্বাস করি, তিনি প্রথমেই বলতেন, ‘আমি তোমাদের মঙ্গলাকাক্সক্ষী, কল্যাণকামী।’ আমি কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করি না। অনেকে মনে করতে পারেন এটা অহঙ্কার করে বলছি, আসলে তা নয়। আমি সবইকে আমার সাথী হিসেবে দেখি। দুনিয়াটা প্রতিদ্বন্দ্বিতার জায়গা না।
জাকির মাহদিন : জোট (বিএনপি-জামায়াত) সরকারের আমলে আপনাকে কারাগারে নেয়ার পর থেকেই আপনি জামায়াতের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে।
ফরীদ উদ্দীন মাসউদ : কখনো না। আমি কোনো প্রতিশোধপরায়ন ব্যক্তি নই। কারাগারে নেয়ার কারণে যদি আমি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হতাম তাহলে এর আগে তারা আমাকে কারাগারে নেয় কেন? আমি অনেক আগে থেকেই তাদের চিন্তার বৈকল্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার। মূলত সে কারণেই ক্ষিপ্ত হয়ে তারা আমাকে টার্গেট করে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের চাকরিটা আমার আরো আট বছর ছিল। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই চাকরিটা মামুলি নয়। কিন্তু যখন মুজাহিদী ও নিজামীর গাড়িতে পতাকা উঠল, আমি চাকরিতে ইস্তফা দিয়েছি। তখন জনকণ্ঠ ও অন্যান্য অনেক দৈনিকে এটি লিড নিউজ হয়।
জাকির মাহদিন : আজকের উলামায়ে কেরামের যে মতবিরোধ, বিচ্ছিন্নতা, অনৈক্য তা কি স্বাভাবিক; না স্বার্থপরতা ও চেষ্টা সাধনার ঘাটতির কারণে?
ফরীদ উদ্দীন মাসউদ : এর একরৈখিক ও সরল ব্যাখ্যা সম্ভব নয়। এটা বহুমাত্রিক। তবে বর্তমানে আমাদের মধ্যে যে পারস্পরিক অশ্রদ্ধা ও কাদা ছোড়াছুড়ি চলছে তা বাঞ্ছিত নয়। আলেমদের এ ধরনের মতবিরোধ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না। এর কারণ আমরা একজন অন্যজনকে সঠিকভাবে জানি না। জানতে চাইও না। আমরা কারও সম্পর্কে অমুকের দালাল তমুকের সহচর জাতীয় কিছু শুনেই বিশ্বাস করে ফেলি। এই ভুল ধারণা প্রচারও করি। এসব থেকে আমাদের বের হওয়া অতি জরুরি।
বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক পরিচালক, বাংলা ভাষার অন্যতম পণ্ডিত, বিশিষ্ট লেখক সাহিত্যিক এবং বিশ্বব্যাপী আলোড়িত আলোচিত জঙ্গিবাদবিরোধী লক্ষাধিক আলেমের ফতোয়া সংগ্রাহক ও সংগঠক মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ। ‘ইকরা বাংলাদেশের’ প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক তিনি। তার কর্মগত পরিচয় বহুবিধ। চিন্তার স্তর গভীর, পরিধি ব্যাপক, পদক্ষেপ কৌশলী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দেশ দর্শন সম্পাদক জাকির মাহদিন
ক্যাটাগরি: ইসলাম, প্রধান কলাম, সাক্ষাৎকার
[sharethis-inline-buttons]