শনিবার সকাল ১০:০৪, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং

এখন কেউ কারো কাছে নিরাপদ নয়

সরকার জুম্মান

বর্তমান সমাজে কিছু তথাকথিত নামধারী আলেম বা মুসলিম রয়েছে যারা লাশের উপর দাঁড়িয়ে হলেও নিজের ক্ষমতা বা বড়ত্ব প্রকাশ করতে চায়। এখন মতানৈক্য মানে লড়াই করে ছিনিয়ে আনা বা ফিরিয়ে দেয়া। ভাই ভাইয়ের কাছে বা এলাকাবাসী, দেশবাসী কেউ কারো কাছে নিরাপদ নয়।

আমরা কি স্রষ্টার কাণ্ডারী, না সৃষ্টির পূজারী? পুরো বিশ্বপরিস্থিতি পর্যালোচনা-পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, অধিকাংশ মানুষের মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য এবং চাহিদা গিয়ে দাখিল হয় গর্ব, অহংকার, বড়ত্ব, প্রশংসাপ্রিয়তা, ভোগ-বিলাসের কাছে। এগুলো তাদের সাময়িক সান্ত্বনা দিলেও পরবর্তী সময়ে কেড়ে নেয় ব্যক্তি তথা সমাজ বা রাষ্ট্রের শান্তি।

আমি যখন নিজেকে প্রশংসাপ্রিয় মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট হব, তখন পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র- সকলের উপর তার বিরূপ প্রভাব পড়বে। কারণ তা একান্তই ব্যক্তিস্বার্থ-কেন্দ্রিক চিন্তা। এরূপ চিন্তা দিনশেষে এদের থেকে আমাকে মানসিকতার দিক থেকে বিচ্ছিন্ন, একাকী করে দেবে। বাহ্যিক দৃষ্টিতে আমার শারীরিক অস্তিত্ব স্থির দেখালেও ক্ষণে ক্ষণে মস্তিষ্ক উগ্র, আক্রমণাত্বক হয়ে উঠবে। যা প্রতি মূহূর্তেই আমার হৃদয়ে অশান্তি উৎপাদন করবে।

বর্তমান সমাজে কিছু তথাকথিত নামধারী আলেম বা মুসলিম রয়েছে যারা লাশের উপর দাঁড়িয়ে হলেও নিজের ক্ষমতা বা বড়ত্ব প্রকাশ করতে চায়। এখন মতানৈক্য মানে লড়াই করে ছিনিয়ে আনা বা ফিরিয়ে দেয়া। ভাই ভাইয়ের কাছে বা এলাকাবাসী, দেশবাসী কেউ কারো কাছে নিরাপদ নয়। যেখানে স্রষ্টা বলেন, “সেই প্রকৃত মুসলিম, যার কাছে অন্য মুসলিম নিরাপদ”, সেখানে আজ তাদের অবস্থান কোথায়?

ক্ষমতা আর অহংকার বজায় রাখতে প্রয়োজনে করছে আদর্শের পরিবর্তন। চলছে মনগড়া মগজ ধোলাই। আর যারা অনুসারী, তাদের তো কোনো চিন্তাই নেই। শুধু চোখ বন্ধ করে অনুসরণ করলেই জান্নাত!

প্রতিটা মানুষের কাছে একটি আদর্শ আসে। আদর্শের শিক্ষকের সান্নিধ্যে থাকা গুরুত্বপূর্ণ। মুসলিমদের আর্দশ তো ১৪০০ বছর আগে নির্ধারিত। কিন্তু শিক্ষক আসে যোগ্যতার নিরিখে। এখন শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারেই সকলের উদাসীনতা। যার ফলে শিক্ষা ব্যবস্থায় চলে এসেছে চরম বিপর্যয়। ধর্ম দিয়েছে তাদের সম্মান। তাদেরই ছদ্মবেশে কিছু সুবিধা ভোগের অপব্যবহার করছে। ক্ষমতা আর অহংকার বজায় রাখতে প্রয়োজনে করছে আদর্শের পরিবর্তন। চলছে মনগড়া মগজ ধোলাই। আর যারা অনুসারী, তাদের তো কোনো চিন্তাই নেই। শুধু চোখ বন্ধ করে অনুসরণ করলেই জান্নাত!

একি অবস্থা? এই সমাজ কি তাদের আর্দশ অনুকরণের ধারে-কাছে আছে? যারা চরম কষ্টে থেকেও হৃদয়ে প্রশান্তি অনুভব করতো? যারা মিমাংসা করতো ধৈর্য ধারণ করে? জাগতিক সমস্যার মোকাবেলা করতো হৃদয়ের শক্তি দিয়ে? যারা বিরোধী শক্তির কাছে চরমভাবে আঘাত পেয়ে, তাকে শক্তিতে রূপান্তর করে, বিরোধীদের জন্য হৃদয়ে দুঃখ অনুভব করে স্রষ্টার কাছে তাদেরই জন্য ক্ষমা চাইতে পারতো? যারা স্রষ্টার কাছে মর্যাদাসম্পন্ন হয়েও নিজেকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতেন? সৃষ্টি ও স্রষ্টা কারো প্রতি কোনো আপত্তি অভিযোগ ছিলো না?

তারা এমন আত্মশুদ্ধির চেষ্টায় থাকতেন, যেন কোনো প্রাণীও তার দ্বারা অযথা কষ্ট না পায়। এই বিষয়গুলো গোঁজামিল দিয়ে চলতে থাকলে হয়তো অদূর ভবিষ্যতে মানবতা বলতে কিছুই থাকবে না। সবারই নিজেদের হৃদয়ের অবস্থা নিয়ে বিশেষভাবে চিন্তা করা প্রয়োজন। প্রয়োজন সেই পবিত্র জ্ঞান তালাশ করা, যে জ্ঞান বর্তমান, ভবিষ্যৎ তথা সর্বক্ষণ আমাদের সমস্ত অশান্তির মোকাবেলা করে তাদের মতো প্রশান্ত হৃদয়ে মৃত্যু পর্যন্ত নিয়ে যাবে। যারা চূড়ান্ত আদর্শ।

সরকার জুম্মান : যাত্রাবাড়ি, ঢাকা

ক্যাটাগরি: মিনি কলাম

ট্যাগ:

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply