রবিবার ভোর ৫:৪০, ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং

মসজিদ বন্ধ, বাজার সরগরম, তবুও নির্বিকার প্রশাসন-মিডিয়া

জুনায়েদ আহমেদ

১৪ এপ্রিল মঙ্গলবার সকাল ১০টায় যাত্রাবাড়ি আড়তের সামনে

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধ ও সামাজিক (দৈহিক) দূরত্ব বজায় রাখতে সরকার মসজিদ একেবারে বন্ধ না করলেও জামাতে নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে মুসল্লি সংখ্যা নির্ধারণ করে মসজিদ কার্যত বন্ধ করে দিয়েছে। ওয়াক্তিয়া নামাজে পাঁচজন, জুমার নামাজে সর্বোচ্চ দশ জন। এ নির্দেশনা পালনে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী কঠোরভাবে নজর রাখছে। মসজিদে নির্ধারিত মুসল্লি সংখ্যার বেশি হওয়ায় কয়েক জায়গায় ইমাম ও কমিটিকে জেল-জরিমানা পর্যন্তও করা হয়েছে।

সচেতন ধর্মপ্রাণ মানুষের জন্য এ নির্দেশনা মানা কষ্টকর হলেও দেশ-জাতি সর্বোপরি নিজেদের কল্যাণের স্বার্থে তারা তা মেনে নেন। কিন্তু মূলত যে কারণে মসজিদে জমায়েত বন্ধ করা হয়েছে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে- দেখা যাচ্ছে হাট-বাজার, গার্মেন্টস, টিসিবির পণ্য কেনা বা ত্রাণ নেওয়ার জন্য মানুষের উপচেপড়া ভিড়। একজনের গায়ে আরেকজন লেপ্টে আছে। সেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কোনো বালাই নেই। মুসল্লিসংখ্যা বেশি হওয়ায় ইমাম, কমিটিকে শাস্তির মুখোমুখি করা সেই পুলিশবাহিনী এ ব্যাপারে নির্বিকার। তারা কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এসব দৃশ্যের ছবি তুলছে বা ভিডিও করছে।

তাছাড়া মসজিদে জমায়েত বন্ধের জন্য সাম্রাজ্যবাদি, লুটেরা ব্রিটিশদের অর্থায়নে পরিচালিত বিবিসি, একাত্তর টিভি, বিডিনিউজসহ অন্যান্য মিডিয়া টকশো, একের পর এক বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করার ক্ষেত্রে বেশ তৎপর থাকলেও বাজার-ঘাটে মানুষের ব্যাপক জনস্রোত বন্ধে তাদের কোনো কোনো বিশেষ প্রতিবেদন বা টকশো করতে দেখা যাচ্ছে না। বরং অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে তারা যেন এ ব্যাপারে মুখে দামি তালা লাগিয়ে বসে আছে।

মসজিদে নামাজ বন্ধে সরকারকে বিবিসির চাপ

এতে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, মসজিদে মানুষের জমায়েত বন্ধের জন্য তারা এতো চিৎকার-চেঁচামেচি, মায়াকান্না করলেও একই কারণে অন্যান্য জনসমাগম বন্ধের জন্য তারা কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে নীরবতা পালন করছে কেন? তাহলে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের যে ধারণা- বিবিসি, একাত্তর, বিডিনিউজসহ অন্যান্য মিডিয়া দেশে একধরনের সাম্প্রদায়িকতা উস্কে দিচ্ছে, ধর্মীয় বিদ্বেষ, প্রপাগাণ্ডা ছড়াচ্ছে- এটা কি সত্যিই?

এ নিয়ে মুসল্লিগণ প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তারা বলছেন, সরকার আমাদেরকে মসজিদে এসে নামাজ পড়তে নিষেধ করেছে, আমরা তা মেনে বাসায় নামাজ পড়ছি। কিন্তু হাট-বাজারে যে মানুষরা ভিড় জমাচ্ছে, আড্ডা, গল্প-গুজবে মেতে উঠছে; এসব বন্ধ করতে সরকার বা প্রশাসন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না বা নিতে পারছে না কেন? নাকি সেখানে করোনার সংক্রমণ ঘটার কোনো সম্ভাবনা নেই? সম্ভাবনা আছে শুধু মসজিদে?

সাংবাদিকতার নিয়মের বাইরে গিয়ে বিবিসি নিজেদের মতামত ফলায়

এ বিষয়ে একজন ইমাম, কলামিস্টের সাথে কথা হয়েছিলো এই প্রতিবেদকের। তিনি জানান,মসজিদে ফরজ নামাজে মাত্র পাঁচজনের উপস্থিতি আমি সমর্থন করি না। আমার বিকল্প মত ও প্রস্তাবনা আছে যা সরকারকে বিস্তারিত জানাতে আগ্রহী। আমি মনে করি, মসজিদ হচ্ছে মানুষের মানসিক ও আত্মিক চিকিৎসাকেন্দ্র এবং একইসঙ্গে ধর্মীয়, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়- সার্বিক সঙ্কটগুলো উত্তরণে ও দিকনির্দেশনা দানে তৎপর। তাই প্রয়োজনে ইমাম পিপিই ব্যবহার করে গণমানুষের খোঁজখবর নেবেন, সেবা করবেন, নামাজ পড়াবেন। একজন ডাক্তার, ফায়ারসার্ভিস কর্মীর মতোই ইমামও ঘরে বসে না থেকে দেশ-জাতির খেদমতে আত্মনিয়োগ করবেন।

তবে আমি এও মনে করি, এই সঙ্কটের সময়ে মসজিদে নামাজ আদায়ে মুসল্লীগণ পাইকারিহারে অনুমতি না পেয়ে বরং তাক্বওয়ার ভিত্তিতে অগ্রাধিকার পাবেন। অর্থাৎ তাক্বওয়াসম্পন্ন সীমিতসংখ্যক মুসল্লি ইমামকর্তৃক অনুমতি পাবেন।

জুনায়েদ আহমেদ : স্টাফ রিপোর্টার

ক্যাটাগরি: প্রধান খবর,  শীর্ষ তিন

ট্যাগ:

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply