শনিবার দুপুর ১:২৮, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং

শহীদ বুদ্ধিজীবী ও ধর্মীয় রাজনীতি

মোজাম্মেল হক

রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহারকারী উন্মাদের বংশধর রাজনৈতিক দলগুলো, পাকিস্তানী বর্বরদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে, স্বজাতি স্বদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যাপূর্বক, বাঙালি জাতিকে চিরতরে মেধাশূণ্য ও পঙ্গু করতেই এই বর্বরতা চালানো হয়। ধর্ম তাদের মানুষ করেনি, বর্বর উন্মাদে রূপান্তরিত করেছে।

কয়েকটি বিশেষ দিবসে আমি খুব আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়ি। তার অন্যতম একটি শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। গণমাধ্যমে ধারা বর্ণনা শুনে, দেখে এবং সংবাদপত্র পাঠ করে নিজেকে সামলাতে পারি না, চোখের জলে ভাসি, বারবার চোখ মুছি, স্মৃতিকাতর হই, মর্মে মর্মে অনুভব করি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হারানোর বেদনা। ফিরে যাই একাত্তরের দিনগুলোতে।

মহান বিজয় থেকে আমরা যখন মাত্র দুই দিনের দূরত্বে অবস্থান করছি, ঠিক সেই সময়ে পাকিস্তানী বাহিনীর এ-দেশীয় দোসর যারা ধর্মের নামে রাজনীতি করে, তারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবী শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনবিদ, গণিতবিদ, দার্শনিক, লেখক, সাংবাদিক, কবি, উদ্ভাবক যারা ছিলেন বাঙালি জাতির মননের প্রতীক, পথিকৃত। যাঁদের অনুপস্থিতি একটি জাতিকে নি:স্ব করে দেয়, পশ্চাতে, অন্ধকার বিবরে ঠেলে দেয়। যাঁদের অবর্তমানে জাতি হারায় পথ, বিকলাঙ্গরূপে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলে, সেই তাঁদেরকে বন্দুকের মুখে বাসা থেকে ডেকে তুলে এনে ফিরিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অসহায় অবস্থায় জঘন্যরূপে হত্যা করা হয়। কারো চোখ উপড়ে ফেলা হয়, কারো হৃদপিণ্ড ছিঁড়ে ফেলা হয়, লাশ টুকরো টুকরো করে ছড়িয়ে দেয়া হয়, রায়েরবাজারের বধ্যভূমিতে। উহ! কি ভীবৎসতা! কি নৃশংসতা!

ধর্মোন্মাদ বর্বর এই চতুর ও ধান্দাবাজ রাজনীতিক ও রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রতিরোধ, প্রতিহত করা এখন সময়ের দাবী। ধর্ম হোক ব্যক্তির মানুষের একান্ত নিজস্ব আরাধনা, উপাসনা, আশ্রয় ও অবলম্বন। আধুনিকতা, বিজ্ঞানের চরমতম উৎকর্ষতা, এর ওপর নির্ভরশীলতা ও প্রযুক্তিগত ব্যাপক উন্নয়নের মধ্যে মানুষের ওপর ধর্মান্ধতা চাপিয়ে দেয়ার বিষয়টি কোনোভাবেই মানা যায় না।

রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহারকারী উন্মাদের বংশধর রাজনৈতিক দলগুলো, পাকিস্তানী বর্বরদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে, স্বজাতি স্বদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যাপূর্বক, বাঙালি জাতিকে চিরতরে মেধাশূণ্য ও পঙ্গু করতেই এই বর্বরতা চালানো হয়। ধর্ম তাদের মানুষ করেনি, বর্বর উন্মাদে রূপান্তরিত করেছে। এখনও তারা তাই করে যাচ্ছে, ধর্ম ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। তাদের সাথে মতভিন্নতা শত্রুতার নামান্তর, ভিন্নমতকে সহ্য করা তাদের অভিধানবহির্ভূত। অতীতে বহু দেশ জনপদ এই ধর্মোন্মাদদের বর্বরতায় তাণ্ডবে ব্যাপক বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, এখনও হচ্ছে। ধর্মচর্চা এদের উদ্দেশ্য নয়, ধর্ম ব্যবহার দ্বারা ক্ষমতা দখলই এদের চূড়ান্ত লক্ষ্য। ধর্ম এদের নিকট গণমানুষকে বিভ্রান্ত বেসামাল করার, ধোঁকা দেয়ার মূল্যবান অস্ত্র।

ধর্মোন্মাদ বর্বর এই চতুর ও ধান্দাবাজ রাজনীতিক ও রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রতিরোধ, প্রতিহত করা এখন সময়ের দাবী। ধর্ম হোক ব্যক্তির মানুষের একান্ত নিজস্ব আরাধনা, উপাসনা, আশ্রয় ও অবলম্বন। আধুনিকতা, বিজ্ঞানের চরমতম উৎকর্ষতা, এর ওপর নির্ভরশীলতা ও প্রযুক্তিগত ব্যাপক উন্নয়নের মধ্যে মানুষের ওপর ধর্মান্ধতা চাপিয়ে দেয়ার বিষয়টি কোনোভাবেই মানা যায় না। মানুষ কি আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা বর্জন করে ঝাড়ফুক তাবিজ কবযে ফিরতে পারে? আমরা কি উদ্ভাবক অধ্যাপক নাট্যকার মুনীর চৌধুরী, লেখক সাংবাদিক শহীদুল্লাহ কায়সার, জহির রায়হানের মত ঔপন্যাসিক চলচ্চিত্রকার এখনো পেয়েছি? অসময়ে এই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হারিয়ে জাতি অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।

আজকের শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে তাই প্রত্যাশা- একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনীতিতে ধর্ম ব্যবহারকারীদের প্রত্যাখ্যান করুন, তাদের মুখোশ উন্মোচন করুন, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীগণের অসাম্প্রদায়িক ও দেশপ্রেমের মহান চেতনা ও আদর্শে উজ্জীবীত হয়ে তাঁদেরকে সম্মানিত করুন। ধর্মের নামে রাজনীতির কারণে এসব স্মরণীয় বরণীয় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের আমরা হারিয়েছি। তাঁদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালবাসা।

ক্যাটাগরি: মিনি কলাম

ট্যাগ:

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply