বেশির ভাগ কৃষক বিভিন্ন এনজিও বা ‘সুদখোরদের’ কাছ থেকে টাকা ধার এনে শষা, খিরা, লাউ, কুমড়া ইত্যাদি সবজি জাতীয় ফসল ক্ষেতে চাষ করেছিলেন। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে নিজ সন্তানের মতই যত্ন করে এসব ফসল ফলিয়েছিলেন। ফলনও হয়েছিলো মোটামুটি ভালো।
করোনাভাইরাসের প্রকোপ অন্যান্য রাষ্ট্রের মত বাংলাদেশেও ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই ভাইরাসরোধে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির সময়সীমা একের পর এক বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ছুটি কবে শেষ হবে তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছে না। এই সময়ে নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষ, বিশেষ করে গ্রামের ক্ষুদ্র কৃষকদের দিন কীভাবে চলবে তা ভেবে কৃষকগণ দিশেহারা।
নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী উপজেলা দুর্গাপুরের মিনকিফান্দা, লেঙ্গুরা, ঠাকুরবাড়িকান্দা, চন্দ্রকোনা, সমলাভিটা, চন্ডিগড়, মউ এর শত শত কৃষক লকডাউনের কারণে বাজার-ঘাটে মানুষের উপস্থিতি কম থাকায় উৎপাদিত কৃষিপণ্য বিক্রি করতে না পেরে ব্যাপক লোকসানে পড়েছেন। ফলে এ কৃষকগণ চরম অর্থকষ্টে দিনাতিপাত করছেন।
এদের মধ্যে অনেকেই এখন দিন খাটাচ্ছেন অর্ধাহারে-অনাহারে। এরমধ্যে আছে এনজিও বা সুদের টাকা পরিশোধ করার চাপও। অথচ কৃষকগণ এমন দুঃসময়ে মানবেতর জীবন-যাপন করলেও কেউ তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন না। না স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, না সরকার। তাদের দুঃখ-দুর্দশা যেন দেখার কেউ নেই।
জানা যায়, বেশির ভাগ কৃষক বিভিন্ন এনজিও বা ‘সুদখোরদের’ কাছ থেকে টাকা ধার এনে শষা, খিরা, লাউ, কুমড়া ইত্যাদি সবজি জাতীয় ফসল ক্ষেতে চাষ করেছিলেন। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে নিজ সন্তানের মতই যত্ন করে এসব ফসল ফলিয়েছিলেন। ফলনও হয়েছিলো মোটামুটি ভালো।
কিন্তু কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনারোধে সরকারের জারি করা লকডাউন। এ কারণে কৃষকগণ স্থানীয় বাজারেও এসব শষ্যাদি বিক্রি করতে পারছেন না। টুকটাক যাই বিক্রি করছেন, তাও দাম একেবারে কম। অন্যান্য ডিস্ট্রিক বা শহরে চালান করতে না পারায় পাইকাররাও কিনছেন না । ফলে সীমাহীন কষ্ট করে ফলানো ফসল চোখের সামনেই ক্ষেতে পঁচে-গলে নষ্ট হচ্ছে। তা দেখে অনেক কৃষকই সহ্য করতে না পেরে ঝরঝর করে চোখের পানি ফেলছেন। তারা খাবেন কী? সামনের দিনগুলোতে চলবেন কীভাবে? এনজিও বা সুদি টাকাই বা কীভাবে পরিশোধ করবেন? সবমিলিয়ে দুর্গাপুরের কৃষকগণ পড়েছেন এক মহাসংকটে।
এ বিষয়ে হযরত, ফজলসহ আরো কয়েকজন ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক জানান, লকডাউনের কারণে পাইকার না আসায় তারা লাউ, কুমড়া, চিরিন্তা, করলা ইত্যাদি সবজিজাত ফসল ঢাকা চালান করতে পারছেন না। তারা নিজেরা ঢাকা বা অন্যান্য ডিস্ট্রিকে নিয়ে যেতে চাইলেও, গ্রামবাসী তাদেরকে বাধা দিচ্ছে। ফলে অনেকের ফসল ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে। আবার স্থানীয় বাজারে যাই বিক্রি করছেন, তাও দাম একেবারে কম।
তারা আরো বলেন, কিস্তিতে টাকা এনে ফসল করেছিলেন। ভেবেছিলেন, ফসল বিক্রি করে লাভের টাকায় তা শোধ করে দেবেন। কিন্তু করোনার কারণে এবার তারা লাভ দূরের কথা, লাখ লাখ টাকার লোকসানে পড়েছেন। এখন তারা কিস্তি-সুদের টাকাই শোধ করবেন কীভাবে? আর নিজেরা পরিবার-পরিজন নিয়েইবা কীভাবে চলবেন- এ নিয়ে মহাদুশ্চিন্তায় আছেন। এখন তাদের থাকার ভিটা বিক্রি করা ছাড়া চোখে আর কোনো পথ দেখছেন না বলে জানান তারা।
এদিকে তারা দাবি করেন, এ অবস্থায় এখনো পর্যন্ত তাদের সাথে কোনো সরকারি কর্মকর্তা দেখা করেননি, পাননি কোনো সরকারি সহায়তাও। এই দুঃসময়ে দরিদ্র কৃষকদেরকে নিয়ে উপজেলা প্রশাসন কী ভাবছেন বা কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন, তা জানতে দেশ দর্শন থেকে দুর্গাপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা খানমের ফোনে দুদিন ধরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। অথচ এই সময়ে সরকারি কর্মকর্তাদের অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশি সক্রিয় থাকার কথা।
জুনায়েদ আহমেদ: স্টাফ রিপোর্টার
ক্যাটাগরি: প্রধান খবর, শীর্ষ তিন
[sharethis-inline-buttons]