পাশেই সদর থানা। সবসময় এরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরেও পড়ছে। তবুও তারা এদের জমায়েত বন্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। এতে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে তাদের সাম্প্রতিক অভিযান।
করোনা সংক্রমণরোধে সরকার সাধারণ ছৃটি ঘোষণা করেছিলো ৪ এপ্রিল পর্যন্ত। এখন তা বাড়িয়ে ৯ এপ্রিল করা হয়েছে। কাচাবাজার, মুদি দোকান, ফার্মেসি ছাড়া প্রায় সবকিছুই বন্ধ। রাস্তাঘাট ফাঁকা। মানুষের আনাগোনা তুলনামূলক অনেক কম। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বাসা থেকে তেমন একটা বের হচ্ছে না। করোনার প্রভাবে প্রকৃতি, সমাজ, মানুষের চলাফেরা, আচার-আচরণ সবকিছুতেই এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। তবে একটা শ্রেণির মধ্যে কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। তারা আগে যেমন ছিলো, এখনো তেমনি আছে। আগে যেভাবে চলেছে, এখনো সেভাবেই চলছে। সেটি “ভিক্ষুক” শ্রেণি। তারা করোনোকে কোনো পাত্তাই দিচ্ছে না এবং এটাকে ধনীদের রোগ মনে করছে। আবার তাদেরকে বিষয়টা কেউ সেভাবে বোঝাচ্ছেও না।
“আমরা বড়লোক না, করোনা রোগ বড়লোকের লাইগা, গরিবের লাইগ্গা না। আর আমাদের কেউ বিদেশও তাহে না যে আমরারও এই রোগ অইবো। আমরা পাগল মানুষ। আমরা এইবাই তাহি।”
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের ফকিরাপুল ও মওলা ভবনের সামনে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অবধি গাদাগাদি করে নারী-পুরুষ ভিক্ষুকদের বসে থাকতে দেখা যায়। যাদের অধিকাংশের শরীরেই থাকে নোংরা কাপড়-চোপড়। কারো কারো চুল থাকে জট লাগানো। ব্রিজ দিয়ে হেঁটে গেলেই তারা একসাথে টাকা চাইতে থাকে। কেউ কোনো ত্রাণ বা খাবার নিয়ে আসলে সাথে সাথেই সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ে। কে কার আগে নিতে পারবে, তা নিয়ে চলে প্রতিযোগিতা। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার সরকারি আদেশ তারা একেবারেই মানছে না। যা হয়তো তারা জানেও না। এদের কারো মধ্যে কোনোভাবে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে পুরো শহরে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে।
এদিকে পাশেই সদর থানা। সবসময় এরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরেও পড়ছে। তবুও তারা এদের জমায়েত বন্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। এতে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে তাদের সাম্প্রতিক অভিযান।
এদের কয়েকজনের সাথে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তারা যা বলছেন, তা অনেকটা ভয়ঙ্কর। প্রতিবেদক জানতে চেয়েছিলেন, দেশে করোনা রোগ এসেছে, আপনারা এভাবে অসতর্কভাবে চলাচল করছেন কেন? এর উত্তরে তারা জানাান, “আমরা বড়লোক না, করোনা রোগ বড়লোকের লাইগা, গরিবের লাইগ্গা না। আর আমাদের কেউ বিদেশও তাহে না যে আমরারও এই রোগ অইবো। আমরা পাগল মানুষ। আমরা এইবাই তাহি।”
সমাজ-বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচিয়ে রাখতে এদের জন্য সরকারিভাবে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা জরুরি। তা না হলে এরা এভাবে চলতে থাকবে। একসময় ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দ্রুতগতিতে সমাজে ছড়িয়ে পড়বে।
জুনায়েদ আহমেদ : স্টাফ রিপোর্টার
ক্যাটাগরি: ব্রাহ্মণবাড়িয়া, শীর্ষ তিন
[sharethis-inline-buttons]