শনিবার রাত ৯:২৩, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং

চরমভাবে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন

শরীফ উদ্দীন রনি

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মাঝেও এমন সব আইনের উৎপত্তি হচ্ছে যা একনায়কতন্ত্রকেও হার মানায়। এ ধরনের আইন প্রনয়ণে বাংলাদেশের রাজনৈতিকদলগুলোও পিছিযে নেই। অতীতেও ক্ষমতায় থাকা দলগুলো নিজেদের খেয়াল-খুশিমতো দলীয় স্বার্থে ও ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বির্তকিত আইন জারি করেছে। তেমনি গত ১৯ সেপ্টেম্বর সংসদে পাস হয় ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’

প্রতিটি মানুষ জন্মগতভাবে স্বাধীন হয়ে জন্মগ্রহণ করলেও জন্মের পর তার স্বাধীনভাবে বসবাস করার অধিকার কোনো রাষ্ট্রই দিতে পারছে না। কারণ রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষমতার কথা সবার ক্ষেত্রে বলা থাকলেও যোগ্যতা সবার থাকে না। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহে জনগণের ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে থাকে। অপরদিকে স্বৈরাচারী শাসক কর্তৃক পরিচালিত রাষ্ট্রে ক্ষমতাসীন দলের বিপক্ষে কারও কথা বলার অধিকার থাকে না। একনায়কতন্ত্র, রাজতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের বাস্তবতা বহু আগেই পৃথিবী প্রত্যক্ষ করেছে। তবু কোনো রাষ্ট্রই এসবের বাইরে গিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার কথা ভাবতে পারছে না।

তাই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মাঝেও এমন সব আইনের উৎপত্তি হচ্ছে যা একনায়কতন্ত্রকেও হার মানায়। এ ধরনের আইন প্রনয়ণে বাংলাদেশের রাজনৈতিকদলগুলোও পিছিযে নেই। অতীতেও ক্ষমতায় থাকা দলগুলো নিজেদের খেয়াল-খুশিমতো দলীয় স্বার্থে ও ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বির্তকিত আইন জারি করেছে। তেমনি গত ১৯ সেপ্টেম্বর সংসদে পাস হয় ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’।

বিলটি পাস হওয়ার পর এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বিতর্ক সৃষ্টি করেছে ৩২ নম্বর ধারাটি। অনেকে বলছেন, এটি ৫৭ ধারারই প্রতিফলন। ধারাটিতে উল্লেখিত হয়েছে, “কোনো ব্যক্তি বেআইনিভাবে প্রবেশের মাধ্যমে কোনো সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা বিধিবদ্ধ কোনো সংস্থার অতিগোপনীয় বা গোপনীয় তথ্য-উপাত্ত কম্পিউটার, ডিজিটাল যন্ত্র, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ধারণ, প্রেরণ বা সংরক্ষণ করেন বা করতে সহায়তা করেন, তাহলে সেই কাজ হবে কম্পিউটার বা ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ। পুলিশ প্রশাসনও যেকোনো মুহূর্তে গ্রেফতারি পরোয়ান ছাড়ই অপরাধীকে গ্রেফতার করতে পারবে। এই অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হবে। কেউ যদি এই অপরাধ দ্বিতীয়বার বা বারবার করেন, তাহলে তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড ভোগ করতে হবে।”

উক্ত ধারাটি শুধু যে বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছে বিতর্কের ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে এমন নয়, দেশের সর্বস্তরের বুদ্ধিজীবী, লেখক, সাহিত্যিক, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের কাছে এটি বিতর্কিত হয়েছে। এতে সরকারের ইমেজ নিয়েও তারা প্রশ্ন তুলছে। বহু অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টের মুখে এমন শোনা যাচ্ছে, বর্তমান সরকার তার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে সকল কিছু নিজ কর্তৃত্বে নিয়ে যেতে চান। তাই তিনি বারবার দেশের বিভিন্ন সেক্টরের আইন রদবল করছেন। এবার তিনি চিন্তাশীল ও গবেষকদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম অনলাইনকেও নিজের হাতের মুঠোয় নেওয়ার লক্ষ্যে এই ৩২ নম্বর ধারা প্রনয়ণ করেছেন বলে অনেকে মনে করছেন।

আর অনলাইনে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হলো নিউজ পোর্টালগুলো। যা পাঠকের কাছে খুব দ্রুত নিউজ পৌঁছে দেয়। এগুলো সচল রাখে অনলাই সংবাদকর্মীরা। তারা মাঝে মাঝে এমন সব কাজ করে বসে যাতে করে তারা সর্বোচ্চ ক্ষমতা ব্যবহার করে দেশে একটি বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি করে । সেই আশঙ্কায় সরকারের এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত নয় যাতে স্বাধীন ও সৎ চিন্তাশীল ও যোগ্য লোকেরাও কথা বলার জায়গা হারিয়ে ফেলছে।

ক্যাটাগরি: প্রধান খবর,  সম্পাদকের বাছাই

ট্যাগ:

[sharethis-inline-buttons]

২ responses to “চরমভাবে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন”

Leave a Reply