আমাদের শৈশবে কলম বলতই দোয়াত-কলম বোঝাতো। কলমের বিবর্তনটা দেখেছি চোখের সামনে। ছেলেবেলার কিছু স্মৃতি আধো আধো মনে পড়ে। আমি ফেউন্টেন পেন দিয়ে শুরু করেছিলাম ক্লাস, থ্রি থেকে বিপুল উত্তেজনা নিয়ে। পেনটার রঙ ছিল কালোর উপরে ছোপ ছোপ ডিজাইন। এই ইস্পাতের নিবযুক্ত পেনটা পাওয়ার উত্তেজনাটাই ছিল আলাদা। তার সাথে আর কোনো কিছুর তুলনা করতে পারি না। কালির নাম ছিল- ইউথ কালি, সিমা কালি, আইডিয়াল কালি। কাল এবং নীলরঙের কালি ভরতাম ফাউন্টেন পেনে। পকেটে হাতে লেগে থাকতো কালির থ্যাবড়ানো ছাপ । কয়েক দিন পর পর হালকা গরম পানিতে কালি কলমটা ধুয়ে পরিষ্কার করতাম।
তারপর দোয়াত থেকে কালি ভরে, ফোটায় ফোটায় অতিরিক্ত কালি আবার দোয়াতে ফেলা হতো। সবশেষে কালিতে ভেজা কলমের সামনের অংশ নিউজপ্রিন্ট পেপারে মুছে, আবার কাউকে দেখতাম কালি ভরার পর কালি মাখা কলমের সামনের অংশ নিউজপ্রিন্টে না ঘষে ঝটপট নিজের মাথায় মুছে ফেলতো।
লাল রং এর কালি তখন ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যবহার করা দৃশ্যত মানা ছিল। কারণ লাল রং ব্যবহারের একচ্ছত্র মালিক শুধুমাত্র শিক্ষকেরাই। কাঁচের তৈরি দোয়াতে কালি বিভিন্ন ট্রেড নামে বাজার মিলত। কালি-কলমের এই চিরকালীন সম্পর্কে এখন চিড় ধরেছে। অত্যাধুনিক বলপয়েন্টই এখন সর্বত্র চলছে। কিন্তু প্রথম দিকে বলপয়েন্ট শিক্ষাঙ্গনে ছিল নিষিদ্ধ। ক্লাসে নিয়ে গেলে শিক্ষকরা ধমক লাগাতেন । বলতেন হাতের লেখা সুন্দর হবে না। বলপেন আমাদের দেশে সম্তবত আশির দশকের প্রথম দিকে আসে। উপরের দিকে টিপ দিলে রিফিল বের হতো। তাই বলা হতো টিপ কলম । বাজারে এখনো সেই ডিজাইনের কলম আছে । তবে ওয়ান টাইম তিন টাকার ইকোনো বলপেনই বেশি চলত। এর পরে আস্তে আস্তে শিসপেন বা বলপেনের আগমন শুরু হলো।
সেই বালক বেলার ফাউন্টেন পেনের সাথে প্রেম ছিল। আমার মতো অনেকেরই ছিল। ফাউন্টেন কলম ছিল ছাত্রছাত্রীদের কাছে বাহাদুরির বিষয়। খুব স্টাইল করে বুকপকেটে ক্লিপ আঁটা কলম মালিককে দিত আলাদা অনুভূতি। শৈশবে অনেকেই হয়তো অনেকবার কালির দোয়াত উল্টে দিয়ে বইপত্র নষ্ট করেছেন। শিক্ষক অভিভাবকদের সহ্য করেছেন তিরস্কার ।
এখন কলম নেই, কালি নেই, সেই দোয়াত-কলমের জুটি নেই। প্রবীণ ব্যক্তিরা হয়তো বলপয়েন্টে লিখতে গিয়ে মনে মনে ফিরে যান শৈশবে। কল্পনার চোখে দেখেন সেই দোয়াত কলমের ছবি। তাইতো কাগজের সাদা পাতার বুক চিড়ে রোপন করে যাই বুকের ভিতর জমে থাকা অযুত নিযুত শব্দমালা।
Some text
ক্যাটাগরি: চিন্তা
[sharethis-inline-buttons]
আমরা লেখা-পড়া শুরু করি মাটির শ্লেট ও মাটির পেন্সিল দিয়ে। পঞ্চম শ্রেণীতে উঠার পেলাম সাধারন নিপওয়ালা কালি কলম,এএসিতে পেলাম ঝর্ণনা কলম ;সর্বশেষে পেলাম বর্তমান বল-পেন।আপনার লেখাটি খুবই চমৎকার হয়েছে।