রবিবার রাত ১২:৪৫, ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অনিয়ম-দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক

অভিযুক্ত দুজনের ছবি তোলা গিয়েছে, উপরে লালচিহ্নিত

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল; রোগীকে বিনামূল্যে দেয় ঔষুধে প্রথমে ভাগ বসায় স্লিপ প্রদানকারী ব্যক্তি, পরে এতে আরো দুর্নীতি করে সেখানকার ফার্মেসিগুলো। ফার্মেসির অনেকের মধ্যে দুজনের ছবি দেয়া হল। ভুক্তভোগীদের অনুরোধ, কর্তৃপক্ষ যেন সঠিক তদন্ত করে।

অনিয়ম আর দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। রোগীর সেবায় অতুলনীয় এবং বাংলাদেশের একমাত্র নির্ভরযোগ্য মেডিকেল কলেজটি এখন দুর্নীতির চরম শিখরে। পুরো বাংলাদেশের নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের প্রাণের নির্ভরযোগ্য চিকিৎসাকেন্দ্রটি এখন মানুষের আস্থা হারাতে বসেছে।

অনিয়ম-দুর্নীতির নানা অভিযোগ রয়েছে ঢাকা মেডিকেলের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। রোগীদের ব্যবস্থাপত্রেও আছে নানান হয়রানি ও দালালদের দৌরাত্ম্য। সরকার কর্তৃক বিনামূল্যের ঔষধসেবায় রয়েছে চরম অনিয়ম দুর্নীতি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগীর ব্যবস্থাপত্রে দেখা যায়, চিকিৎসক তাকে যেসব ঔষধ লিখে দিয়েছেন, এর মধ্যে যেগুলো হাসপাতাল কর্তৃক বিনামূল্যে দেয়া হবে সেগুলোর জন্য আলাদা একটা স্লিপ দেয়া হয়। সেই স্লিপ প্রদানকারী ব্যক্তি বসেন ডাক্তারের চেম্বার থেকে ব্যবস্থাপত্র হাতে নিয়ে রোগী বা রোগী-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বের হওয়ার পথেই, দরজার মুখে বা সামনে। সেখানে স্লিপ প্রদানকারী ব্যক্তি স্লিপে বিনামূল্যে প্রদানকৃত ঔষধ কমিয়ে উল্লেখ করে এবং মূল ব্যবস্থাপত্রের একটা ছবি তোলে রাখে (পরে সেই ছবি দেখিয়ে ফার্মেসি থেকে সেগুলোর মূল্য আদায় করে নেয়)।

অভিযুক্ত একটি ফার্মেসির এ দুজন, যারা প্রতিদিন প্রতারণা করছেন

এদিকে সেই স্লিপ ফার্মেসিতে জমা দেয়ার পর ফার্মেসিওয়ালারা আবার তাতে ভাগ বসায়। এরা প্রথমে ব্যবস্থাপত্রে ভুল দেখিয়ে দামি এন্টিবায়োটিক ঔষধগুলো রেখে দেয়। যখন রোগী বুঝতে পেরে জিজ্ঞেস করে, তখন তারা ঔষধের উৎপাদন পরিমাণের চেয়ে কম দেখিয়ে অর্ধেক পাওয়ারের ঔষধ দিয়ে কোনোমতে রোগীদের বিদায় করে। যদি কেউ প্রতিবাদ করে তবে তারা সম্পূর্ণ ঔষধ ছিনিয়ে নেয় এবং প্রচুর খারাপ ব্যবহার ও গালাগালি করে, যেন ভদ্র কেউ এসব নিয়ে কথা বলতে না আসে। এমনকি আশেপাশে তাদের একটা মাস্তানবাহিনী থাকে বলেও জানা যায়, যারা প্রথমে রোগী বা রোগীর স্বজনের হিতাকাঙ্ক্ষী সেজে এসে কৌশলে ফাঁসিয়ে দেয়।

দেশ দর্শনের এ প্রতিনিধি সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পান, একজন রোগীকে ব্যবস্থাপত্রে দেয়া হয় orsef 400 mg এন্টিবায়োটিক। অথচ তাকে সরবরাহ করা হয় orsef 200mg, যার মূল্য পার্থক্য এবং রোগ অনুযায়ী এন্টিবায়োটিকের কার্যকারিতার জন্য ভয়াবহ ভুল ছিল। পরবর্তীতে রোগী তা দেখতে পেলে তাকে orsef 400mg কিনে খেতে হয়, যার মূল্য প্রতি পিস 50 টাকা।

একজন রোগীর ব্যবস্থাপত্র, স্লিপ ও বিনামূল্যে দেয়া ট্যাবলেট

এমন ঘটনা ঘটছে অহরহ। কোনো শক্তিশালী তদারকি, নিয়ন্ত্রণ বা অভিযোগের সহজলভ্য ব্যাবস্থাপনা না থাকায় রোগীরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে চিকিৎসাসেবা নিতে গিয়ে হেনস্থার শিকার হচ্ছে। ভুক্তভোগী রোগীকে আইনি সহায়তা নেয়ার বিষয়ে আস্থা দেয়ার পরও তিনি নিতে রাজি হননি। এদিকে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের জানানো হলে তারা লিখিত অভিযোগের পরামর্শ দেন। এমন অনেক ঘটনা ঘটছে যা দেখার কেউ নেই। তাই ভুক্তভোগী রোগীরা সংশ্লিষ্ট বিভাগের উচ্চমানের তদারকির দাবি জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

ক্যাটাগরি: অপরাধ-দুর্নীতি,  প্রধান খবর,  শীর্ষ তিন

ট্যাগ:

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply