রবিবার রাত ৩:৩৩, ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং

নারায়নগঞ্জে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ: চারটি নিউজ পোর্টাল বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক

গত ১৮ মে থেকে নারায়নগঞ্জের চারটি শীর্ষ অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধ রয়েছে বলে জানা যায়। তবে কারা কী কারণে কার স্বার্থে বন্ধ করেছে সেসবের কিছুই বলতে পারছেন না পোর্টালগুলোর সম্পাদক-প্রকাশকগণ। ‘নারায়নগঞ্জ টুডে’র সম্পাদক সীমান্ত প্রধান দেশ দর্শনকে জানান, তারা শীঘ্রই কঠোর আন্দোলনে যাচ্ছেন। কারণ এভাবে কোনো কারণ না দর্শিয়ে গণমাধ্যম বন্ধ করে দেয়ার এখতিয়ার রাষ্ট্রের নেই। তবে তিনি এও জানান, রাষ্ট্র বা সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে এগুলো বন্ধ করা হয়েছে বলে তিনি মনে করেন না। কারণ সেটা করা হলে অবশ্যই নিয়মতান্ত্রিকভাবে পত্রিকাগুলোর অফিসে চিঠি দিয়ে অথবা তথ্যমন্ত্রণালয়ে বিজ্ঞপ্তি আকারে জানানো হতো।

আপনারা তথ্যমন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে সীমান্ত প্রধান বলেন- বন্ধ পোর্টালগুলোর পক্ষ থেকে এখনো কেউ তথ্যমন্ত্রণালয় বা সরকারের কোনো উচ্চপদস্থ কারো সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। তবে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান। “আন্দোলনের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে তথ্যমন্ত্রণালয়ে ফোন বা মেইল করে তাদের জবাবটি জেনে নেয়া জরুরি নয় কি?” এমন প্রশ্নের জবাবে সীমান্ত প্রধান বলেন, এটা জরুরি নয়। বরং রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমেই আমরা রাষ্ট্রের কাছে সে জবাবটি চাইব।

এদিকে ‘নারায়নগঞ্জ টুডে’র সম্পাদক সীমান্ত প্রধান গত ২৭ মে তার ফেসবুকে লিখেন, “আজ দশদিন হতে চলেছে নারায়ণগঞ্জ টুডে’র ডোমেন বাংলাদেশের জন্য ব্লকড করে দেওয়া হয়েছে। কেন এটা করা হয়েছে! আমাদের জানা নেই। আমাদেরকে জানানোও হয়নি। শুধু আমাদের ‘নারায়ণগঞ্জ টুডে’ নিউজ পোর্টালই যে ব্লকড তা কিন্তু নয়। একই দিনে ‘প্রেস নারায়ণগঞ্জ’, ‘যুগের চিন্তা’, ‘নিউজ নারায়ণগঞ্জ’ও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জে অসংখ্য নিউজ পোর্টাল রয়েছে। এসব পোর্টালের মাঝে প্রথম সারির গুণতে হলে পাঁচটি পোর্টালকেই গুণতে হয় পাঠকপ্রিয়তার দিক থেকে। যার চারটিই এখন বন্ধ। যদিও এরমধ্যে নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডোমেন পরিবর্তন করে চালু করেছে। ডোমেন পরিবর্তন করে আমরাও আসতে পারতাম। কিন্তু সেটি করলে অপরাধী, কুচক্রি মহলের কাছে মাথা নত করা হবে বলেই মনে করি। তাই এখনও অবিচল রয়েছি, কেন আমাদের পোর্টালগুলো বন্ধ করা হয়েছে, জানতে চাই। প্রয়োজনে রাস্তায় নামবো। আন্দোলনে যাবো। তারপরও আমরা জানতে চাই, কার অথবা কাদের স্বার্থে হেন এই কর্মটি করা হয়েছে।

গণতান্ত্রিক একটি রাষ্ট্রে গণমাধ্যম থাকবে মুক্ত। বাক স্বাধীনতা থাকবে মুক্ত। কিন্তু চলমান পরিস্থিতিতে আমরা এবং আমাদের গণমাধ্যম কতটা মুক্ত রয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে কিনা, সে প্রশ্ন এসেই যায়। তবে, গণমাধ্যমের উপর হস্তক্ষেপ, রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার, কখনই শুভকর বার্তা দেয় না। আমরা মনে করি, নারায়ণগঞ্জের শীর্ষ এই গণমাধ্যমগুলো একই দিনে বন্ধ করে দিয়ে এখানকার সকল গণমাধ্যমকর্মীদের অশনী সঙ্কেতই দিচ্ছে জল্লাদের দলেরা। তারা বোঝাতে চাইছে, তারাই সকল ক্ষমতার উৎস! আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। পাশাপাশি সকল গণমাধ্যমকর্মীদেরকে এমন পরিস্থিতিতে আমাদের পাশে এসে দাঁড়ানোর আহ্বান করছি।”

ছবি: ফেসবুক থেকে নেয়া

এরপর ২৮ মে তিনি আরো লিখেন “নিজের উপর যখন অন্যায় হবে, তখন আওয়াজটা নিজের দিক থেকেই তুলতে হয়। এরপর বিবেকবান, ন্যায় পরায়ণ, অন্যায় বরদাস্ত না করা কিছু না কিছু মানুষও আওয়াজ তোলা শুরু করে। আমার উপর হওয়া অন্যায়ের আওয়াজ আমি তুলেছি। পাশে এসে গলা মিলিয়েছেন আরও অনেকেই। ধীরে ধীরে এখন অনেকেই আওয়াজ তুলতে শুরু করেছেন।

আমি বিশ্বাস করি, যে অন্যায় আমাদের সাথে হয়েছে তা এখনও পর্যন্ত সরকারের উচ্চ পর্যায়ে জানে না। কারণ, আমাদের নিউজ পোর্টালগুলো বন্ধ করার মত সরকারের কাছে তেমন কোনো কারণ নেই। কেননা, আমি রাষ্ট্র বিরোধী, গুজব সৃষ্টি করে মানুষের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার মত কোনো পায়তারা করিনি। আমরা ন্যায়, নীতি আর প্রগতিশীলতা আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বরাবরই বুকের বা পাশে লালন করি।

সব থেকে বড় কথা হচ্ছে, সরকারি সিদ্ধান্তে যদি আমাদের পোর্টালগুলো বন্ধ করা হত তাহলে সরকারি নিয়ম মত আমরা তা জানতে পেতাম। তাই মনে প্রাণে বিশ্বাস করি সরকার এমনটা করেনি। তবে, সরকারি লোক পরিচয়ে সরকার ঘনিষ্ঠ কোনো মহল বিটিআরসিতে প্রভাব বিস্তার করে বা ভুল বুঝিয়ে এ কাজটি পুরোপুরি অন্যায় ভাবে করিয়েছে বলেই আমরা মনে করছি। এতে করে সাধারণ মানুষের মধ্যে সরকারের প্রতি একটা বিরূপ ধারণা জন্ম নিচ্ছে। সরকার গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করতে চাচ্ছে, এটাই ধরে নিচ্ছে মানুষ।

আমরা চাই সরকার নিজের অবস্থান স্পষ্ট করুক। সরকার এই কাজটি করেনি সে বিশ্বাস আমাদের অক্ষুন্ন থা্কুক এবং এই কাজটি যে বা যারাই করেছেন তাদের কাছ থেকে কৈফিয়ত নেয়া হোক। সব শেষে একটা কথাই বলব, এই কাজটি যারা করেছে তারা সরকারের ভালো কাজগুলোকে নিজেদের স্বার্থে ম্লান করার চেষ্টাই করেছে, করছে। এদের ব্যাপারে সরকারকে কঠোর মনোভাব পোষণ করা দরকার। নয়তো খুব দেরী হয়ে যাবে।

আর একটা কথা না বললেই নয়, গত কদিন ধরে আমাদের উপর ঘটে যাওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধ জাতীয় গণমাধ্যমগুলো কোনো রকম ‘রা’ করছে না! কেন তারা নিশ্চুপ বুঝতে পারছি না। তারা কী কোনো কারণে ভীত?”

ক্যাটাগরি: প্রধান খবর,  শীর্ষ তিন

ট্যাগ:

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply