শুক্রবার সন্ধ্যা ৬:১৫, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং

ধর্ষকের দর্শন ও স্রষ্টার ভয়

মাজহার জুয়েল

নতুন বছরের প্রথম পনের দিনেই গোটা তিরিশেক ধর্ষণের খবর এসে গেছে! আরো কত জানি অগোচরে রয়ে গেছে! এমন কোনো দিন নেই, যেদিন ধর্ষণের খবর আসছে না! ঘরে-বাইরে সর্বত্রই নারী আজ নিগ্রহের শিকার। কোথাও নিরাপত্তা নেই। প্রশ্ন হচ্ছে, এই নিপীড়ন কি থামবে না?

মনে মনে প্রায় প্রতিটি পুরুষই ধর্ষক- কোনো ভিকটিম যদি এমন দাবি করেই ফেলেন, তাহলে অনেকেই ক্ষেপে যাবেন সন্দেহ নেই। অথচ ক্ষেপে যাবার আগে কিছু বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে। পরিপূর্ণ যৌবনা কোনো পরনারীকে দেখে যদি কোনো পুরুষ আকৃষ্ট না হয় এবং সেই আকর্ষণ থেকে যদি লোভের সঞ্চার না হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে সেই পুরুষটি ইন্দ্রিয় শৈথিল্যে ভুগছেন। জরুরিভিত্তিতে তার ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
নিজেকে প্রগতিশীল ভাবতে পছন্দ করেন- এমন অনেকেই শয়তানকে রূপক অর্থে চেনেন; বাস্তবে শয়তানের অস্তিত্ব স্বীকার করেন না। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের ভিতরেই একটি করে অমানুষ বাস করে, যার অপর নাম শয়তান; এ কথা বললে বোধকরি খুব বাড়াবাড়ি হবে না। খেয়াল করে দেখবেন, দুনিয়ার সব কুকর্মগুলোই মানুষকে বেশি আকৃষ্ট করে। অর্থাৎ মন্দ উৎপাদনের উর্বর ক্ষেত্র হলো মানুষের অন্তর; যদি সেখানে চাষাবাদের রমরমা আয়োজন করে স্বয়ং শয়তান!

এই কিছুদিন আগেও একজন ডিসির কুকর্মের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সেই ভিডিও দেখার জন্য মানুষ হুমড়ি খেয়ে নেট দুনিয়া চষে বেড়িয়েছে! যারা এই হুড়োহুড়িতে অংশ নিয়েছে, তারা আসলে কী দেখতে চেয়েছে? তারা কি শুধুুই অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে চেয়েছে, নাকি মজাও লুটতে চেয়েছে? বস্তুতপক্ষে মজা লুটেরাদের সংখ্যাই বেশি। অন্যদিকে এই যে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ডিসি, ফেনি মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল; তাদের নিজেরও তো একটা দেখার দৃষ্টি আছে। ধর্ষকের দর্শন! তারা কি ধর্ষণবিরোধী কোনো কথা কোনোকালে বলেননি? এ রকম বহু প্রভাবশালী দুর্বৃত্তের দর্শন আমরা জানি। আমাদের অবস্থা অনেকটা এ রকম, ‘অন্যায়ের সাথে কোনো আপোষ নয়’ বলা মানুষরাই বড় অন্যায়টা করি!

যথাযথ আইন এবং তার আক্ষরিক প্রয়োগ, ধর্মীয় অনুশাসন, সর্বোপরি সৃষ্টিকর্তার ভয়ই হতে পারে এই অনাচার থেকে পরিত্রাণের সর্বোত্তম উপায়। যিনি মানুষের অন্তরের আর্কিটেক্ট, যিনি এর ডিজাইন করেছেন, তিনিই বলে দিয়েছেন সে কথা। বিশ্বাস করুন, সব রকম মন্দ থেকে নিজেকে নিবৃত্ত করার অন্যতম সেরা উপায় হচ্ছে, এই মহাপরাক্রমশালী সত্তার ভয়। এর থেকে ভালো উপায় আর কিছু নেই।

নতুন বছরের প্রথম পনের দিনেই গোটা তিরিশেক ধর্ষণের খবর এসে গেছে! আরো কত জানি অগোচরে রয়ে গেছে! এমন কোনো দিন নেই, যেদিন ধর্ষণের খবর আসছে না! ঘরে-বাইরে সর্বত্রই নারী আজ নিগ্রহের শিকার। কোথাও নিরাপত্তা নেই। প্রশ্ন হচ্ছে, এই নিপীড়ন কি থামবে না?

সৃষ্টিরহস্য বড় অদ্ভুত! মানুষ অন্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে সিদ্ধহস্ত, কিন্তু নিজের মনকে নিজের অধিকারে বা নিয়ন্ত্রণে নিতে পারে না শতভাগ। সেটা পারলে, মানুষ ভুল-ত্রুটির ঊর্ধে্ব থাকতো এবং ভুলের পরে অনুশোচনায় ভুগতো না। কুপ্রবৃত্তি বা এই যে মজা লুটার আকাঙ্ক্ষা মানুষের অন্তরে তৈরি হয়, এটা খুব স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এটা অন্যায় নয়; অন্যায় হচ্ছে, এই দুর্নিবার ইচ্ছাকে দমন করতে না পারা। অনেক ক্ষেত্রে সামাজিক, পারিবারিক দায়বদ্ধতা এবং ব্যক্তিগত ইমেজ রক্ষার্থে অনেকেই এহেন কুকর্ম থেকে বিরত থাকে বটে, কিন্তু সেটা সর্বসাধারণের উদ্বেগকে প্রশমিত করার জন্য যথেষ্ট নয়। তাহলে প্রতিকার কী?

যথাযথ আইন এবং তার আক্ষরিক প্রয়োগ, ধর্মীয় অনুশাসন, সর্বোপরি সৃষ্টিকর্তার ভয়ই হতে পারে এই অনাচার থেকে পরিত্রাণের সর্বোত্তম উপায়। যিনি মানুষের অন্তরের আর্কিটেক্ট, যিনি এর ডিজাইন করেছেন, তিনিই বলে দিয়েছেন সে কথা। বিশ্বাস করুন, সব রকম মন্দ থেকে নিজেকে নিবৃত্ত করার অন্যতম সেরা উপায় হচ্ছে, এই মহাপরাক্রমশালী সত্তার ভয়। এর থেকে ভালো উপায় আর কিছু নেই।

মাজহার জুয়েল : টেলিভিশনকর্মী, চিন্ত্যক

ক্যাটাগরি: মিনি কলাম

ট্যাগ:

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply