দল বেঁধে ফিরে আসছে পরিযায়ী পাখির দল। সভ্যতা থেকে দূরে সরে যাওয়া নিরীহ ডলফিনের ঝাঁক ফিরে আসছে মানুষের কাছে। রাশ পড়েছে বিশ্ব ঊষ্ণায়নের হারেও।
মন্দেরও কিছু ভাল দিক থাকে। করোনাপ্রভাবে দীর্ঘমেয়াদী লকডাউনে হু হু করে কমছে বায়ুদূষণের মাত্রা। সেরে উঠছে ওজন স্তরের ক্ষত। চীন, ইটালি বা ব্রিটেনের আকাশে অবিশ্বাস্য গতিতে কমছে নাট্রোজেন ডাই অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড আর কার্বন মনোক্সাইডের মাত্রা।
পরিবেশবিদদের হতবাক করে নিউইয়র্কসহ প্রায় সারাবিশ্বের আকাশে দূষণের মাত্রা কমেছে ৫০% এরও বেশী। স্রেফ উপগ্রহ ছবিতে নয়, ঘরবন্দী ইউরোপের মানুষ খালি চোখেও দেখতে পাচ্ছে ঝকঝকে নির্মল আকাশ! স্মরণকালের মধ্যে যা কখনো দেখেনি তারা।
দল বেঁধে ফিরে আসছে পরিযায়ী পাখির দল। সভ্যতা থেকে দূরে সরে যাওয়া নিরীহ ডলফিনের ঝাঁক ফিরে আসছে মানুষের কাছে। রাশ পড়েছে বিশ্ব ঊষ্ণায়নের হারেও।
ক্ষুদ্র এক ভাইরাস গোটা দুনিয়ার ভোল পাল্টে দিচ্ছে। পাল্টে দিচ্ছে আমাদের মানসিকতা, আমাদের জীবনযাত্রা। একদিকে সীমান্ত মুছে গিয়ে গোটা পৃথিবী দাঁড়িয়েছে এক আকাশের নীচে। অজানা অচেনা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছে একজোট হয়ে। এরপর ঘরবন্দী হয়ে যাওয়া মানুষ প্রাথমিক ধাক্কাটুকু সামলে হাত বাড়িয়ে দেবে প্রতিবেশীর দিকে। চারপাশের পরিবেশ নিয়ে ছিনিমিনি খেলার আগে ভাববে আত্মীয়, বন্ধু, পড়শীদের কথা।
কমবে ক্যানসার, কিডনী, শ্বাসযন্ত্র ও অন্যান্য বায়ুদূষণজনিত রোগ। নতুন পৃথিবীতে নতুনভাবে নামবে মানুষ; ভাঙাচোরা অর্থনীতি, থমকে যাওয়া শিল্প, আমূল বদলে যাওয়া জীবনকে নতুন করে বাঁধতে, গড়তে।
করোনা ঢেউ স্রেফ এই এক-দু’মাসের গল্প নয়। একটা ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়ে বাজারে আসতে সময় নেবে কমপক্ষে ১২ থেকে ১৬ মাস। এরমধ্যে পৃথিবীর অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ আক্রান্ত হবে দফায় দফায়, যতদিন ভ্যাকসিন না আসবে।
কী অদ্ভুত না? আমরা আমাদের ইমিউন সিস্টেমের কথা জানি। কিন্তু এই পৃথিবীরও যে একটা ইমিউন সিস্টেম আছে, তা কি আমরা ভেবেছি কখনো?
আরো পড়ুন>> আমরা আত্মপরিচয় ভোলা জাতি
যেন অতিবিরক্ত পৃথিবী আর সইতে না পেরে সেই সিস্টেমকে চালু করে দিয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে, আগামী একবছরে করোনা-বিপর্যস্ত মানুষ, দফায় দফায় ঘরবন্দী থাকা মানুষ পৃথিবীর দূষণ কমিয়ে ফেলবে প্রায় ৪৫% থেকে ৬৫% পর্যন্ত। পরিবেশ ফিরে যাবে প্রায় ৫০০ বছর আগের বিশুদ্ধতায়। মাসছয়েকের মধ্যে কমতে থাকবে হিমবাহের গলন, বন্ধ হয়ে যাবে বছরখানেকের মধ্যে।
কমবে ক্যানসার, কিডনী, শ্বাসযন্ত্র ও অন্যান্য বায়ুদূষণজনিত রোগ। নতুন পৃথিবীতে নতুনভাবে নামবে মানুষ; ভাঙাচোরা অর্থনীতি, থমকে যাওয়া শিল্প, আমূল বদলে যাওয়া জীবনকে নতুন করে বাঁধতে, গড়তে। ধূলো-ধোঁয়া-অন্ধকার পেরিয়ে সেই নতুন পৃথিবীর দিকে যাচ্ছে এখন থেকেই। পৃথিবীর জীববৈচিত্রের জন্য মানুষ একমাত্র নিয়ামক নয়- এই কথাটা আমরা ভুলে গেলে প্রকৃতি তার নিজের নিয়মে মনে করিয়ে দেবে।
মুঈদ উর-রহমান জনি : কলামিস্ট
ক্যাটাগরি: প্রধান কলাম
[sharethis-inline-buttons]
ভালো হইছে ভাই।