শনিবার বিকাল ৪:৪৪, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং

দেশ দর্শন ও অসি-মসির ভূমিকা

ফারহান অাহমেদ ফুয়াদ

অসির ক্ষমতা ধূমকেতুর ন্যায়। এর স্থায়িত্ব খুবই কম সময়ের জন্য। কিন্তু মসির ক্ষমতা সূর্যের ন্যায়। মসি অনন্তকাল ধরে নীরবে মানুষকে সত্য, সুন্দর ও শান্তির পথ দেখিয়ে থাকে।

দেশ দর্শন সম্পর্কে অামি অামার ক্ষুদ্র অভিমত ব্যক্ত করার পূর্বে বলতে চাই, অামি সমৃদ্ধ বাংলা সাহিত্যের ছাত্র ছিলাম না। ব্যবসা ছিলো অামার একাডেমিক বিষয়। ব্যবসার হিসাব-নিকাশ অামার মনকে তৃপ্তি না দিলেও বাংলাসাহিত্য সব সময়ই অামার মনের খোরাক হয়েছে। তাই তো মাঝে মাঝে ডুব দেই সাহিত্য চর্চায় এবং তাতে মন যথেষ্ট প্রশান্তি পায়।

অামার ক্ষুদ্র অভিমত : অাদি কাল থেকেই অসি অার মসির দ্বন্দ্ব চলে অাসছে। অসির অনুসারীরা কস্মিনকালেও মসির শক্তিকে বরদাশত করেনি, করবেও না। বিদ্যমান এই সমাজে মসির পথযাত্রাকে অারো মসৃণ করতে দেশ দর্শনের পথে হাটতে হবে। স্বপ্ন দেখি, দেশ দর্শন সুন্দর একটি সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখবে, যেখানে জ্ঞানের প্রতিযোগিতা থাকবে। কারণ জ্ঞানের প্রতিযোগিতায় পরাজিত হয়েও প্রশান্তি পাওয়া যায়। সাহিত্যিকরা বলে গেছেন, সাহিত্য-রস পাঠক স্বেচ্ছায় পান করে এবং সাহিত্য মানুষের মনকে জাগায়। হ্যাঁ, মানুষের মনকে জাগাতে পারলেই গোটা সমাজ তথা একটি জাতিকে পরিবর্তন করা সম্ভব।

হিত্য কারো মনোরঞ্জন করতে গেলেই সাহিত্য তার মূল উদ্দেশ্য থেকে সরে পড়ে। তাছাড়া সাহিত্য সংবাদপত্রের দায়িত্বও পালন করে না। অামি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, সুস্থ্য সাহিত্য সমাজের দর্পন। তাই বুদ্ধিভিত্তিক বা জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ গঠনে অামাদের প্রত্যেকেরই কলমের নিকট অাশ্রয় নেয়া উচিত।

বিভিন্ন সময় ক্ষমতালিপ্সু মানুষরা অসির বলে নিজের আধিপত্য বিস্তার করতে চেয়েছে। পক্ষান্তরে মনীষীগণ মসির দ্বারা মানবজাতির কল্যাণে অনেক সৃষ্টিশীল কাজ লিপিবদ্ধ করে গেছেন। যা যুগে যুগে মানুষকে শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ দেখাচ্ছে। তাঁদের লিপিবদ্ধ চিন্তাধারা মানব সভ্যতাকে নিয়ে গেছে উৎকর্ষের পথে। আর এই উৎকর্ষের পথ ধরেই মনীষীগণ স্থান করে নিয়েছেন মানুষের অন্তরে। এমনকি মৃত্যুর পরও তাঁরা অমলিন, মানব সভ্যতার ইতিহাসে। কিন্তু যারা অসির বলে বলীয়ান, মৃত্যুর সাথে সাথে তাদের অস্তিত্ব হারিয়ে যায় মহাকালের স্রোতে। শাশ্বত ন্যায়-যুদ্ধে মসিই বিজয়ী হয়।

অসির ক্ষমতা ধূমকেতুর ন্যায়। এর স্থায়িত্ব খুবই কম সময়ের জন্য। কিন্তু মসির ক্ষমতা সূর্যের ন্যায়। মসি অনন্তকাল ধরে নীরবে মানুষকে সত্য, সুন্দর ও শান্তির পথ দেখিয়ে থাকে। অসি তার ধ্বংসলীলার মধ্য দিয়ে মানবজাতিকে দুঃখের সাগরে ভাসায়। আর মসি তার শক্তির সাহায্যে গড়ে তোলে সুন্দর সমাজ এবং মানুষকে নিয়ে যায় সমৃদ্ধির পথে। কিন্তু বর্তমানে জ্ঞানচর্চা তথা সাহিত্যচর্চার প্রতি অামাদের যে অনিহা জন্মেছে, তার দায় অামাদের এ যুগের তথাকথিত মুক্তচিন্তা ব্যক্তি মনোরঞ্জনকারী সাহিত্যের।

সাহিত্য কারো মনোরঞ্জন করতে গেলেই সাহিত্য তার মূল উদ্দেশ্য থেকে সরে পড়ে। তাছাড়া সাহিত্য সংবাদপত্রের দায়িত্বও পালন করে না। অামি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, সুস্থ্য সাহিত্য সমাজের দর্পন। তাই বুদ্ধিভিত্তিক বা জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ গঠনে অামাদের প্রত্যেকেরই কলমের নিকট অাশ্রয় নেয়া উচিত। কারণ অাজো অসির চেয়ে মসি বড় অর্থাৎ Pen is mightier than the sword.

ক্যাটাগরি: মিনি কলাম

ট্যাগ:

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply