বৃহস্পতিবার রাত ১:১০, ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন একটি কালো আইন

দেশ দর্শন প্রতিবেদক

কোনো সাংবাদিক-সম্পাদককে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারের পুলিশি ক্ষমতাকে আধুনিক যুগের সবচেয়ে জঘন্যতা, অন্ধকার ও মূর্খতার সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। আর এর মাইলফলক বর্তমান বাংলাদেশ সরকার।

তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭ ও ৬৬সহ মোট ৫টি ধারা বিলুপ্ত করে গত ১৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে সরকারদলীয় সদস্যদের কন্ঠভোটে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮’ পাস হয়। এ আইনটি প্রস্তাবের পর গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন মহল তীব্র সমালোচনায় ফেটে পড়েন। তাদের মতে, ৫৭ ধারায় অপরাধের ধরনগুলো একসঙ্গে উল্লেখ ছিল, নতুন আইনে শুধুমাত্র সেগুলো বিভিন্ন ধারায় ভাগ করে দেয়া হয়েছে। এ নতুন আইনে সাংবাদিকরা বেশির ভাগ হয়রানির শিকার হতে পারেন বলে তারা আশঙ্কা করছেন। এরই মধ্যে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর বিলটি আইনে কার্যকর হয়েছে।

এ আইনের ধারাগুলো ৫৭ ধারার চেয়েও ভয়ঙ্কর ও নিপীড়নমূলক। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ১৭, ১৯, ২১, ২২, ২৩, ২৪, ২৬, ২৭, ২৮, ৩০, ৩২, ৩৩ ও ৩৪ ধারাকে জামিন অযোগ্য অপরাধ হিসেবে দেখানো হয়েছে। তাই নতুন এ আইনটির বিশেষ কয়েকটি ধারা নিয়ে সব মহলে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের উল্লেখিত ১৪টি ধারার সারসংক্ষেপ বিশ্লেষণ করে বোঝা যাচ্ছে, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ পরিপন্থী কোনো কাজ করলে, ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে কাউকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করলে, কারো মানহানি করলে, তথ্য চুরি করলে, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটালে, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করলে, কম্পিউটার হ্যাক করেন প্রোগ্রাম নিয়ে গেলে, কারো ছবি বিকৃতি করলে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনুমতি ছাড়া অনলাইনে লেনদেন করলে, ইন্টারনেটে শিশু পর্নোগ্রাফি প্রদর্শন ইত্যাদি অপরাধ করলে অপরাধের ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন মেয়াদের সাজা ও জরিমানা হতে পারে।

কিন্তু প্রকৃত বিষয়টি হচ্ছে, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার’ ব্যাখ্যা ও অপব্যাখ্যা পার্থক্যের বিষয়টি এখানে সুস্পষ্ট নয়। তাই ক্ষমতাসীন দল যে কোনো ব্যক্তির স্বাধীন মতামত ও কণ্ঠরোধে এটি ব্যবহার করার সুযোগ থাকছে। তাছাড়া সরকার চাইলে এসব ধারা-উপধারার যে কোনোটি যে কোনো ব্যক্তির উপর যে কোনো সময় প্রয়োগ করার অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করে বিধায় প্রকৃত চিন্তা ও মতামত বের হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়। সুতরাং এতে সামগ্রিক পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে ও বিশৃঙ্খল হবে এবং সাংবাদিকতার চরম অবনতি ঘটবে বলেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বুদ্ধিজীবী-চিন্তাশীল মহল মনে করছেন। বিশেষ করে তারা বলছেন, সৎ, সাহসী ও র্নিভীক সাংবাদিকদের জন্য এ আইনটি আরো বেশি প্রতিবন্ধ্রকতার সৃষ্টি করবে।

অন্যদিকে সবাই বলছেন এটি সরাসরি সংবিধানপরিপন্থী। কেননা সংবিধানে প্রত্যেক নাগরিকের জন্মগত অধিকার ও স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেয়া থাকে। তা না হলে সেটা সংবিধান হিসাবেও পরিগণিত হবে না। বাংলাদেশের সংবিধানেও ব্যক্তির মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা স্বীকৃত। কিন্তু এ আইন সাধারণ নাগরিকদের সাধারণ স্বাধীনতা ও অধিকার দিলেও প্রকৃত সাংবাদিকদের সাধারণ অধিকার ও স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে হরণ করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, যেসব সাংবাদিক ও সম্পাদক পুলিশ প্রশাসন এবং সরকারের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখে, তারা যত অসৎ, অদক্ষ ও অযোগ্যই হোক, তাদের ক্ষেত্রে কোনো আইনই প্রয়োগ হয় না। বিপরীতে সরকার ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে যোগিাযোগহীন কোনো সাংবাদিক ও সম্পাদককে প্রতিমুহূর্তে আতঙ্কে থাকতে হবে। এই আতঙ্ক নিয়ে কোনো পত্রিকা সম্পাদনা, পরিচালনা বা নিউজ প্রতিবেদন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

কোনো সাংবাদিক-সম্পাদককে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারের পুলিশি ক্ষমতাকে আধুনিক যুগের সবচেয়ে জঘন্যতা, অন্ধকার ও মূর্খতার সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। আর এর মাইলফলক বর্তমান বাংলাদেশ সরকার। সুতরাং যে কোনো অপরাধ মোকাবেলার সুস্থ, স্বাভাবিক ও গ্রহণযোগ্য আইন এবং প্রয়োগের আহ্বান জানাচ্ছে দেশ বিদেশের বিভিন্ন নাগরিক সমাজ। কেউ কেউ এটি গণবিস্ফোরণের কারণ হতে পারে বলেও উল্লেখ করছেন।

ক্যাটাগরি: প্রধান খবর

ট্যাগ:

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply