শুক্রবার রাত ৯:১৮, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং

উন্নয়ন ও গণতন্ত্র অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত

খায়রুল আকরাম খান

আসল কথা হলো সবার উন্নয়ন, দেশের উন্নয়ন। সে লক্ষ্যে স্থিতিশীল গণতন্ত্র ও দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়ন দরকার। এ নিয়ে তর্কে যাওয়ার কোন অবকাশ নেই। রাজনৈতিক দলগুলো গণতন্ত্র উদ্ধারের নামে হরতাল, অবরোধ, অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের মতো যে ভয়াবহ কর্মসূচী দেয় তা দেশের অর্থনীতির চাকাকে থমকে দেয়। স্থিতিশীর গণতন্ত্র ও টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে রাজনৈতিক গলগুলোকে উক্ত সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে এবং সরকারকেও বিরোধী দলের প্রতি সহনশীল হতে হবে।

উন্নয়ন আগে না গণতন্ত্র আগে? দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নের জন্য গণতন্ত্র অপরিহার্য কিনা এ বিষয় নিয়ে ইদানিং কালে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও উঠতি বুর্জোয়া ও মধ্যবিত্ত মহলে ব্যাপক বিতর্ক চলছে। পূর্বে এ ধরনের বিতর্ক তেমন শোনা যায় নি। বিশেষ করে, কোনটাই তো কোনোটাছাড়া চলে না;দুটোই অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। বিরোধী রাজনৈতিক নেতারা বলছেন- উন্নয়নের নামে পদ্মা সেতু, ঢাকা মেট্রোরেল, উড়াল সেতু, ঢাকা- চট্টগ্রাম চার লেনের রাস্তা ইত্যাদি লোক দেখানো কাজ। দেশে গনতন্ত্র বলে কিছুই নেই, তাকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে। মানবাধিকার বাক, স্বাধীনতা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা, দুর্নীতিকে কঠোরভাবে দমন এগুলো বহু পূর্বেই নিবার্সনে গেছে। এখন লোক দেখানো উন্নয়নের তামাশা চলছে। এ উন্নয়নে কিছুই হবে না। এর আগে দরকার গণতন্ত্র। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনলেই তখন দেশের সর্ব ক্ষেত্রেই উন্নয়ন হবে, কথা বার্তায় চিন্তা-চেতনায় উন্নতি হলেই তবে তা উন্নয়ন, তার পূর্বে নয়। আর এর বিপরীতে এদিকে সরকার বাহাদুর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রক্ষার জন্যই উন্নয়ন করছে। দেশ আজ উন্নয়নের বিশাল পরিকল্পনা অনুযায়ী চলেছে। দেশের এখন পরিস্থিতিতে প্রকৃত পক্ষে কোনটা উন্নয়ন আর কোনটা গণতন্ত্র তা নিয়ে জনমনে তুমোল বির্তক চলছে।

আজ বাংলাদেশ৪৭্র বছরে যে অবস্থানে যাওয়ার কথা ছিল, তা পারেনি অসৎ চক্রগুলোর কারনে। তারা গণতন্ত্রকে নিজেদের আদলে গঠন করে নিয়েছে, যাতে কৌশলে লুটপাট করা সহজ হয়। প্রকৃত পক্ষে  গনতান্ত্রিক ব্যবস্থার অর্থ হচ্ছে, রাষ্ট্র ক্ষমতার অধিকতর বিকেন্দ্রায়ন। কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা বিকেন্দ্রায়নের মাধ্যমে সমাজের ওপর থেকে নিচ ও কেন্দ্র থেকে তৃণমূল, সব স্তরে গনতন্ত্রের হাত ধরে সার্বিক উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। তবে বাংলাদেশের ঘটেছে এর সম্পূর্ণ বিপরীত। সম্পূর্ণ শাসন ব্যবস্থাটিকে করে তোলা হয়েছে ক্রমাগত কেন্দ্রীভূত। আর এ কেন্দ্রীভূত শাসন ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে জন্ম নেয় কর্তৃত্ববাদী শাসনের।

আসল কথা হলো সবার উন্নয়ন, দেশের উন্নয়ন। সে লক্ষ্যে স্থিতিশীল গণতন্ত্র ও দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়ন দরকার। এ নিয়ে তর্কে যাওয়ার কোন অবকাশ নেই। রাজনৈতিক দলগুলো গণতন্ত্র উদ্ধারের নামে হরতাল, অবরোধ, অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের মতো যে ভয়াবহ কর্মসূচী দেয় তা দেশের অর্থনীতির চাকাকে থমকে দেয়। স্থিতিশীল গণতন্ত্র ও টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোকে উক্ত সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে এবং সরকারকেও বিরোধী দলের প্রতি সহনশীল হতে হবে। অর্থনীতিবিদদের মতে৪৬ বছর ধরে অবৈধ পন্থায় এক শ্রেনীর মানুষ যে পরিমান টাকা লুটপাট করেছে  এবং বর্তমানেও করছে তা দিয়ে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়া যেত। রাষ্ট্রের টাকা উন্নয়নের কাজে ব্যয় হলে বাংলাদেশ মালয়েশিয়াকে টপকে এগিয়ে যাওয়া অসম্ভব হতো না। সৎ ও নিষ্ঠাবান হতে পারিনি বলেই চার দশকেও আমরা যে অবস্থানে যাওয়ার কথা, তার ধারে কাছেও পৌছতে পারিনি। এ ব্যর্থতার দায় তাদেরই বেশী নিতে হবে, যারা বিগত চার দশকে দেশের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন।  তবে বর্তমান সরকারওএই দায় থেকে মুক্ত নন। বর্তমান বিশ্বের মধ্যে খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ বাংলাদেশে সবচেয়ে সস্তা হলো মানব সম্পদ। শুধু সততা, দক্ষতা ও সুশাসনের অভাবে দেশটা এগোতে পারছে না। অসহিষ্ণুতা ও হিংসাত্বক রাজনীতি স্থিতিশীল গনতন্ত্র ও আমাদের উন্নয়নের যাত্রাপথে সব সময় প্রতিবন্ধক স্বরূপ।

বর্তমানে বিশদলীয় জোটের অন্যতম শরীকদল বিএনপি গণতন্ত্র রক্ষা নিয়ে অস্থির হয়ে গেছে। এই গণতন্ত্র না হলে সব বৃথা, সব ব্যর্থ কিন্তু কেন? বিগত সময় যখন তারা ক্ষমতায় ছিল তখন কি তারা গনতন্ত্রের চর্চা করেছে? সে সব “ খেসারত আর পরিনতি  “তাদের নিজেদের আয়নায় মুখ দেখলেই ধরা পড়বে। এখন তাদের গণতন্ত্রের দরকার অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য। ক্ষমতার পালা বদলে তারা ক্ষমতাশীন হলে গনতন্ত্রকে  নির্বাসনে পাঠিয়ে চলতি সরকারের মতো তারাও উন্নয়নের কথা বলবে, গণতন্ত্রের কথা বলবে, জঙ্গী নিরসনের কথা বলবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলবে ইত্যাদি। তা হলে উন্নয়নের আগে এই গণতন্ত্র হলো ক্ষমতা যাওয়ার বিশেস কৌশল মাত্র।

বর্তমান সরকার উন্নয়নের কথা বলছে।  “ক্ষমতায় থাকা আর উন্নয়ন   -করা “কে না বলে? আর এর মধ্য দিয়েই গনতন্ত্র  মুমূর্ষূ অবস্থায় ঘুড়পাক খাচ্ছে ও কচ্ছপ  গতিতে এগোচ্ছে।

চলবে…

ক্যাটাগরি: প্রধান কলাম

ট্যাগ:

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply