রবিবার সন্ধ্যা ৬:৫১, ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং

ইন্দোনেশিয়ার সাগরে ১৮ ঘণ্টা (পর্ব-১)

১৩১০ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

তখন রাত ১১টার উপরে। ৯ ডিসেম্বর ২০১৭, বৃহস্পতিবার। কয়েকটি প্রাইভেটকারে মোট ৪৮জন বাংলাদেশিকে আনা হলো ইন্দোনেশিয়ার অচেনা এক সাগরপাড়ের জেলে পল্লীতে। চারদিকে অন্ধকার। সাগরে মাছ ধরার নৌকাগুলোতে মিটিমিটি আলো জ্বলছে। কথা বলা বারণ। ফিসফিস করে কথা চলছে সবার মধ্যে। ভয়-আতঙ্ক সবার মনে।

ঘাটে একটি নৌকা বাঁধা আছে। এই নৌকাতেই তুলা হবে সবাইকে। নির্দেশ এলো, যাদের কাছে মোবাইল আছে সব দিয়ে দাও। দেওয়া হলো। একটা করে কালো পলিথিন হাতে দিয়ে বলা হলো যাদের কাছে কাপড়-চোপড় আছে এই ব্যাগে ভরে নাও এবং সাথে থাকা লাগেজ বা ব্যাগ দিয়ে দাও। আমার সাথে ট্রাভেল লগেজ ছিলো, অনিচ্ছা সত্বেও দিতে হলো। এখন হাতে ফকিরের মত এক পোটলা ব্যাগ। তাতে অর্ধেক জিনিসও রাখা সম্ভব হয়নি। বাকিগুলো রাগে ছুঁড়ে ফেললাম। একজন মাঝি ম্লান হেসে কুড়িয়ে নিলো। অনেকে মাত্র একটি গামছা এনেছে দেশ থেকে, আর কিছুই না। কারণ তারা জানে, সাগর পাড়ি দিতে হবে। আর আমার মত বেশির ভাগ লোকই জানে, আমাদের টুরিস্ট ভিসায় মালয়েশিয়ায় ঢোকানো হচ্ছে। চতুর দালালেরা জেনেও কঠিন সাগর পথের কথা কাউকে বলেনি!

মাঝারি আকারের নৌকা। পাটাতনের তক্তা গুলো সরানো হলো। চুপিচুপি নৌকায় তোলা হচ্ছে। প্রায় ১৫/২০ জনকে নৌকার পাটাতনের নিচে শোয়ানো হলো। একজনের পা অপরপাশের জনের দু পায়ের মাঝে। চাপাচাপি করে শোয়ানো হলো। তাদের উপর পাটাতন পাতা হলো, একটা ফাঁকফাঁক করে যেন বাতাস ডুকতে পারে। এবার সেই পাটাতনের উপর বাকি ২৮/৩০ জনকে বসানো হলো জড়োসড়ো করে।

নৌকা বোঝাই হয়ে গেলো। নির্দেশ দিলো, উপরে যারা বসে আছো, সবাই শুয়ে যাও। শোয়ার মত তো জায়গা নেই। দ্রুত একজন অন্যজনের উপর শুয়ে পরল। এবার বড় একটা থ্রিপাল দিয়ে ডেকে দেওয়া হলো। এই ত্রিপালের নিচে ৪৮ জন মানুষ আর তাদের স্বপ্ন ঢাকা পড়েছে মৃত্যুভয়ে।

সময় তখন রাত ১২ টা। নৌকা ছেড়ে দিলো। একজন মাঝি এবং ২জন তার সহকারী। দৈত্তের মত হুংকার দিয়ে ইঞ্জিন চালো হলো। আমার ভাগ্য ওদের চেয়ে ভালো বলতে হবে। কারণ আমি নৌকার এক পাশে ছিলাম। নাক উঁচিয়ে বাতাস নিতে পারছিলাম। ১০/১৫ মিনিট নৌকা চলার পর পাটাতনের নিচ থেকে আর্তনাদ শুনা গেলো। কয়েক জন বমি করছে। গরমে আর বাতাসের স্বল্পতায় দম বন্ধ হয়ে আসছে তাদের।

প্রায় আধা ঘণ্টা পর একজনের জোরে চীৎকার শোনা গেলো। অজানা শংকায় বুকটা কেঁপে উঠলো! কেউ কি মারা গেছে! যদি মারা যায় তাহলে তার কী হবে। আগেই একজন বলেছিল, কেউ মারা গেলে সবার সামনে চাকু দিয়ে পেট কেটে সাগরে ফেলে দেওয়া হয়! তবে কি তাই হবে এখন! ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে। চলবে…

 

Some text

ক্যাটাগরি: আত্মজীবনী

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply

আমি প্রবাসী অ্যাপস দিয়ে ভ্যাকসিন…

লঞ্চে যৌন হয়রানি