বাজারে শহরবাসীদের গরু নিয়ে যাতায়াতের ভালো কোনো ব্যবস্থা নেই। একদিক দিকে যেতে ক্রেতাকে কমপক্ষে দুই থেকে আড়াই কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে বাজারে পৌঁছাতে হবে। এ রাস্তা মাটির, মাত্র পাঁচফুট প্রশস্ত। বৃষ্টি হলে কেবল কাদাপানির খেলা।
কোরবানির ঈদ উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে আগে পশু বিক্রির একমাত্র হাট বসত ট্যাংকের পাড়-সংলগ্ন বোর্ডিং মাঠে। পৌরসভার পরিবেশ দূষিত হওয়ার অজুহাতে গত দুবছর ধরে তা বসছে পুনিয়াউট মেইন রোডের পাশে। কিন্তু এবার বসছে ডিসি অফিসের প্রজেক্টের জন্য নির্ধারিত শহর থেকে অনেকটা দূরে ছয়বাড়িয়া নামক একটি জায়গায়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, উক্ত বাজারে শহরবাসীদের গরু নিয়ে যাতায়াতের ভালো কোনো ব্যবস্থা নেই। একদিক দিকে যেতে ক্রেতাকে কমপক্ষে দুই থেকে আড়াই কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে বাজারে পৌঁছাতে হবে। এ রাস্তা মাটির, মাত্র পাঁচফুট প্রশস্ত। বৃষ্টি হলে কেবল কাদাপানির খেলা। মেইন রোড দিয়ে বাজারের লোকজন চলাচল করলে বাড়ি ফেরত যাত্রীদের যানবাহন চলাচলেও প্রচণ্ডরকম অসুবিধা হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। একাধিক দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা তো আছেই। ক্রেতাদের কষ্টের সীমা থাকবে না। তাই তাদের বাধ্য হয়ে ব্যবহার করতে হবে দক্ষিণ পৈরতলা হতে গোকর্ণ ঘাট যাওয়ার একমাত্র রোডটি।
এদিকের রাস্তার প্রশস্ততা বড়জোড় দশ ফুট। একটি ডিস্ট্রিক্ট ট্রাক প্রবেশ করলে পুরো রাস্তা ব্লক হয়ে যাবে। বাজারের নির্ধারিত জায়গা থেকে এই রোডে উঠার মতো ভালো কোনো ব্যবস্থাও নেই। যে রাস্তা আছে তা প্রশস্ত নয়। একটি অস্থায়ী প্রশস্ত রাস্তার প্রয়োজন। বাজার কমিটি বালু দিয়ে একটি প্রশস্ত অস্থায়ী রাস্তা নির্মাণ করেছে। যা সড়কটি হতে খাড়া হওয়ায় লোকজনের চলাচলে প্রচুর অসুবিধা হয়। গরু নিয়ে নামা কিংবা উঠা খবুই কষ্টকর। এমন রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলাচল করা প্রায় অসম্ভ। এরই মধ্যে গতকাল রাতে মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। এতে ক্রেতা-বিক্রেতার দুর্ভোগের অন্ত থাকবে না। এবার কোরবানির পশুর হাট নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের অধিবাসীদের মধ্যে পৌরসভার প্রতি চরম অসন্তুষ্টি ও সমালোচনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
বাজারে গিয়ে কথা বলে জানা যায়, ৭৮ লক্ষ টাকা দিয়ে টেন্ডার নিয়েছে বিভিন্ন ওয়ার্ডের কমিশনররা মিলে। যে কয়দিন বাজার বসবে সে কয়দিনের জন্য প্রত্যেক গরু বিক্রেতাকে ৫-৭ হাজার টাকা করে বাজার কমিটিকে দিতে হবে। বাজারে ক্রেতাদের সুবিধার জন্য রয়েছে খাবার হোটেল। এ অস্থায়ী দোকানগুলোকেও গুণতে হবে হাজারপাঁচেক টাকা করে। ভাড়া ও খরচ তুলতে গিয়ে ক্রেতাদের কাছে চড়া দামে জিনিস বিক্রি করতে হবে তাদের। তাছাড়া ক্রেতাদের বাজারে রওয়ানা বাবদ প্রতি লাখে দুই হাজার টাকা করে দিতে হবে।
স্থানীয় লোকজন জানায়, এ বছর বাজার এখানে হওয়ায় ক্রেতাদের গরু নিতে কষ্ট হবে। এমনকি তাদের পিকআপ বা অন্য কোনো যানবাহন দিয়ে গরু বাড়ি নিয়ে যেতে হতে পারে। ড্রাইভাররাও সে সুযোগ হাতছাড়া করবে না। ভাড়া যেখানে তিনশ টাকা দিলেই বেশি হয়, সেখানে গাড়ি ভাড়া ক্রেতাদের হাজার টাকা গুণতে হবে। তারা আরও বলছে, পৌরসভা কেন এখানে বাজার বসানোর সিদ্ধান্ত নিল তা আমাদের মাথায় ধরে না? কোন্ দেশে বাস করি আমরা? যে দেশে ধর্মীয় উৎসব পর্যন্ত ব্যবসায়ী, রাজনীতিক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের হাত থেকে রক্ষা জনগণ পায় না। তারা যেন ব্যবসা ও ধান্ধার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে।
সরকারের শহর উন্নয়ন পরিকল্পকরা কী তবে ব্যবসায়ীদের সাথে জড়িত? যেজন্য পুরো শহরের ফাঁকা জায়গুলো ভরাট করে সরকারি অফিস আদালত গড়ে তাকে হিজিবিজি করে তুলছে। রাষ্ট্রীয় কোনো উৎসব, মিটিং, মিছিল করতে হয় প্রধান সড়কের উপর। এমনকি কোরবানির পশুর হাটও!
ক্যাটাগরি: অপরাধ-দুর্নীতি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
[sharethis-inline-buttons]