শুক্রবার রাত ৮:১১, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং

জীবন অসম্পূর্ণ ও সং‌ক্ষিপ্ত

মোজাম্মেল হক

“এ ছেলটিই ডাঃ মনোয়ার মাহমুদ লিবু। মাথায় বাজ পড়ার মতো দুঃসংবাদ হলো- নিবেদিতপ্রাণ এই চিকিৎসক, করোনা চিকিৎসায় সম্মুখযোদ্ধা আজ না ফেরার দেশে চলে গিয়েছে।”

ভদ্রলোক ব্যাংক অফিসার, তার স্ত্রী সরকারি একটি সংস্থায় কর্মরত ছিলেন। একই রোডে আমাদের বিপরীতে তাদের বাসা। ভদ্রমহিলাকে দেখতাম- অফিস থেকে এসেই তার ছোট ছেলেকে কোলে করে বাসার বাহিরে ভেতরে আসা যাওয়া করতেন, অনেকটা সময় ধরে। সন্তান বাৎসল্য পুষিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা। দিনের দীর্ঘ অনুপস্থিতির কারণে ছেলেটিও কিছুতেই মায়ের কোল ছাড়তে চাই‌তো না। প্রতিবেশী হিসেবে তাকে ‘আপা’ সম্বোধন করতাম। দেখা সাক্ষাতে সালাম ও কুশলাদি বিনিময় ছাড়াও তার সাথে কথাবার্তা হতো টুকটাক। অন্য‌দি‌কে ভদ্রলোকের দেখা পেতাম কদাচিৎ, কথা হতো না তেমন।

“তার মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত। স্বজন হারানোর তীব্র কষ্ট অনুভব করছি, কেঁদেছিও প্রচুর। মাত্র ৪৩ বৎসরের জীবন ছিল তার। হায়! কী সংক্ষিপ্ত, অসম্পূর্ণ জীবন আমাদের।”

সরকারি চাকরির পাশাপাশি খণ্ডকালীন চাকরি করতাম আনন্দপত্র অফিসে। স্বাস্থ্য সমস্যায় পড়ে ‘৮৯তে আমি ওটি ছেড়ে দিয়ে বাজারে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে কনফেকশনারী চালু করি। ‘আপা’ কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে আমার দোকানে কিছু কেনাকাটা করে বাসায় ফির‌তেন। মাঝে মধ্যে আমার সাথে দেখা হয়ে যেতো।

ডাঃ মাহমুদ মনোয়ার

তার আচরণে লক্ষ্যণীয় ছিল- তিনি আমাকে ছোটভাই জ্ঞান করতেন, নাম ধরে ডাকতেন। কথাবার্তায় স্নেহ ঝরে পড়তো। বিষয়টি আমি উপভোগ করতাম। পরে জেনেছি আমার মাকে তিনি ‘ফুপুআম্মা’ সম্বোধন করতেন। তখন থেকে গ‌ড়ে উ‌ঠে পারিবারিকভাবে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। ইতোমধ্যে দুই দশক কেটে গিয়েছে। হঠাৎ একদিন শুনলাম, আপা গুরুতর অসুস্থ, বারডেমে’র আইসিইউতে ভর্তি। তার কোলের সেই ‘ছোট্ট ছেলেটি’ তখন চিকিৎসক, ইন্টার্নশীপ চলছে তার। চিকিৎসা, সেবা ও দৌড়ঝাঁপসহ মাকে বাঁচাতে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়েছিল ছেলেটি। কিন্তু আপাকে বাঁচানো যায়নি।

আরো পড়ুন> মৌলবাদ, বিজ্ঞানবাদ ও আধুনিক রাষ্ট্রব্যস্থা

এ ছেলটিই ডাঃ মনোয়ার মাহমুদ লিবু। মাথায় বাজ পড়ার মতো দুঃসংবাদ হলো- নিবেদিতপ্রাণ এই চিকিৎসক, করোনা চিকিৎসায় সম্মুখযোদ্ধা আজ না ফেরার দেশে চলে গিয়েছে। এই ভাগিনাকে যে কোনো সময় অসুস্থতার কথা বললে সঙ্গে সঙ্গে সাড়া পাওয়া যেতো। ২০১৪তে আমার বাইপাস করার সময়ে হাসপাতালে আগে/পরে গিয়ে এবং বাসায় আমার শারিরীক অবস্থার আদ্যোপান্ত খোঁজ নিয়ে পরামর্শ ও সাহস দিতো।

চেম্বার, বাসা অথবা টেলিফোনে সে সম্মানের সঙ্গে আমার এবং আমার স্ত্রীর চিকিৎসা সেবা প্রদান করতো। ফেসবুকেও যোগাযোগ ছিল। তার মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত। স্বজন হারানোর তীব্র কষ্ট অনুভব করছি, কেঁদেছিও প্রচুর। মাত্র ৪৩ বৎসরের জীবন ছিল তার। হায়! কী সংক্ষিপ্ত, অসম্পূর্ণ জীবন আমাদের।

মোজাম্মেল হক: চিন্ত্যক, কলামিস্ট

ক্যাটাগরি: মিনি কলাম

ট্যাগ: মোজাম্মেল হক

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply