বাঙালির সৌভাগ্য যে এরা ঘটনাক্রমে একাধিক বিশ্ববরেণ্য ও নিজস্ব রাজনীতিক পেয়েছিল। কিন্তু বিশ্ববরেণ্য ও নিজস্ব দার্শনিক, লেখক বা চিন্তাবিদ পায়নি। আর এখানেই বাঙালির চরম ব্যর্থতা।
আমার গত একটি লেখায় বলেছিলাম “এই সমাজ ভেতর থেকে নষ্ট হয়ে গেছে এবং সুকৌশলে ব্রিটিশরাই কিছু মৌলিক বিতর্ক সৃষ্টি করে গেছে। এর সাথে স্বাধীনতার পূর্বে ও পরে আরও কিছু যোগ হয়েছে।” তো একটা বিতর্ক আজ উল্লেখ করি, ‘ধর্ম’ ও ‘ধর্ম নিরপেক্ষতা’।
মূলত ধর্ম কী এবং ধর্ম নিরপেক্ষতাই-বা কী তা সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করার মত চিন্তাবিদ আমাদের দেশে তো নেই-ই, জ্ঞানী বা আলেমের সংখ্যাও কম। বিষয়টা আরও স্পষ্ট করা যাক। যে স্বল্প সংখ্যক আলেম/জ্ঞানী আছেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে তারা কোণঠাসা, মিডিয়ায় উপেক্ষিত এবং ব্যক্তিগতভাবে কোনো না কোনো ব্যক্তি-গোষ্ঠী-দলের কাছে আত্মবিকৃত।
আরো পড়ুন. হুমায়ুনের হিমু-মিসির আলী রহস্য
আর কী দার্শনিক, কী সমাজতান্ত্রিক, কী ইসলামিক- যেসব বুদ্ধিজীবী ও তথাকথিত চিন্তাবিদ স্বাধীনতার পর থেকে মিডিয়া দখল করে রেখেছে, তাদের নিজস্ব কোনো জ্ঞান নেই। লক্ষ্য করে থাকবেন, এরা বিদেশি লেখক বুদ্ধিজীবীদের উদ্ধৃতি ছাড়া কোনো কথা ‘প্রমাণ’ করতে পারে না। আর এখানেই সমস্যার সূত্রপাত। অর্থাৎ এই যে ধর্ম, ধর্ম নিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ইত্যাদি বিষয়ে প্রতিদিন বুদ্ধিজীবীদের মুখে খই ফুটছে, অথচ বিষয়গুলো এদের নিজেদের কাছেও সুস্পষ্ট নয়। তাই জনগণকে কোনো একক ‘থিওরি’ বা প্লাটফরমে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে না।
শেখ মুজিব কেন ব্যর্থ হয়েছিলেন? শহীদ জিয়া কেন ব্যর্থ হয়েছিলেন? কারণ আমাদের নিজস্ব দার্শনিক ও বুদ্ধিজীবীর বড় অভাব। বস্তুত ধর্মের সঙ্গে কোনো মানুষের বিরোধ নেই। ধর্ম বুঝতে পারলে ধর্ম নিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র বা সমাজতন্ত্রের কোনোই প্রয়োজন নেই।
ধর্ম, ধর্ম নিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র বা সমাজতন্ত্র প্রয়োগ করতে হলে সবার আগে এদেশকে বুঝতে হবে, দেশের মানুষকে বুঝতে হবে, মানুষের রক্তের ‘তাপমাত্রা’ মাপতে হবে। ভূমির বৈশিষ্ট্য বুঝতে হবে। আর এটা বিদেশি কারো পক্ষে যেমন সম্ভব নয়, তেমনি বিদেশি কোনো চিন্তা, শিক্ষা বা মতবাদ দিয়েও সম্ভব নয়। বাঙালির সৌভাগ্য যে এরা ঘটনাক্রমে একাধিক বিশ্ববরেণ্য ও নিজস্ব রাজনীতিক পেয়েছিল। কিন্তু বিশ্ববরেণ্য ও নিজস্ব দার্শনিক, লেখক বা বুদ্ধিজীবী পায়নি। আর এখানেই বাঙালির চরম ব্যর্থতা।
সম্পাদকের মিনি কলাম
শেখ মুজিব কেন ব্যর্থ হয়েছিলেন? শহীদ জিয়া কেন ব্যর্থ হয়েছিলেন? কারণ আমাদের নিজস্ব দার্শনিক ও চিন্তাবিদের বড় অভাব। বস্তুত ধর্মের সঙ্গে কোনো মানুষের বিরোধ নেই। ধর্ম বুঝতে পারলে ধর্ম নিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র বা সমাজতন্ত্রের কোনোই প্রয়োজন নেই। ধর্ম নিয়ে এসব বিতর্কগুলো ব্রিটিশদের তৈরি। তাই আমি দেশ ও জাতির সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে আজকের যুবসমাজকে আহ্বান করব, অন্ধত্য, দলান্ধতা, ধর্মান্ধতা ও প্রতিক্রিয়াশীলতা পরিহার করে ধর্মকে সঠিকভাবে বুঝতে চেষ্টা করুন। বিশেষ করে ধর্মের গভীর তাত্ত্বিক ও দার্শনিক মজবুত ভিত্তিটি বুঝার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সময় ও শ্রম দিন। ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১২
জাকির মাহদিন: সাংবাদিক ও কলাম লেখক
zakirmahdin@yahoo.com
ক্যাটাগরি: মিনি কলাম
[sharethis-inline-buttons]