প্রতিবাদ-মিছিল-মিটিং করে ধর্ষণ বন্ধ করা প্রায় অসম্ভব। বন্ধ করতে হলে আগে ন্যক্কারজনক সম্মতিধর্ষণ বন্ধ করতে হবে এবং আমাদের সমাজে-রাষ্ট্রে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ধর্ষণের বিভিন্ন উপকরণ অর্থাৎ যেসব বিষয় মানুষের কুপ্রবিত্তিকে জাগিয়ে তোলে তা বন্ধ করতে হবে সর্বাগ্রে।
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে বর্বর নারী নির্যাতনসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া ধর্ষণের প্রতিবাদ ও ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে উত্তাল ঢাকাসহ পুরো দেশ। স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, রাজনৈতিক দল, নেতা-নেত্রী থেকে শুরু করে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ মাঠে নেমেছেন। তারা ধর্ষকদেরকে উদ্দেশ্য করে বিভিন্ন লেখা সংবলিত ব্যানার-ফেস্টুন হাতে নিয়ে প্রতিবাদ-মিছিল করছেন। কেউ কেউ ধর্ষকদের ‘ক্রসফায়ার’, ‘ফাঁসি’ চাচ্ছেন।
বর্তমান প্রতিবাদমুখর অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, সারাদেশ ধর্ষণের বিরুদ্ধে এবং ধর্ষকের শাস্তির পক্ষে একাট্টা। কারণ সবাই এটার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। কঠোর সাজার দাবি করছেন। আপাতদৃষ্টিতে সবাই ‘ভালো মানুষ’। প্রশ্ন জাগে, সব ভালো মানুষের ভিড়ে প্রতিদিন দেশের আনাচেকানাচে যে এতো এতো ধর্ষণ হচ্ছে তা কারা করছে?
আসলে যারা প্রতিবাদ করছে, তাদের বড় একটা অংশই ধর্ষক বা এর সহযোগী। তবে সেটা জোরপূর্বক ধর্ষণ নয়, ‘উভয়ের সম্মতির’ ভিত্তিতে। আমাদের রাষ্ট্রে, সমাজে সেটা অবৈধও নয়, বৈধ। শুধু বৈধ নয়, এটা নিয়মিত চর্চা করার জন্য কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক, চলচ্চিত্র নির্মাতারা নাটক-সিনেমায়, বিকারগ্রস্ত বুদ্ধিজীবীরা পত্র-পত্রিকায় লেখার মাধ্যমে উৎসাহ দিয়ে থাকেন। যারা এটাকে অবৈধ-বেহায়াপনা বলেন, বন্ধের দাবি জানান, তাদেরকে নানান কায়দা করে কোণঠাসা করে রাখা হয়। তাদের মতে, সম্মতির ভিত্তিতে করা এ ধর্ষণ ধর্ষক এবং ধর্ষীতার ‘অধিকার’। সে অধিকার তারা দীর্ঘকাল ধরে খুব আনন্দের সাথে আদায় করে আসছে।
আসলে যারা প্রতিবাদ করছে, তাদের বড় একটা অংশই ধর্ষক বা এর সহযোগী। তবে সেটা জোরপূর্বক ধর্ষণ নয়, ‘উভয়ের সম্মতির’ ভিত্তিতে। আমাদের রাষ্ট্রে, সমাজে সেটা অবৈধও নয়, বৈধ। শুধু বৈধ নয়, এটা নিয়মিত চর্চা করার জন্য কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক, চলচ্চিত্র নির্মাতারা নাটক-সিনেমায়, বিকারগ্রস্ত বুদ্ধিজীবীরা পত্র-পত্রিকায় লেখার মাধ্যমে উৎসাহ দিয়ে থাকেন।
দীর্ঘসময় ধরে যদি একটা গোষ্ঠী কোনো অনৈতিক কাজ করে আসে, যদিও সেটা একটা বৃত্তে আবদ্ধ থাকে, তবুও কি এর কু-প্রভাব আশপাশে ছড়িয়ে পড়বে না? অবশ্যই ছড়াবে। এই যে রাস্তাঘাটে, বাসে-ট্রেনে, দোকানে, এলাকায়, পাড়া-মহল্লায় ধর্ষণের ছড়াছড়ি- এটা ভয়ঙ্কর সম্মতিধর্ষণের কু-প্রভাবের কারণে হচ্ছে বলেই মনে করি।
তবে ধর্ষণ মহামরি আকারে ছড়িয়ে পড়ার শুধু এটিই একমাত্র কারণ নয়। এরসাথে আরো অনেক বিষয় জড়িত। যেমন আনন্দ-বিনোদনের নামে নাটক-সিনেমায় অশ্লীলতা, ক্লিক দেওয়া মাত্রই পর্ণ ছবি স্ক্রিনে ভেসে উঠা, কিছু বিপথগামী মিডিয়ার উস্কানিতে নারী-পুরুষের উত্তেজিত পোশাক পড়া, অসংলগ্ন চলাফেরা, বাজে আচরণ, এসবের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে কেউ ধর্ষণ করে ফেললেও যথার্থ বিচার না হওয়া, সর্বপরি নানা মিথ ছড়িয়ে সত্য ধর্মকে সমাজ, রাষ্ট্র এবং জনজীবন থেকে দূরে সরিয়ে রাখা ইত্যাদি।
প্রতিবাদ-মিছিল-মিটিং করে ধর্ষণ বন্ধ করা প্রায় অসম্ভব। বন্ধ করতে হলে আগে ন্যক্কারজনক সম্মতিধর্ষণ বন্ধ করতে হবে এবং আমাদের সমাজে-রাষ্ট্রে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ধর্ষণের বিভিন্ন উপকরণ অর্থাৎ যেসব বিষয় মানুষের কুপ্রবিত্তিকে জাগিয়ে তোলে তা বন্ধ করতে হবে সর্বাগ্রে। উপকরণ বন্ধ এবং যে কোনো অন্যায়কারীর যথাযথ বিচার নিশ্চিত হলে সিংহভাগ ধর্ষণ কমে যাবে বলে আশা করা যায়।
লেখক: জুনায়েদ আহমেদ
ক্যাটাগরি: মিনি কলাম
[sharethis-inline-buttons]