শহরের টানবাজার, সড়কবাজার ও জগৎবাজার এলাকায় রয়েছে বেশ কয়েকটি পলিথিনের বড় মোকামঘর। ব্রাক্ষণবাড়িয়া সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগের সাবেক শিক্ষক বসির আহমেদ জানান, বিকল্প ব্যবস্থা থাকার পরও আমরা পলিথিন ব্যবহার করব কেন? পলিথিন ভবিষ্যতে মহা বিপর্যয় ডেকে আনবে।
সারা দেশের মতো ব্রাক্ষণবাড়িয়া শহরেও নিষিদ্ধ পলিথিন অবাধে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ যেন এক রামরাজত্ব। যে ভোবে খুশি চলছে, করছে, দেখার কেউ নেই। মূলত আমাদের দেশে পলিথিন ব্যবহার শুরু হয় ১৯৮২ সাল থেকে। জনস্বাস্থের জন্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিকর এই পলিথিন নিষিদ্ধ হয় প্রায় ১০ বছর হতে চলল। কিন্তু কেউ এই আদেশ মানছে না। পলিথিন ধীরে ধীরে ক্ষয়ে গিয়ে মাটির সাথে মিশে না বলে যুগ যুগ ধরে পরিবেশ দূষণ করে। আগামী পৃথিবীর পরিবেশকে বির্পযস্ত করে তোলে। ব্রাক্ষণবাড়িয়া শহরে অবাধে পলিথিন ব্যবহারের কারণে সর্বত্র দুর্গন্ধ ও পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনের নজরদারির অভাব, আন্তরিকতা ও দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এর ব্যবসায়ীরা শহর ও এর আশপাশ এলাকার দোকানপাট এবং বাজারগুলোতে বাজারজাতকরণে তৎপর রয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাবলেশহীন অভিযানে মাঝে-মধ্যে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আটক করে জরিমানা করা হলেও মূল হোতারা থেকে যায় ধরাছোয়ার বাইরে। তাছাড়া ভ্রাম্যমান আদালত বিভিন্ন বাজারে অভিযান পরিচালনার পূর্বেই ব্যবসায়ীরা খবর পেয়ে যায়। ফলে সে অভিযানগুলোও ব্যর্থতা পর্যবসিত হয়। প্রশাসনের অতি মুনাফালোভী লোকদের কারণে ব্রাক্ষণবাড়িয়াসহ দেশের অনান্য স্থানে নির্মূল হচ্ছ না পলিথিনের ব্যবহার। ব্রাক্ষণবাড়িয়া শহরের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জানা যায়, বিভিন্ন পাইকারী রেকসিন এবং প্লাস্টিকের দোকানের মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছ নিষিদ্ধ পলিথিন। দোকানদারদের সঙ্গে যোগসাজশে হকাররা এই পলিথিন পৌঁছে দেয়।
শহরের টানবাজার, সড়কবাজার ও জগৎবাজার এলাকায় রয়েছে বেশ কয়েকটি পলিথিনের বড় মোকামঘর। ব্রাক্ষণবাড়িয়া সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগের সাবেক শিক্ষক বসির আহমেদ জানান, বিকল্প ব্যবস্থা থাকার পরও আমরা পলিথিন ব্যবহার করব কেন? পলিথিন ভবিষ্যতে মহা বিপর্যয় ডেকে আনবে। মধ্যপাড়া মহল্লার গৃহিণী শেখ সালমা আকতার হেলেন বলেন, বিভিন্ন ডিজাইনের পাট ও কাগজের ব্যাগগুলো ব্যবহারের সুবিধা অনেক। পাট ও কাগজের ব্যাগের দাম বেশি হওয়ার কারণে বর্তমানে লাল, নীল, সাদা ও হলুদ রঙের পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। শহরের বিশিষ্ট আইনজীবি তৈমুর রেজা শাহজাদ বলেন, প্রচারের অভাব ও পরিবেশ অধিদফতরের গাফিলতির কারণে পলিথিনের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। নিষিদ্ধ পলিথিনের উৎপাদন বন্ধ না হওয়ায় তা আবারও সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে। ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে পলিথিন উৎপাদন বন্ধ করতে হবে। ব্যবহৃত পলিথিনের স্তূপের কারণে ড্রেনগুলোতে পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হয়। এতে বর্ষার মৌসুমে শহরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। পদার্থ বিজ্ঞানীদের মতে, পলিথিন মাটিতে মেশে না বলে জমিকে শস্য ও ফসল জন্মানোর অনুপযোগী করে ফেলে।
বর্তমানে বাংলাদেশের সর্বত্র পুরনো পলিথিন পুড়িয়ে মণ্ড তৈরি করে এর দ্বারা জর্দার কৌটা, বালতি, মগ ও অন্যান্য প্লাস্টিক জিনিস তৈরি করা হয়। এর বিষাক্ত ধোঁয়াও পরিবেশ বিপন্ন করে তোলে। এ জেলার এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, নিয়মিত অভিযানে পলিথিন উৎপাদন ও ব্যবহারে জরিমানা আদায় করা হচ্ছে। তারপরও পলিথিনের বিপনন চিরতরে বন্ধ হচ্ছ না। কারণ এদের হাত অনেক লম্বা!
প্রতিবেদন : খায়রুল আকরাম খান, ব্যুরো চীফ
ক্যাটাগরি: বিশেষ প্রতিবেদন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, শীর্ষ তিন
[sharethis-inline-buttons]