রবিবার সকাল ৯:০২, ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং

কসবা উপজেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য: এস এম শাহনূর

৮৫৯ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

কসবা একটি ফরাসি শব্দ। কসবা শব্দটির আভিধানিক অর্থ জনপদ অথবা উপশহর।ভারতবর্ষে মুসলিম শাসনামলে এ নামকরণ করা হয়।অনেক ঐতিহাসিকের মতে কসবার আদি নাম ছিল কৈলাগড়।কিল্লা শব্দের অর্থ সেনানিবাস যা সামান্য পরিবর্তিত হয়ে হয়েছে কৈলা।গড় অর্থ দুর্গ।মুসলমানদের শাসনামলে এ কসবা ছিল একটি কিল্লা বা সেনানিবাস।আর এভাবেই কৈলাগড় থেকে কসবার উৎপত্তি।ভারতবর্ষে মুসলমান শাসনামলে ১৩৩৮ খ্রিস্টাব্দে আলাউদ্দিন হোসেন শাহ রেল স্টেশনের পশ্চিম পাশে কৈলাগড় নামে একটি দূর্গ নির্মাণ করেছিলেন। ঐ দূর্গের আশে পাশে প্রথম দিকে জনবসতি এবং পরবর্তীতে আস্তে আস্তে ছোট শহর কসবা গড়ে ওঠে।”কৈলাগড় নামের পরে এতদ্ অঞ্চলের নাম রাখা হয় নূরনগর।১৬১৮ সালে মোঘল সেনাপতি মির্জা নূরউল্লাহ খাঁ (বেগ)উদয়পুর রাজধানী দখল করে ত্রিপুরিদের বিতাড়িত করেন।১৬২৩ সালে তার নামে নূরনগর পরগণা নামকরণ করেন।’তদানিন্তন মোঘল শাসনকর্তা হিউং,বিউং ও কৈলাগড় নামক প্রদেশত্রয়কে সম্মিলিত করে স্বীয় নামানুসারে ‘নূরনগর পরগণা’ গঠন করেন।” (সুত্র: রাজমালা- কৈলাসচন্দ্র সিংহ, পারুল প্রকাশনী-২০০৯,পৃ.৪৪১)।

ত্রিপুরা রাজ্যের ইতিহাস গ্রন্থ “রাজমালা”থেকে জানা গেছে কোন এক সময়ে এই কসবা ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী ছিল।তাই সোনালী ইতিহাসের উজ্জ্বল সাক্ষী কসবা উপজেলার অধিবাসী হিসেবে আমরা সত্যিই গর্বিত।

➤এক নজরে কসবা উপজেলা :
১। আয়তনঃ ২০৯.৭৬০ বর্গ কিলোমিটার
২। লোক সংখ্যাঃ ৩,১৯,২২১ জন
ক) পুরম্নষঃ ১,৫১,৮৫২ জন
খ) মহিলাঃ ১,৬৭,৩৬৯ জন
৩। প্রতি বর্গ কিলোমিটারে লোকসংখ্যাঃ ১৫২১ জন
৪। ইউনিয়নের সংখ্যাঃ১০টি
৫। পৌরসভার সংখ্যাঃ০১টি
৬। গ্রামের সংখ্যাঃ২৩৭টি
৭। মৌজার সংখ্যাঃ১৫২টি
৮। সীমান্ত এলাকার আয়তনঃ ১৯ কিলোমিটার
৯। রেল লাইনের দৈর্ঘ্যঃ ১৮কিঃমিটার
১০। রেল স্টেশনের সংখ্যাঃ ৩ টি(মন্দবাগ,কসবা, ইমামবাড়ী)
১১। মোট ভূমির পরিমাঃ ৫১৮৭০ একর
১২। মোট খাস জমিঃ ২,৩৪৯.২২ একর
১৩। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা সুবিধাভোগীঃ ৮৯০ জন
১৪। পোস্টাল কোডঃ ৩৪৬০
১৫। শিক্ষার হার ৫০.৭% এবং সাক্ষরতার হার ৭৫%
( ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী)

★কসবার সোনালী ইতিহাসঃ
কসবা ছিল সুলতানি আমলের উপবিভাগীয় প্রশাসনিক কেন্দ্র। প্রশাসনিক উপ-বিভাগগুলোর মধ্যে ইকলিম, ইকতা, মুকতা, ইরতা, সোয়ার,ও কসবা নামের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত মোট ৩৭টি কসবার সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। কসবাগুলির অধিকাংশই বর্তমান জেলা শহরের মধ্যে বা অদুরে অবস্থিত ছিল। একটি কসবার অবস্থান থেকে অন্যটির দূরত্ব ও একটি বিষয়। এসব নামের সঙ্গে অনেক রাজকীয় আমলার পদবির সংযুক্তি লক্ষ করা যায়, যেমনঃ কাজূর কসবা, কতোয়ালের কসবা, শহর কসবা, নগর কসবা ইত্যাদি।
কসবাগুলোর অবস্থান, একটির সঙ্গে অপরটির দূরত্ব, রাষ্ট্রীয় কিংবা প্রাদেশিক রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থা এবং নামের সঙ্গে যুক্ত রাজকীয় পদবি ও অন্যান্য বিষয় বিচেনা করে কসবাকে সুলতানি আমলের একটি উপ-বিভাগীয় প্রশাসন কেন্দ্র বলা যেতে পারে।

সুলতানি আমলের ‘কসবা’ কে জেলা হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। কসবার দায়িত্বে ছিলেন একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা, একজন কাজি ও একজন কতোয়ালী। মূঘল আমলের অধিকাংশ কসবাই পূর্বের গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে।
কয়েকটি কসবার নাম নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ
মুন্সিগঞ্জ জেলার কাজীর কসবা ও নগর কসবা
* টাঙ্গাইল জেলার কসবা আটিয়া
* ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলা,
* লক্ষ্মীপুর জেলার শহর কসবা
* বৃহত্তর রংপুরের কসবা নূরপুর
* দিনাজপুরের কসবা
* সাগরপুর কসবা
* খুলনার পয়গ্রাম কসবা
* বৃহত্তর রাজশাহী জেলার চোয়ারা কসবা
* আমর’ল কসবা
* কিসমত কসবা ও কসবা মান্দা
* গৌরনদী উপজেলার বড় কসবা
* লাখেরাজ কসবা
* যশোর কসবা ইত্যাদি।
ইতিহাস সাক্ষী দেয় যে, মহারাজ প্রতীত আনুমানিক একাদশ শতাব্দীতে কৈলাগড় (কসবা) অস্থায়ী রাজধানী স্থাপন করেন। এ পূর্বাঞ্চলে খলংমা, ধর্ম্মনগর, কৈলাসহর ও কৈলাগড়ে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন সময়ে রাজধানী স্থাপিত হয়েছিল। কসবার আদিনাম কৈলাগড়। কিল্লাগড় থেকে বিবর্তিত হয়ে কৈলাগড়। বর্তমান বিজনা নদীর (বিজয়) পূর্ব পাড়ে টিলাময় অঞ্চলে ত্রিপুরী সৈন্যরা কাঠ ও বাঁশ দিয়ে কিল্লা বানাতো। কিল্লাগড় মানে বিল্লাদুর্গ। পশ্চিম পাড়ে আজকের কেল্লাবাড়ি, নাপিতের বাজার, মইনপুর, শাহপুর এ অঞ্চলে কিল্লা তৈরি করেছিল মুঘল সৈন্যরা। ১৮৫৭ সালে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামে (যাকে ইতিহাসে বলে সিপাহি বিদ্রোহ) চট্টগ্রাম থেকে সিপাহিদের একটি দল ত্রিপুরা পাহাড় শ্রেণি দিয়ে সিলেটে পালিয়েছিল। তখন ত্রিপুরার মহারাজ ইংরেজদের পক্ষে দালালি করে সিপাহিদের দমন করে। এর এক বছর পর ত্রিপুরা রাজ্যে ইংরেজদের পরামর্শে ১১টি থানা স্থাপিত হয়। তিন ভাগে বিভক্ত। যেমন হিউং, বিউং ও কৈলাগড়। ১৯০৮ সাল কসবা থানা স্থাপিন হয়। পুরাতন অফিসের মধ্যে একটি তহশিল অফিস ছিল পেয়ারী যাহার বাজারে (কসবা)। গরিব কৃষকদের সুদখোররা শোষণের জন্য ১৮৪৩ সালে তা স্থাপন করে। ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর ১৪ তারিখে কসবা থানাকে উপজেলায় উন্নীতকরা হয়।কসবা পৌরসভা গঠিত হয় ১৯৯৯ সালে।পৌরসভা প্রতিষ্ঠার এক যুগ পর ১২ জুন ২০১১ সালে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

কসবা উপজেলার যত দর্শনীয় স্থান,
সৌন্দর্যে ও গৌরবে সত্যিই অম্লান।
প্রায় দুইশত দশ বর্গ কিলোমিটার বিস্তীর্ণ সমভূমি,নিচু ভূমি,জলাধার,উচু নিচু পাহাড়,লাল মাটির পাহাড়,নদী -নালা,খাল বিল পরিবেষ্টিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লিলাভূমি কসবা উপজেলা।তিতাস,সালদা, সিনাই,সাংগুর,বিজনা,কালিয়ারা,হাওড়া,রাজার খাল,অদের খাল,বুড়ি প্রভৃতি নদী এই প্রাচীন জনপদের উপর দিয়ে অতিক্রম করেছে।
মহান মুক্তি যুদ্ধের সময় কসবা দুই নম্বর সেক্টরের অধীনে ছিল। ১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর লতোয়ামুড়া ও চন্দ্রপুরে পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধে শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং কোল্লাপাথরে অপর এক লড়াইয়ে ৪৯ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। তাছাড়া এসময় উপজেলার আকছিনা, আড়াইবাড়ী, হরিয়াবহ, ক্ষীরণাল, চারগাছ ও বায়েক অঞ্চলে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াই হয়।এই উপজেলার দর্শনীয় স্থানের মধ্যে মুক্তি যোদ্ধাদের সমাধিস্থল দুটি এবং গণকবর সাতটি। (লক্ষ্মীপুর, কোল্লাপাথর, শিমরাইল ও জমশেরপুর)।

★কসবার ঐতিহাসিক নিদর্শন ও স্থানসমূহঃ
কমলা সাগর কালিমন্দিরঃ
দিঘির পূর্ব দিকে উঁচু টিলার ওপরে কমলাসাগর কালিমন্দির। ঐ পাড়ে কসবা নাম বদলে ফেললেও কসবেশ্বরী মন্দির কথাটি এখনো লেখা আছে মূল ফটকের ওপরে। ১৫ শতকের শেষ দিকে মহারাজা ধন্যমানিক্য (১৪৯০-১৫১০) এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। সামনে বিশাল দিঘি খনন করে কমলাসাগর নাম দেন মহারাণী কমলাবতীর নামে। ভারতীয় অংশে কসবা নামটি চাপা পড়ে যায় কমলাসাগর নামের আড়ালে। তবে স্থানীয়রা এখনো এ এলাকাকে কসবা নামেই সম্বোধন করেন।

★সীমান্ত হাটঃ
কমলা সাগর দিঘির উত্তর-পূর্ব কোণায় উঁচু উঁচু কাঁটাতারে ঘেরা বর্ডার হাট। ২০১৫ সালের ১১ জুন প্রথম সীমান্ত হাট বসতে শুরু করে এখানে। শুরুর দিকে প্রতি বৃহস্পতিবার এখানে হাট বসলেও এখন বসে রোববার করে। সকাল ১০টা থেকে শুরু করে সন্ধ্যা অবধি বিকিকিনি চলে হাটে।২০৩৯ নম্বর সীমান্ত পিলার লাগোয়া এ বর্ডার হাট গড়া হয়েছে উভয় দেশের ১৪০ শতক জমির ওপর।

★কোল্লাপাথর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিস্থলঃ
এখানে ৪৯ জন মুক্তিযোদ্ধার সমাধি আছে। অজ্ঞাত তিনটি সমাধি। কোনাবন সাব সেক্টরের কমান্ডার আব্দুল গাফফার হাওলাদার (খুলনা) নির্দেশে, কোল্লাপাথরের বিনুফকিরের আন্তরিক সহযোগিতায় তাঁর পারিবারিক কতক জায়গায় ৭১-এর জুন মাসে এ সমাধি স্থাপন করা হয়। ৭১-এর অক্টোবরে কসবা অঞ্চলে যুদ্ধ বেড়ে যায়। শহীদ যোদ্ধারা আসতে থাকে তখন তাদের এখানে কবর দেয়া হয়।

★লক্ষ্মীপুর মুক্তিযোদ্ধা সমাধিস্থলঃ
১২ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সমাধিস্থল এখানে আছে। স্থাপিত ৭১-এর অক্টোবর-৯, লক্ষ্মীপুর সীমান্ত অঞ্চল। অক্টোবর ৯-২২ অক্টোবর পর্যন্ত কসবা যুদ্ধের ৪টি লাশ ও ২১ নভেম্বর চকচন্দ্রপুর চানমোড়ার যুদ্ধে নিহত ৮টি লাশ নিয়ে এ সমাধিস্থল। ক্যাপ্টেন হুমায়ুন কবির, স্বাধীনতা বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল কাইয়ুম, সদস্য সচিব এম এইচ শাহআলম, কসবা প্রেসক্লাবের সভাপতি সোলেমান খান, সাধারণ সম্পাদক নেপাল চন্দ্র সাহা, জহিরুল ইসলাম স্বপন এবং হুমায়ুন খাদেম (রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান), সাবেক এমপি শাহ আলম, তৎকালীন ইউএনও, শাহ মোকসেদ আলী ও সাবেক সচিব মিনাজুর রহমান এই সমাধি তৈরিতে আরও অনেকেই আন্তরিক সহযোগিতা করেছেন।

★দেশের প্রথম কুরআন ভাস্কর্যঃ
সৌদি আরবের জেদ্দা বিমানবন্দর নেমে পবিত্র নগরী মক্কার প্রবেশদ্বারে কুরআনের আদলে তৈরি যে বিশাল তোরণ রয়েছে। সে তোরণের ডিজাইনের আলোকেই কসবা উপজেলা সদরের ব্যস্ততম কদমতলা মোড়ে তৈরি করা হয়েছে এ ভাস্কর্যটি।কসবা পৌরসভার মেয়র এমরানুদ্দীন জুয়েলের তত্ত্বাবধানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের মেধাবী ছাত্র ভাস্কর কামরুল হাসান শিপন এ ভাস্কর্যটি ডিজাইন করেন।উন্নতমানের গ্লাস ফাইভার দ্বারা তৈরি নান্দনিক ভাস্কর্যটির উচ্চতা ১৬ ফুট এবং প্রস্থ ৮ ফুট।২০১৬-১৭ অর্থবছরের এডিবির অর্থায়নে প্রায় ৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ১ জুন এই প্রকল্পের কাজ শুরু করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স সান কমিউনিকেশন।কাজ শেষ হয় ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭।৩১ ডিসেম্বর ১৭ তারিখে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম নির্মিত এই ভাস্কর্যটির উদ্বোধন করেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক।

★শ্রী শ্রী আনন্দময়ী জন্মভিটা ও আশ্রমঃ
হিন্দু বা সনাতনী ধর্মের কেউ কেউ বলে সাধিকা, আবার গুণীজন ও সাধকরা বলেন অংশাবতার। সবার কাছে প্রিয়তমা ‘মা’। জন্ম এপ্রিল ৩০, ১৮৯৬, মৃত্যুঃ আগস্ট-২৭, ১৯৮২। জন্ম স্থান ঃ কেওড়া, কসবা। ১৯২৫ সালে ঢাকা সিদ্ধেশ্বরী শ্রীযুক্ত জ্যোতিষ চন্দ্র রায় (ভাইজী) কর্তৃক ‘শ্রী শ্রী আনন্দময়ী’ উপাধী পায়। ১৯২৭ সালে শাহবাগে ফকিরের কবরে নামাজ পড়েন। ১৯২৯ সালে রমনা আশ্রমের জমিতে পদার্পণ করেন। ১৯৩৭ সালে খেওড়া কসবা কালিমন্দিরে আসেন শ্রীমতি ইন্দিরা ভারতের উপ রাষ্ট্রপতি জি এস পাঠকসহ ভারত বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব তার শিষ্যত্ব বরণ করেন। শ্রী শ্রী আনন্দময়ী আশ্রম, খেওড়া ১৩৩৮ বাংলায় প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৫ সালে তার পাশেই দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপিত হয়। খেওড়া আনন্দময়ী উচ্চ বিদ্যালয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া আনন্দময়ী স্কুল (নিতাই পাল) তাঁরই নামে প্রতিষ্ঠিত।আগস্ট-২৭, ১৯৮২ সালে কৃষ্ণপুর আশ্রম, দেরাদুনে ৭-টা ৪৫ মিঃ মৃত্যুবরণ করেন।

★আনন্দ ভুবনঃ
মেহারী ইউনিয়নের অন্তর্গত বল্লভপুর গ্রামের পশ্চিম পাশে রাজার খালের উপর নির্মিত অপূর্ব সৌন্দর্যের হাতছানি ”বড় ভাংগা ব্রীজের দু’পাশ যা বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান সমূহের তালিকায় ‘অানন্দ ভুবন’ নামে খ্যাত।

★সালদা গ্যাস ক্ষেত্রঃ
বাংলাদেশের ১৯তম গ্যাস ক্ষেত্র (সালদা গ্যাস ক্ষেত্র) কসবার বায়েক ইউনিয়ন্থ সালদা নদীর তীরে অবস্থিত। মোট গ্যাসের মজুদ ৩০০ বিলিয়ন ঘনফুট। কূপ সংখ্যা ৩।

★মহেশ ভট্টাচার্য্য ব্রিজঃ
দানবীর মহেশ ভট্টাচার্য্য নামে কসবা বিজয় নদীর ওপর ব্রিজ তিনি স্থাপন করেন। জন্ম ১২৬৫ বাংলা মৃত্যু ১৩৫০ বাংলা। কসবা পুরাতন বাজারে প্রবেশ পথে নদীর উপর সুদৃশ্য ব্রীজ। কসবা সদরের কোন বদরাগী নৌকোমাঝি ভাংতি পয়সা দিতে পারেনি বলে, তাঁর ছাতা রেখে দেয়। তাই খেয়া পারের পর কুমিল্লায় গিয়ে একটি লোহা ব্রিজ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন। হোমিওপ্যাথিক ঔষধ কোং স্থাপন, বিনা পয়সায় চিকিৎসা করিয়েছেন।

★গোঁসাইস্থল মন্দির গুচ্ছঃ
গোপীনাথপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ নোয়ামোড়া গ্রামে মন্দিরগুলো অবস্থিত। আনুমানিক ৫শত বছর পূর্বে এলাহাবাদের জমিদার সনাতন গোঁসাই সন্ন্যাসী বেশে পূর্ব ভারতের পথ ধরে এ গ্রামে উপস্থিত হন। সাথে ছিল দুইজন ভাবশিষ্য। একজন গোঁপাল গোসাই ও অন্যজন জীবন গোসাই। স্থানীয় রাখাল ও জেলেদের সহযোগিতায় একটি উঁচু মোড়ার ওপর পুণ্যকুটির স্থাপন করেন। মোড়ার উত্তর প্রান্তে সনাতন ও গোপাল গোঁসাইর সমাধি। উত্তর-পশ্চিম কোণে শ্রী শ্রী বৈকুণ্ঠের সমাধি, দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে জীবন গোঁসাইর সমাধি। এ গোঁসাই হিন্দু না মুসলিম তার কোনো প্রমাণ নেই। প্রতি বছর বৈশাখ মাসের ১ তারিখে মেলা হয় ও ১৪ ভাদ্রতে বসে হিন্দুদের উৎসব।

*পুড়া রাজার জাঙ্গালঃ
তিন লাখ পীর(তিলক পীর)থেকে বল্লভপুর পর্যন্ত।পাঁচ শত বছরের পুরনো।

*নবীজির অনুসারী সুফি সাধক শায়খুল বাঙাল ছৈয়দ অাবু মাছাকিন লাহিন্দী অাল কাদেরী(রঃ) এর অাব্বাজান বহু ভাষাবিদ মরহুম আলহাজ্ব মুকছদ আলী মৌলানা সাহেবের সমাধী(বল্লভপুর)

*আড়াইবাড়ির দরবার শরীফ।কসবা ।

*পুরকুইল দরবার শরীফ।

*১২৬৯ হিজরীতে মরহুম আজমত আলী প্রতিষ্ঠিত

*মইনপুর মসজিদ।মইনমপুর কসবা।

*ভিন্ন ধর্মী ব্যবসার আড়ৎ কুটি বাজার।

★কসবার ঐতিহাসিক সাগর ও দিঘিসমূহঃ

*কল্যাণ সাগরঃ
মহারাজ মশোধর মানিক্য তাঁকে কৈলাগড় সেনাপতি নিযুক্ত করেন। মহারাজ কল্যাণ মানিক্যের (১৬২৬-৬০) খ্রিঃ সময়ে একটি উদয়পুরে অন্যটি কসবায় তাঁর নামে এ দিঘি খনন করেন। দিঘিকে প্রতীকী অর্থে সাগর বলে। রাজার হৃদয় সাগর ও বিশালত্ব নিয়ে এ যেন দিঘিই সাগর। এ সমস্ত দিঘিগুলো মূলতঃ সামরিক প্রয়োজনে খনন করা হয়েছিল। কসবায় এ সাগরের আয়তন ১২ একর।

★কমলা সাগরঃ
রাজা ধন্যমানিক্য (১৪৯০-১৫২০) খ্রিঃ কসবায় এ দিঘি খনন করেন। রানী কমলাবতীর নামে কমলা সাগর। রাজার মৃত্যু হলে তিনিও সহমরণে যান। দক্ষিণ দেশের আমরাবাদ পরগণায় রাজা হরিশচন্দ্র। আমানতপুর গ্রামেও একটি কমলা দিঘি আছে।

★রাম সাগরঃ
মহারাজ রামদের মানিক্যের (১৬৭৬-১৬৮৫) খ্রিঃ মাইজখার গ্রামে রামসাগর নামে দিঘি খনন করেন।আয়তন ৮ একর।

*মহারাজ দ্বিতীয়ত মানিক্যের দীঘি -ধর্মসাগর কসবা।
*মহারাজ গোবিন্দ মানিক্যের স্ত্রী -গুনবতী মহাদেব্যার নামে -গুনসাগর, জাজিয়ারা,কসবা।
**আরো আছে পদ্মদিঘী (বাউরখন্ড),রাজার দিঘী(মূলগ্রাম),শ্রী দীঘি (শ্রীপুর),কৈলাস দীঘি, আন্ধাদীঘি (খেওড়া),পদ্মা পুকুর (বল্লভপুর গ্রামের পূর্ব পাশে), জুগি পুকুর(বল্লভপুর)

”নেই সেই দিন,মুক্ত জীবন আর হরিণ গতি;
এত সখী আর খেলার মাঝে রইল শুধু স্মৃতি ।
জুগি পুকুরের অবাঁধ সাঁতার, জল থৈ থৈ খেলা;
ছুঁয়ে যায় মোরে,এখনো প্রাণে দিয়ে যায় দোলা।”
(স্মৃতির মিছিলে কাব্যগ্রন্থ /এস এম শাহনূর )।

★বরেণ্য ব্যক্তিত্বঃ
*অ্যাডভোকেট সিরাজুল হক – বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলার প্রধান কৌসুলী ও ১৯৬৮ সালের আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার কৌসুলী।বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য,মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক,সাবেক সংসদ সদস্য।

*মুহাম্মদ গোলাম রহমান -তত্বাবধায়ক সরকারের যোগাযোগ উপদেষ্টা (সাবেক)।

*মরহুম হযরত গোলাম হাক্কানী (রঃ) – আড়াইবাড়ীর প্রখ্যাত আলেম , ইসলামি চিন্তাবিদ ও রাজনীতিবিদ। তিনি ছিলেন ইসলামি জ্ঞানচর্চায় একজন নিবেদিতপ্রাণ ও সমাজসেবক। মরহুম হযরত মাওলানা আসগর আহমদ (রঃ) এর সন্তান।

*তোফাজ্জল হোসেন (টি.অালী) – বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও আইনজীবি।

*মরহুম হাজী আব্দুল জব্বার -ছতুরা দরবার শরীফের পীর প্রফেসর আব্দুল খালেক (রঃ)র মাস্তান খেতাবে ভূষিত শিষ্য। তিনি ছিলেন আপাদমস্তক ঘুমজাগানিয়া একজন ধর্ম প্রচারক।

*মিয়া অাব্দুল্লাহ ওয়াজেদ – বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সাবেক সংসদ সদস্য। নকল নির্মূল কমিটির প্রধান।
রাজনীতিবিদ।

*এডভোকেট আনিসুল হক – রাজনীতিবিদ, আইন মন্ত্রী; এডভোকেট সিরাজুল হক বাচ্চু’ র সুযোগ্য সন্তান।

*সৈয়দ আব্দুল হাদী – বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী।

*শায়খুল বাঙ্গাল আলহাজ্ব হযরত মাওলানা শাহ্ সুফি সৈয়দ আবু মাছাকিন মোহাম্মদ মতিউর রহমান গোলাম কাদির (রাহ্) [প্রকাশ দুদু মিয়া পীর]।বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন জীবন নিবেদিত মোবাল্লিগ- ইসলাম প্রচারক, বুজুর্গ,সুফি সাধক।

*খন্দকার আশোক শাহ – উনি ছিলেন
সুফি সাধক, যিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন ইয়েমেন থেকে ধর্ম প্রচারের জন্য। উনি শায়িত আছেন গোপীনাথ পুর গ্রামের মধ্য পাড়ায়। বীর মুক্তি যোদ্দা, চিকিৎসক, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, সংস্ক্রিতিক ব্যাক্তিত্ব, জ্ঞান সাধক ও সুফি সাধক, ডঃএম.এ. রহমান উনার বংশ ধর।

★বিলঝিলঃ হাতনীর বিল, শিমরাইলের বিল ও কুটির বিল উল্লেখযোগ্য।

★মেলাঃ চৌমূহনী মেলা, মনকাসাইর মেলা ও মেহারি মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রাচীন কাল থেকে সকল ধর্ম বর্ণের মানুষের সহাবস্থানের এক নৈসর্গিক জনপদ কসবা।আসুন সকলে মিলে কসবার উন্নয়নে অবদান রাখি।

➤তথ্যসূত্রঃ
১.পরিসংখ্যান অফিস কসবা
২. ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইতিবৃত্ত
৩. কুমিল্লার ইতিবৃত্ত
৪. নামকরণের ইতিকথা।। এস এম  শাহনূর
৫. ত্রিপুরার রাজমালা (১ম খন্ড)
৬. ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লোকজ ইতিহাস

👍Copyright @এস এম শাহনূর
smshahnoor82@gmail.com
(উইকিপিডিয়ান,কবি ও গবেষক)।

Some text

ক্যাটাগরি: বিবিধ

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply

আমি প্রবাসী অ্যাপস দিয়ে ভ্যাকসিন…

লঞ্চে যৌন হয়রানি