ধর্মের উদারতা, যৌক্তিকতা, বাস্তবতা, বৈজ্ঞানিকতা, চিন্তাশীলতা, দার্শনিকতা, সহিষ্ঞুতা চর্চা না করে যারা ইসলামের নামে মানবসমাজকে বিভক্ত করে, বিভ্রান্তি ছড়ায়, ফেৎনা সৃষ্টি করে, অন্যকে ছোট করে, লজ্জা দেয়, তাদের এসব বক্তব্য, দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মকৌশল মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। তারা বারবার ‘ইসলাম’ ‘ইসলাম’ ও ‘মুসলমান’ ‘মুসলমান’ বলে যে চিৎকার-চেচামেচি করে তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও চরম সমস্যাপূর্ণ।
ইসলাম আজ সারাবিশ্বেই ভুলভাবে ও চরমতম ভয়ঙ্কর রূপে উপস্থাপিত হচ্ছে। শুধু একবার-দুবার নয়, বারবার। এত মার খাওয়ার পরও, এত অপমানিত হবার পরও, এত কোণঠাসা ও ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হবার পরও ইসলামকে কেউ বিশ্ব দৃষ্টি ও মানবদৃষ্টি দিয়ে দেখতে চেষ্টা করছে না। বরং আরো বেশি অন্ধত্য ও প্রতিহিংসা যেন তাদের ভর করছে। তারা কাউকে ‘মানুষ’ হিসাবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি হারিয়ে ফেলেছে। অথচ ধর্মের মূল শর্তই আগে ‘মানুষ’ হওয়া। যারা নিজেকে এবং অন্যকে প্রথমেই ‘মানুষ’ হিসেবে দেখতে পারে না, তারা কীভাবে ধর্মের ভেতরে প্রবেশ করবে?
এসব সংকীর্ণতা ও অন্ধত্যের মূলে রয়েছেন আবার ইসলামেরই কথিত শিক্ষা ও পোশাকধারী শত সহস্র জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব। যাদের ডিগ্রি, কোরআন-হাদিসের উপর বিশাল বিশাল টাইটেল, টুপি-দাড়িসমেত ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ ব্যক্তিত্ব জনসাধারণের মনে খুব সহজেই শ্রদ্ধা জাগায়। বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিরাও তাদের সামনে নত হন। কিন্তু তাদের সরাসরি কোরআনের আয়াত ও ‘সহি হাদীসের’ উদ্ধৃতিসমেত দীর্ঘ দীর্ঘ বক্তব্যও সাধারণ মানবিক সমস্যাগুলোরও সমাধান বাতলাতে পারছে না। ফলে ধর্মের প্রতি সাধারণ মানুষের সন্দেহ-সংশয় ও অন্ধত্য দিন দিন বাড়ছে। কেউ কেউ এরই মধ্যে ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণা করেছে।
কেন আজ ইসলামের নাম শুনলেই বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের অন্তরাত্মা কেঁপে উঠে? কারণ তাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, নির্বিচার হত্যা, কামুক, সেকেলে ইত্যাদি। এদের এ জাতীয় ভুল ধারণা আরো পাকাপোক্ত করছে হাজী, ধার্মিক, আলেম উপাধীধারী অসংখ্য মানুষের অশিক্ষা, একগুয়েমি, একদেশদর্শী দৃষ্টিভঙ্গি এবং পেটপূজা-ক্ষমতাপূজা-টাকাপূজা ইত্যাদি।
ধর্মীয় শিক্ষাব্যবস্থায় যথেষ্ট পরিবর্তন আনতে হবে। ধর্মের উদারতা, যৌক্তিকতা, বাস্তবতা, বৈজ্ঞানিকতা, চিন্তাশীলতা, দার্শনিকতা, সহিষ্ঞুতা চর্চা না করে যারা ইসলামের নামে মানবসমাজকে বিভক্ত করে, বিভ্রান্তি ছড়ায়, ফেৎনা সৃষ্টি করে, অন্যকে ছোট করে, লজ্জা দেয়, তাদের এসব বক্তব্য, দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মকৌশল মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। তারা বারবার ‘ইসলাম’ ‘ইসলাম’ ও ‘মুসলমান’ ‘মুসলমান’ বলে যে চিৎকার-চেচামেচি করে তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও চরম সমস্যাপূর্ণ। বিশেষ করে ধর্মের নামে যারা রাজনীতি করে, শিক্ষাব্যবসা করে, সাম্প্রদায়িকতা লালন করে, তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই চিৎকারগুলো আরো বেশি করে। এসব সমস্যাপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মকৌশলে পরিবর্তন আনা অপরিহার্য। ধর্মকে অবশ্যই ‘বিশ্বদৃষ্টি’ ও ‘মানবদৃষ্টি’ দিয়ে উপলব্ধি করতে হবে।
দেশি-বিদেশি যেসব মাওলানা, মুফতি, সরকারি-বেসরকারি চাকুরে মাসে মাসে বেতন ভোগ করে, এসিরুমে বসে, গাড়িতে চড়ে, দামি দামি পোশাক পড়ে আর সব বিলাসিতায় গা ভাসিয়ে ইসলামের কথা বলে, তাদেরকে মুক্তভাবে বিচার করুন। নবী ও সাহাবাগণের সংসার কেমন ছিল, আর এদেরগুলো কেমন তাও একটু খতিয়ে দেখুন। বিশেষ দল কর্তৃক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃক, বিশেষ পরিবেশের মাধ্যমে মস্তিষ্ককে যে গণ্ডিবদ্ধ ধারণায় গড়ে তোলা হয়েছে, তা ছিন্ন করতে কেউ চেষ্টা করছে না।
যেসব শিক্ষাব্যবসায়ী, কালো টাকার মালিক, ব্যক্তিগত ও সাংসারিক জীবনে থার্ডক্লাশ আচরণে অভ্যস্ত, বিশেষ রাজনৈতিক দল-গোষ্ঠী কর্তৃক মগজ-ধোলাইয়ের শিকার, ইসলামের নামে পরিচালিত তাদের কর্মকাণ্ডগুলোও সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করুন।
ক্যাটাগরি: মিনি কলাম
[sharethis-inline-buttons]