মঙ্গলবার রাত ১:৪৮, ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং

রাস্তায় ট্রেনের বগি দীর্ঘদিন, জনদুর্ভোগ সীমাহীন

শরীফ উদ্দীন রনি

আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে ট্রেনের চাকা, স্লিপার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি। গত দেড় মাস ধরে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের কষ্টের সীমা নেই

 

ছবি, শেখ মুবাশ্বির : গত ৩০ জুন ঢাকা-সিলেট-চট্টগ্রাম রেললাইনের একটি ডিজেলবাহী ট্রেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাশহরের শিরাইলকান্দি-কলেজপাড়া এলাকায় লাইনচ্যুত হয়। পেছনের নয়টি বগি দুপাশে মুহুর্মুহু উল্টে পড়ে। এতে ডাবল লাইনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়া ছাড়াও প্রচুর ডিজেল ছড়িয়ে পড়ায় আশপাশের খাল, মাছ চাষের ডোবা ও রাস্তা দূষিত হয়ে যায়। প্রচুর ডিজেল তিতাস নদীতেও গড়িয়ে যায় এবং নদীর পানি ব্যাপকভাবে দূষিত করে। দীর্ঘদিন নদীর পানিতে মানুষের গোসল ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজ করতে অসুবিধা হয়েছে। তেলের গন্ধে এলাকার লোকজন অস্বস্তিতে পড়ে। পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলে স্থানীয় লোকজন এর উদ্ধার কাজ দ্রুত আশা করেছিল।

 

 

এদিকে তৎক্ষণাৎ খবর পেয়ে ঢাকা ও আখাউড়া থেকে দুটি উদ্ধারকারী ট্রেন ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধারকাজ শুরু করলেও আজো চারটি বগি বিশ্রিভাবে পড়ে আছে শিমরাইলকান্দি-কলেজপাড়ার জন-গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায়। আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে ট্রেনের চাকা, স্লিপার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি। গত দেড় মাস ধরে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের কষ্টের সীমা নেই। এগুলো তুলে নেবার কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ছে না। স্থানীয় লোকজন এ রাস্তাটি ব্যবহার করতে পারছে না। তাদের দীর্ঘপথ ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে শহরের প্রধান সড়কগুলোর সাথে। উদ্ধার করার মতো কোনো ব্যবস্থা না দেখায় লোকজনের প্রশ্ন, ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে’ তবে কোনন দিক দিয়ে উন্নত হল? এতে সরকারেরও বহু টাকার ক্ষতি হচ্ছে।

 

সারাদেশের সড়ক ও রেলপথে যোগাযোগের অন্যতম প্রধান জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া। সীমান্ত এলাকা হওয়ায়ও এর গুরুত্ব অনেক। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-নোয়াখালীসহ পূর্বাঞ্চলীয় জোনে সরাসরি রেল যোগাযোগ এ লাইন দিয়েই গড়ে ওঠেছে। অথচ রেললাইনের স্লিপারগুলো ভাঙ্গাচোড়া অবস্থায় এখনো পড়ে আছে। লাইনগুলো বাঁকা ও উঁচু-নিচু হয়ে আছে। এ রকম ঝুঁকিপূর্ণ রেল লাইন দিয়েই প্রতিদিন ঢাকা-চট্টগ্রম-সিলেট-নোয়াখালীর ট্রেনগুলো আসা-যাওয়া করছে। যে কোনো মুহূর্তে লাইনের পাতগুলো বেঁকে গিয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। শত শত যাত্রী আহত-নিহত হতে পারে। কিন্তু কর্তৃকপক্ষের কোনোই নজর নেই এদিকে। দেশের প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম- রেলপথের এই নাজেহাল ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা দেখে উপলব্ধি করা যায়, ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে’ আসলেই কতটা ‘উন্নত’ ও ‘যুগোপযোগী’ হয়েছে!

 

 

অন্যদিকে সেই রেল দুর্ঘটনার কারণ আজো জানা যায়নি। এলাকার লোকজন বলছেন ড্রাইভারের দোষ, তিনি চলতি গাড়ি হঠাৎ স্লো করে ফেলায় তেলের বগিগুলো তাল রাখতে পারেনি। একে একে যখন নয়টি বগি পড়ে যায়, আশপাশের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যেন ভূমিকম্প হয়, বিল্ডিংগুলো কেঁপে কেঁপে উঠে। এটি যাত্রীবাহী ট্রেন হলে প্রচুর মানুষ হতাহত হতো। তারপরও কম ক্ষতি হয়নি। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে নিশ্চয় এর ভর্তুকি দিতে হবে। সরকার কি এর কারণ অনুসন্ধান করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে?

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নিরাপত্তা বাহিনীর তিনজন লোক এখনো দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা পাহারা দিচ্ছে, যেন তেল ও অন্যকোনো যন্ত্রপাতি চুরি না যায়! অথচ এমনিতেই জিনিসগুলো নষ্ট হচ্ছে, পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, এলাকার মানুষদের ভোগান্তি বাড়ছে। তাছাড়া দুর্ঘটনার তৃতীয় দিনই পাহারারত নিরাপত্তা-বাহিনী লোকজনকে তেল নিয়ে যাবার অনুমতি দিয়েছিল। তখন বালতি ও ড্রাম ভরে ভরে তেল নিতে আশপাশের দশগ্রামে হিড়িক পড়ে।

কেন এসব তেল/ডিজেল নিয়ে নিতে অনুমতি দিয়েছিল এবং আজো কেন সেই রেললাইন ও বগিগুলোর এ অবস্থা তা নিয়ে জনগণ বলাবলি করছে, কোনোকিছু পড়ে গেলে টেনে তোলবার ক্ষমতা সরকারের নেই। তারা বলছে, শুধু ট্রেন নয়, সবকিছুই আজ যেন ভেঙ্গে পড়ছে।

ক্যাটাগরি: অপরাধ-দুর্নীতি,  ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ট্যাগ:

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply