শুক্রবার সকাল ৬:৪০, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং

ঠাকুরগাঁওয়ের টাঙ্গনে নির্বিচারে চলছে মা মাছ নিধন (ভিডিও)

মোঃ জাহিরুল ইসলাম

ভিডিও থেকে ছবি

আমরা মাছে-ভাতে বাঙালি। বহুল প্রচলিত এই প্রবাদটি বাঙালির ঐতিহ্য ও জীবন পরিচালনায় ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমাদের প্রধান খাবার ভাত ও মাছ, যা অস্বীকার অন্তত কোনো বাঙালিই করতে পারবে না। তবে অতীত ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান রেখে কেউ ‘মাছে ভাতে বাঙালি’র সত্যতা স্বীকার করলেও বাস্তবতার নিরিখে তা অস্বীকার করার সময় সম্মুখে দাঁড়িয়ে।

কারণ দেশীয় প্রজাতি অর্থাৎ আমাদের অতি পরিচিত মাছগুলো যেভাবে বিলুপ্ত হচ্ছে, তাতে আগামী দিনের বাঙালি খাবার তালিকায় যুক্ত হবে নতুন কিছু। ভাতের সঙ্গে মাছ শব্দটি উধাও হতে আর বেশিদিন বাকি নেই। বর্ষার পানি জমা হতে না হতেই টাঙ্গন ব্যারাজের নদী-নালায় চলছে মা মাছ নিধনের ‘উৎসব’।

একশ্রেণির জেলে টাঙ্গন নদী ও ব্যারাজের বিভিন্ন পয়েন্টে কারেন্ট, ফিকা জালসহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মা মাছ ধরছেন। সেগুলো স্থানীয় হাটবাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি করলেও মৎস্য বিভাগকে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে না। অথচ এই সময়টা মাছের প্রজননকালীন সময়। কঠোর নজরদারী না থাকায় স্থানীয় জেলেরা অবাধে মাছ ধরছে। আর এখন ধরা পড়ছে সব ধরনের পোনা ও ডিমওয়ালা মাছ।

মৎস্য আইনে ১ এপ্রিল থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত পোনামাছ ও ডিমওয়ালা মাছ নিধন করা যাবে না। যদি কেউ এ আইন অমান্য করে মৎস্য নিধন করে। তাহলে অর্থদণ্ড ও জেল জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ড হতে পারে। কিন্তু এর কার্যকর কোনো পদক্ষেপ বাস্তবে দেখা যায়নি।

সদর উপজেলাধীন, উত্তর বঠিনা, রুহিয়া টাঙ্গন ব্যারাজ ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার পাটিয়াডাঙ্গী ব্রীজ, বরদেশ্বরী ব্রীজ, শুক নদসহ ব্যারাজের বিভিন্ন পয়েন্টে জেলেরা বাদাই, কারেন্ট, ফিকা, ছাপি জালসহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে ডিমওয়ালা কৈ, মাগুর, শিং, পাবদা, টেংরা, পুঁটি, ডারকা, মলা, ঢেলা, শৌল, বোয়াল, আইড়, ভ্যাদা, বাইম, খলিশা, ফলি, চিংড়ি, টাকি, চিতল, বালিয়া, কাকিলা, চাপিলা, বৈচা, চাটুয়া, নাপতানি, গুলশা, পাবদা, দেশি পুঁটি, সরপুঁটি, তিতপুঁটি, মেনি, চেলি, কানপোনা, বাচা, বাটা, রিটা, পিয়ালি, জয়া, ছোট টেংরা, বড় টেংরা, চান্দা, কাজলি, চ্যাং, ছোট চিংড়ি, বাতাসি, বড় বাইন ,তারা বাইন, শালবাইন, কুচিয়া, খোকসা, খড়কুটি, টাটকিনি, ধুতরা, গচি, বইরালি, গোলসাসহ নাম না-জানা বহু প্রজাতির মাছ প্রকাশ্যে নিধন করছেন।

যদিও দেশীয় প্রজাতির এই মাছগুলো বিলুপ্তির পথে। সরকারিভাবে মা মাছ নিধন নিষেধ থাকলেও প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রতিদিন ডিমওয়ালা ওই মাছগুলো আশপাশের স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা বাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি করা হচ্ছে। মাছগুলো স্থানীয় লোকজন বেশি দাম হাঁকিয়ে কিনে নিচ্ছেন।

জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন বাজারে ডিমওয়ালা মাছ ও পোনা মাছ প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি টেংরা ৬শ’ থেকে ৮শ’ টাকা, পুঁটি ৪শ’ টাকা, মোয়া মাছ ৫-৬শ’ টাকা, ডিমওয়ালা বোয়াল বিক্রি ৬শ’ টাকা কেজি, শৈল বা টাকি মাছের পোনাও ২ থেকে ৩শ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশীয় মৎস্য সম্পদ রক্ষায় এটা বন্ধ হওয়া জরুরি।

যদি প্রতি বছর আইন মেনে ব্যারাজে মাছ ধরা হয় তবে মিঠা পানির মাছের কোন অভাব পড়বে না আর না হলে মৎস্য রাজ্যে, মৎস্য বংশ চিরতরে শেষ হয়ে যাবে বলে মনে করছেন সচেতনতা মহল।

মোঃ জাহিরুল ইসলাম: ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

 

ক্যাটাগরি: প্রধান খবর,  ভিডিও নিউজ,  শীর্ষ তিন,  সারাদেশ

ট্যাগ:

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply