শুক্রবার রাত ৯:৫৯, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং

‘সংখ্যালঘু’ শব্দটা আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়

তনয় ইমরোজ

‘সংখ্যালঘু’ শব্দটা আদৌ আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। তারা সাংবিধানিক ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পাবার অধিকার রাখে। এটা জাতীয়স্বার্থে অতি গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নেয়া উচিৎ। সঠিক চিন্তা-চেতনা ও পরিকল্পনার অভাবে বৈশ্বিক প্রকৃত প্রেক্ষিত উপস্থাপিত হয়নি।

ঢাকার আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দর, বাংলাদেশের প্রবেশ পথ হিসেবে যা সুপরিচিত ও সুসজ্জিত। অথচ এটি কি না আমাদেরকে রাজনৈতিক, ইসলামি, সাম্প্রদায়িক সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও নৈতিক দেউলিয়াত্বকে স্মরণ করিয়ে দেয় জীবনের পরতে পরতে। প্রকৃতপক্ষে আমাদের ‘জাতীয় পরিচিতি’ গঠনে হযরত শাহ জালাল, শাহ পরান, শাহ মখদুম (র.) যতটা গুরুত্বপূর্ণ, অতীশ দীপঙ্কর, শ্রী চৈতন্যদেবও আমি মনে করি ততটাই গুরুত্বের দাবি রাখে।

‘অধিকারের নীতি’ প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ অনেক দূরে অবস্থান করছে। সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রতিপালনে সংখ্যলঘুর অধিকার বারবার আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে স্বৈরতন্ত্রের দ্বারা। বড় বড় দুর্নীতি, আমাদের সুনাম, যা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও সংরক্ষণে অপরিহার্য; বাক-স্বাধীনতা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির চেয়েও এই সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রতিপালন রাষ্ট্রযন্ত্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে। সোজা কথায়, সংখ্যালঘুর উপরে সংখ্যাগরিষ্ঠের অধিকারই বর্তমানে চর্চিত হচ্ছে। এটা একধরনের স্বৈরতন্ত্র, যা বর্তমান গণতন্ত্র থেকে পাওয়া যায়। এবং সব পক্ষকে এই ধারণাই দেয়া হচ্ছে যে আধুনিক গণতন্ত্র এমনই।

দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে বলতে গেলে, কোনো দেশের প্রকৃত উন্নয়ন সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ওপর নির্ভর করে না। নির্ভর করে ন্যায়-নীতির ওপর এবং প্রত্যেক নাগরিকের মানবাধিকার সংরক্ষণের নিশ্চয়তার ওপর। আওয়ামী লীগের দিকে তাকান, যে নাকি সবসময় ধর্ম নিরপেক্ষতার ধ্বজাধারী। অথচ দেখা যাবে, সবসময় এ দলটি সংখ্যাগরিষ্ঠের ওপরই নির্ভর করে। আওয়ামী লীগ সবসময় গণতন্ত্রের নীতি-আদর্শের প্রতিপালনের কথা বলে থাকে। তাই দলটি নিজেেেদর ধর্মনিরপেক্ষতার একক দাবিদার বলে মনে করে। কিন্তু বর্তমান বাস্তবচিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাই এ দাবিকে রাজনৈতিক ঘাটতি এবং নৈতিক অবক্ষয় বলেই মনে হয়।

২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলাম এক ঐতিহাসিক ধ্বংসযজ্ঞের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে মৌলবাদী ইসলামের দিকে ঝোঁকার অবস্থা সৃষ্টি করেছিল। তখন থেকেই দেখা যাচ্ছে সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা, ব্যক্তিস্বাধীনতা জাতীয় বিষয়গুলোকে গণতান্ত্রিক ভাষা থেকে সমঝোতায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। স্বাধীনভাবে কথা বলা এখন একটি অপরাধ। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা দমনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সরকার ব্যর্থ এবং অনেক ক্ষেত্রেই নাসিরনগর দাঙ্গার মতো হোতারা পার পেয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের সকল আদীবাসী ও ধর্মীয় সম্প্রদায় সমান গুরুত্বপূর্ণ। জনসংখ্যা যাই হোক, সংবিধানে সবার অধিকার সমভাবে স্বীকৃত। অবশ্য সভ্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশের সংবিধানে সংখ্যালঘুর অধিকার ও মানবাধিকারের মতো সর্বজনস্বীকৃত বিষয়গুলো এখনো যথাযথ স্বীকৃতি পায়নি।

আমরা উল্লেখ করতে চাই, সংবিধানের ২ (এ) ধারা, যাতে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ন্যায়বিচার ও সমতার গ্যারান্টি দিয়ে যে সংবিধান রচিত, সেখানে অমন বৈষম্যমূলক ধারার সংযোজন হতাশাব্যঞ্জক। এটা অনস্বীকার্য- দলিল সংখ্যালঘুর ইচ্ছাকে বৃদ্ধাগুলি প্রদর্শন করে। যা মূলনীতি পরিপন্থী। যদিও এতে একটা ভোটের হিসাব-নিকাশ বিদ্যমান।

৪৫টি আদিবাসী সম্প্রদায়ের উপস্থিতি এই দেশে বাঙালি সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাঝে বেশ গুরুত্বপূর্ণ, যা ব্যাপক পর্যালোচনার দাবী রাখে। ‘সংখ্যালঘু’ শব্দটা আদৌ আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। তারা সাংবিধানিক ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পাবার অধিকার রাখে। এটা জাতীয়স্বার্থে অতি গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নেয়া উচিৎ। সঠিক চিন্তা-চেতনা ও পরিকল্পনার অভাবে বৈশ্বিক প্রকৃত প্রেক্ষিত উপস্থাপিত হয়নি। দুঃখজনক হলেও সত্য, এর পরিবর্তে আমাদের রাজনীতিতে এটা সংখ্যাধিক্যের কৃষ্টি ও সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে।

অতএব, বাংলাদেশকে অবিলম্বে সংখ্যাধিক্যের অসুস্থ প্রতিযোগিতার যে হুমকি তা মোকাবেলা করে সত্যিকারের তথ্য ও তত্ত্বলব্ধ পদক্ষেপ গ্রহণে উদ্যোগী হতে হবে। তবেই বহুমাত্রিক সমাজব্যবস্থা বিনির্মাণে বাংলাদেশ সফল হবে।

তনয় ইমরোজ : অনলাইন এক্টিভিস্ট ও কলামিস্ট
সিডনি, অস্ট্রেলিয়া

 

ক্যাটাগরি: প্রধান কলাম

ট্যাগ:

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply