“এমন অনেক ঘটনা আছে, যেটা প্রমাণ করে এই সময়েও বিচার ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। যখন একজন সাধারণ নাগরিক তার আইনগত প্রতিকার পাবেন না, তখন সেখানে অপরাধের পরিমাণ বাড়তেই থাকবে। অথচ মেডিকেল সেবার মতো একজন সাধারণ নাগরিকের ন্যায়বিচার পাবার অধিকার রয়েছে। আর সেটি সার্বজনীন এবং একজন মানুষ যে কোনো অবস্থাতেই এই অধিকার পাবার হকদার। এক মুহূর্তের জন্যও স্থগিত করা যায় না।”
এক মাসের ভাড়া বাকি থাকায় এই দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে ২মাসের বাচ্চাসহ মা-বাবাকে বের করে দিয়েছেন বাড়িওয়ালা শম্পা। পুলিশের অনুনয়-বিনয়ও গলাতে পারেনি সেই বাড়িওয়ালীর মন। একশ্রেণীর মানুষের কাছে এই বাড়িওয়ালী অনেক ক্ষমতাধর। আবার অন্যশ্রেণীর মানুষের বক্তব্য হলো, “পুলিশ কেন কঠিন ব্যবস্থা গ্রহণ করলো না, পুলিশ কেন অনুনয়-বিনয় করবে।” আবার কেউ কেউ পুলিশের সাথে বাড়িওয়ালীর যোগসাজশ নিয়েও মন্তব্য করছেন। যা হোক, এইসব মন্তব্য নিয়ে ভাবতে চাই না। শুধু কিছু কিছু মানুষ- যারা মনে করেছিলেন যে এই সময় হাসপাতাল, ডাক্তার, থানা, পুলিশ ব্যতীত সবকিছু বন্ধ থাকা উচিত, তাদের কি এখনো মনে হচ্ছে আদালতগুলো বন্ধ থাকা উচিত বা বিচার ব্যবস্থার প্রয়োজন নেই?
একটু ভেবে দেখুন, পুলিশ কোন ক্ষমতাবলে বাড়িওয়ালীর বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেবে? পুলিশের কাছে কি সরকারি বা আদালতের কোন নির্দেশনা আছে এই মর্মে! আর যদি কোন কঠিন ব্যবস্থা পুলিশ গ্রহণও করতো, সেক্ষেত্রে গতকাল ভিকটিমের জায়গায় দাঁড়াতেন সেই বাড়িওয়ালী। আর সবাই পুলিশকে দোষারোপ করে তাদের জাতগোষ্ঠী উদ্ধার করতেন। সেই সুবাদে মিডিয়াতেও বিশাল নিউজ হতো। অসহায় বাড়িওয়ালার উপর পুলিশের বেআইনীভাবে নির্যাতনের অভিযোগ উঠতো।
আরো পড়ুন> চারদিকে মিথ্যার ভিড়ে সত্য অন্তরালে
একটি বার কিছু বলার আগে ভাবুন। আপনি যে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছেন, সেই বাহিনী চাইলেই ব্যবস্থা নিতে পারেন না। সরকার বা আদালতের নির্দেশনা পেলে তবেই তারা আইনগত প্রক্রিয়ায় কাজের বাস্তবায়ন করতে পারেন। এক্ষেত্রে মনে রাখা জরুরি, সরকারি নির্দেশনাগুলো একটু সময়সাপেক্ষ হয়ে থাকে। আর বর্তমান পরিস্থিতিতে যেখানে দুর্যোগপূর্ণ অবস্থার ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারকে হিমশিম খেতে হচ্ছে, সেখানে রাতারাতি সরকারি নির্দেশনা পাওয়া শিশুর আবদারের ন্যায়।
“পাশ্র্ববর্তী দেশের বিভিন্ন প্রদেশে টেকনোলজিকে কাজে লাগিয়ে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনার কাজ শুরু হয়ে গেছে। সে জায়গায় আমাদেরও এখন পিছিয়ে থাকলে চলবে না। রাষ্ট্রের প্রতিটা জনগণের সকল পরিস্থিতিতে ন্যায়বিচার পাবার অধিকার রয়েছে। এই সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য আদালতের প্রচলিত কার্যক্রম বিশেষ প্রক্রিয়ায় হলেও পরিচালনা করা প্রয়োজন।”
বর্তমান সময়ে এই একটি ঘটনা শুধু নয়, এমন অনেক ঘটনা আছে, যেটা প্রমাণ করে এই সময়েও বিচার ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। যখন একজন সাধারণ নাগরিক তার আইনগত প্রতিকার পাবেন না, তখন সেখানে অপরাধের পরিমাণ বাড়তেই থাকবে। অথচ মেডিকেল সেবার মতো একজন সাধারণ নাগরিকের ন্যায়বিচার পাবার অধিকার রয়েছে। আর সেটি সার্বজনীন এবং একজন মানুষ যে কোনো অবস্থাতেই এই অধিকার পাবার হকদার। এক মুহূর্তের জন্যও স্থগিত করা যায় না।
লেখকের সব লেখা
কোভিট-১৯ যেভাবে মহামারী আকার ধারণ করা শুরু করেছে, সেখানে সাধারণভাবে হয়তো আদালতের প্রচলিত কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। কিন্তু বিশেষ প্রক্রিয়ায় হলেও আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা করা জরুরি। আমাদের পাশ্র্ববর্তী দেশের বিভিন্ন প্রদেশে টেকনোলজিকে কাজে লাগিয়ে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনার কাজ শুরু হয়ে গেছে। সে জায়গায় আমাদেরও এখন পিছিয়ে থাকলে চলবে না। রাষ্ট্রের প্রতিটা জনগণের সকল পরিস্থিতিতে ন্যায়বিচার পাবার অধিকার রয়েছে। এই সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য আদালতের প্রচলিত কার্যক্রম বিশেষ প্রক্রিয়ায় হলেও পরিচালনা করা প্রয়োজন।
এই কোভিট-১৯ মহামারীকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে যদি আদালতসমুহকে বন্ধ রাখা হয়, তবে বিচারব্যবস্থা একদিকে যেমন হুমকির মুখে পড়বে, অন্যদিকে রাষ্ট্র জনগণের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হবে। এর ফলে আজকের এই বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলো কালকের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় রূপ নিতে শুরু করবে। ছুটি দীর্ঘমেয়াদী হোক বা না হোক, জনগণের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির জন্য এখন বিশেষ প্রক্রিয়া অবলম্বনের বিকল্প নেই। এই দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে যেন জনগণের সাংবিধানিক এবং আইনগত অধিকার খর্ব না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা অতি জরুরি।
জান্নাতুল কারার তিথি : আইনজীবি
ক্যাটাগরি: প্রধান কলাম
[sharethis-inline-buttons]