শনিবার দুপুর ১:০০, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং

বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িকতার দর্শন ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা

মোজাম্মেল হক

কোটি বাঙালি বর্তমানে প্রবাসী। চাকরি, ব্যবসা, লেখাপড়া, গবেষণায় পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছি আমরা। মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর অসামান্য নেতৃত্বে স্বাধীনতা এসেছিল বলেই তা সম্ভব হয়েছে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দৈন্যের চাপে পড়াশুনা বাদ দিয়ে নির্ধারিত বয়সে পৌঁছার পূর্বেই কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করি। পঁচাত্তরের মর্মন্তুদ ঘটনা, জাতির জনকের হত্যা আমার মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে, ঘৃণা জন্মে মানবসমাজ ও সভ্যতার প্রতি। অথচ বেদনার মাস আগস্ট, পঁচাত্তরেই বাংলাদেশ থেকে প্রথম তিন শতাধিক লোক বিনা খরচে কূয়েত প্রবাসী হয়, বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ ঘটে, আমার পিতা সেই সৌভাগ্যবানদেরই একজন। যা ছিল বঙ্গবন্ধুর ঐকান্তিক প্রচেষ্টারই ফল। এতে আমার প্রথম বাস্তব উপলব্ধি ঘটে- মানুষ তার প্রজন্মের সুখ-শান্তি ও নিরাপদ জীবনের প্রত্যাশায় নিরন্তর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে। বঙ্গবন্ধুও তাই করেছিলেন। কোটি বাঙালি বর্তমানে প্রবাসী। চাকরি, ব্যবসা, লেখাপড়া, গবেষণায় পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছি আমরা। মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর অসামান্য নেতৃত্বে স্বাধীনতা এসেছিল বলেই তা সম্ভব হয়েছে।

আমাদের বড় পরিবারটি অল্প কিছুদিনের যধ্যেই বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সামলে ওঠে, মেঘ কেটে যায়। আকস্মিক চাপ মুক্তির এই পর্বে কৌতুহলবশত: বঙ্গবন্ধুকে জানতে শুরু করি। তাঁকে ঘিরে যতই আবর্তিত হতে থাকি, ততই বুঝতে পারি- বাঙালির জীবনে তাঁর চিন্তা, দর্শন, আবেগ, অনুভূতি, ভালবাসার প্রভাব কতখানি। নিজেকে তখন ক্ষুদ্র তুচ্ছ ও তৃণসম মনে হতে থাকে, স্বজাতি ও দেশের প্রতি তাঁর অতল অমল ভালবাসায় মুগ্ধ হয়ে যাই। নিজেকে সৌভাগ্যবান ভাবি, তাঁর কালে জন্মেছি বলে। তাঁর অঙ্গীকার, দেশবোধ ও বিশ্ব রাজনীতিতে যোগ্যতর ভূমিকা ও অবস্থান আমাকে বিস্মিত করে, নিজেকে হারিয়ে ফেলি, মানবসমাজের দু:খ-কষ্টে নিজেকে বিলীন করে দেয়ার প্রেরণা লাভ করি, সত্যিকারের একজন মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার প্রত্যয় জন্মে মনে। প্রশ্নবানে জর্জরিত করি নিজেকে- মানুষ কেন মানুষের বৈরী হয়? মানুষ কেন মানুষের ওপর মানসিক ও শারিরীক নির্যাতন চালায়? হিংসা-বিদ্বেষ ছড়ায়? সাম্প্রদায়িক হয়? দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়? একে অপরকে ঘৃণা করে? ফিরে যাই বিশাল হৃদয়ের বঙ্গবন্ধুর কাছে, যেখানে আছে সকল ধর্ম সম্প্রদায়ের সকল মানুষের প্রতি অগাধ অফুরন্ত ভালবাসা। পাওয়া যায় সাম্য-সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত, শোষণ বঞ্চনাহীন নিরাপদ নির্বিঘ্ন শান্তিপূর্ণ জীবনের আশ্বাস।

বঙ্গবন্ধু বাঁচলে হয়তো বিশ বছর পূর্বেই আমরা এশিয়ার উন্নত দেশগুলোর সারিতে নিজের দেশকে পৌঁছাতে সক্ষম হতাম। যদি পরাজিত শক্তি, সাম্প্রদায়িক, সামরিক শক্তি ও বিদেশীদের চক্রান্তে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের মর্মন্তুদ্ ঘটনা না ঘটতো।

বঙ্গবন্ধু নেই। তাঁর প্রতিষ্ঠিত দল এবং তাঁরই কন্যা, মানবতার মা চতুর্থবারের মত রাষ্ট্র ক্ষমতায় সমাসীন হয়েছেন। বিগত কালের শাসন সুশাসনের ব্যাখ্যা প্রদানের, চুলচেরা বিশ্লেষণ বা সমালোচনা তারাই করবেন যাদের সেই যোগ্যতা আছে। তবে এটুকু বলতে দ্বিধা করি না যে, বঙ্গবন্ধু কন্যার সঠিক নেতৃত্বে দেশে স্থিতিশীলতা এসেছে। আমরা মধ্যম আয়ের দেশের সারিতে পৌঁছতে যাচ্ছি। বিগত দেড় দশকে তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্ব দক্ষিণ এশিয়াতো বটেই, বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতিকে বিশ্বে একটি মর্যাদার আসন দান করেছে। এটুকু সৌজন্য ও স্বীকৃতি তাঁর প্রাপ্য।

বঙ্গবন্ধু বাঁচলে হয়তো বিশ বছর পূর্বেই আমরা এশিয়ার উন্নত দেশগুলোর সারিতে নিজের দেশকে পৌঁছাতে সক্ষম হতাম। যদি পরাজিত শক্তি, সাম্প্রদায়িক, সামরিক শক্তি ও বিদেশীদের চক্রান্তে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের মর্মন্তুদ্ ঘটনা না ঘটতো। আমরা তাই তাঁর কন্যার নিকট প্রত্যাশা করতে চাই- তিনি সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও অসাম্প্রদায়িক একটি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা প্রতিক্রিয়াশীল পরাজিত শক্তি তাঁকে হত্যার দ্বারা ব্যর্থ করে দিয়েছে। আমরা তাঁর সেই রাষ্ট্রের পুন:প্রতিষ্ঠা চাই। সাম্প্রদায়িকতা, কূপমণ্ডুকতা ও জঙ্গীবাদমুক্ত বঙ্গবন্ধুর ভালবাসার বাংলাদেশ চাই। যাঁর ভালবাসার কেন্দ্রে ছিল মানুষ।

ধর্মগুলো মানুষকে ভালবাসার বাণী শোনালেও একশ্রেণীর বজ্জাত মানুষ ধর্ম ব্যবহারপূর্বক রাজনীতি ও ব্যবসা করে, মানুষকে বিভ্রান্ত করে, সহজ সরল ধর্মপ্রাণ মানুষগুলোকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে। এরা বাক ও ব্যক্তির স্বাধীনতা হরণ করে। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে নিজেদের টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করে।

ক্যাটাগরি: মিনি কলাম

ট্যাগ:

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply