শুক্রবার রাত ৯:১২, ১৩ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং

ঘুর্ণিঝড়ের ইতিহাস ও নামকরণ

১৯৭ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

ঝড় (Cyclone) নিয়ে বাঙালির রোমান্টিসিজমের অন্ত নেই। ‘ঝড় কে আমি করবো মিতে, ডরবো না তার ভ্রুকুটি তে।’ বহুশ্রুত এই রবীন্দ্রসঙ্গীতই তার প্রমাণ। আবার কবি তাঁর ‘দেবতার গ্রাস’ কবিতায় ঝড়ের এক ভয়াল ছবি এঁকেছেন। ‘চারিদিকে ক্ষিপ্তন্মত্ত জল আপনার রুদ্র নৃত্যে দেয় করতালি লক্ষ লক্ষ হাতে।’ বস্তুত ঝড় নিয়ে এই দুই বিপরীত ছবিই বাংলার প্রকৃত বাস্তবতা।

বাংলার ভয়ঙ্কর প্রাণঘাতি ঝড়ের ইতিহাস খুঁজতে গেলে প্রথমেই নাম আসে ১৮৭৬ সালের দ্য গ্রেট বেঙ্গল সাইক্লোন বা কুখ্যাত বাকেরগঞ্জ সাইক্লোন। এই ঝড়ের তাণ্ডবে প্রায় ২ লক্ষ মানুষ মারা যান। বাংলাদেশের সুন্দরবন উপকূলে আছড়ে পড়া এই ঝড়ের ধ্বংসলীলার জেরে ঢাকা শহরে লোক সমাগম এক ধাক্কায় লাফিয়ে তলানিতে গিয়ে ঠেকে। এই সাইক্লোন মোকাবিলায় ইংরেজ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে পরবর্তী সময়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে ।

পড়ুন> লেখকের সব লেখা

বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় হিসেবে বিবেচনা করা হয় ১৯৭০ ও ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়কে। এরপরের অবস্থান ঘুর্ণিঝড় সিডর।

আবহাওয়া অধিদপ্তর ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ শুরু করে ২০০৭ সাল থেকে। এর আগে একটা সময় ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোনের নামকরণ হতো না।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে ১৯৬০ সাল থেকে ২০০৭ সালে সিডরের পর্যন্ত বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়গুলোকে ‘সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’ বা প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

নামকরণের ইতিহাস:
ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের চর্চার ইতিহাস কয়েকশো বছরের বেশী নয়। শুরুতে ঝড়ের নাম রাখায় কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করা না হলেও গত শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ঝড়ের জন্য নারীসূচক নাম ব্যবহারের অনুশীলন শুরু হয়। ইভান রে টানেহিলের লেখা বই “দ্য হারিকেন” থেকে জানা যায়, অস্ট্রেলিয়ান আবহাওয়াবিদ ক্লিমেন্ট রেগ ঊনিশ শতকের শেষ দিকে ঘূর্ণিঝড়ের জন্য ব্যক্তিবিশেষের নাম দেয়া শুরু করেছিলেন। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং অ্যান্টার্কটিক অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়ের জন্য তিনি গ্রিক বর্ণমালা, গ্রিক এবং রোমান পৌরাণিক তত্ত্ব ও নারীসূচক নাম ব্যবহার করতেন।

১৯৭৭ সালে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা হারিকেন কমিটি গঠন করে। এই কমিটির প্রথম বৈঠক হয় ১৯৭৮ সালের মে মাসে। বৈঠকে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের দায়িত্ব পায় এই কমিটি।

১৯৭৮ সাল থেকে এই কমিটির সিদ্ধান্তে পূর্ব-উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় ঝড়ের তালিকায় নারীদের পাশাপাশি পুরুষদের নাম ব্যবহার শুরু হয়। পরের বছর মেক্সিকো এবং আটলান্টিক উপসাগরীয় অঞ্চলেও পুরুষদের নাম ব্যবহারের প্রচলন শুরু হয়। বর্তমানে বার্ষিক ও দ্বিবার্ষিক বৈঠকের মাধ্যমে বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনে বিশ্বব্যাপী পাঁচটি ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় আঞ্চলিক সংস্থা বা প্যানেল কর্তৃক ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের নামের তালিকা নির্ধারণ করা হয়।

যদি কোন নিম্নচাপ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার গতিবেগ অর্জন করে, তখন সেটি আঞ্চলিক ঝড় বলে মনে করা হয় এবং তখন সেটির নাম দেয়া হয়। কিন্তু সেটি যদি ঘণ্টায় ১১৯ কিলোমিটার (৭৪ মাইল) গতিবেগ অর্জন করে, তখন সেটি হ্যারিকেন, টাইফুন বা সাইক্লোন বলে ডাকা হয়।

আটলান্টিক, ক্যারিবিয়ান সাগর, মধ্য ও উত্তরপূর্ব মহাসাগরে এসব ঝড়ের নাম হ্যারিকেন।

উত্তর পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে সেই ঝড়ের নাম টাইফুন।

বঙ্গোপসাগর, আরব সাগরে এসব ঝড়কে ডাকা হয় সাইক্লোন নামে।

সাধারণভাবে ঘূর্ণিঝড়কে সাইক্লোন বা ট্রপিক্যাল সাইক্লোন বলা হয়।বাংলা ঘূর্ণাবাত শব্দের ইংরেজি Cyclone (সাইক্লোন) শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ Kukloma বা কাইক্লোস (kyklos) থেকে, যার অর্থ বৃত্ত বা চাকা। এটা অনেক সময় সাপের বৃত্তাকার কুন্ডলী বুঝাতেও ব্যবহৃত হয়। ১৮৪৮ সালে ক্যাপ্টেন হেনরি পিডিংটন তার ‘সেইলর’স হর্ণ বুক ফর দি ল’অফ স্টর্মস’(Sailor’s horn book for the law of storms) বইতে প্রথম সাইক্লোন শব্দটি ব্যবহার করেন। তারপর থেকেই ঘূর্ণিঝড় বুঝাতে সাইক্লোন শব্দের ব্যবহার শুরু হয়।

আটলান্টিক মহাসাগর এলাকা তথা আমেরিকার আশেপাশে ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের গতিবেগ যখন ঘণ্টায় ১১৭ কি.মি.-এর বেশি হয়, তখন জনগণকে এর ভয়াবহতা বুঝাতে হারিকেন শব্দটি ব্যবহার করা হয়। মায়া দেবতা হুরাকান- যাকে বলা হত ঝড়ের দেবতা, তার নাম থেকেই হারিকেন শব্দটি এসেছে।

তেমনিভাবে,প্রশান্ত মহাসাগর এলাকা তথা চীন, জাপানের আশেপাশে টাইফুন শব্দটি ব্যবহৃত হয়, যা ধারণা করা হয় চীনা শব্দ টাই-ফেং থেকে এসেছে, যার অর্থ প্রচন্ড বাতাস। অনেকে অবশ্য মনে করেন ফার্সি বা আরবি শব্দ তুফান থেকেও টাইফুন শব্দটি আসতে পারে।

বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুসারে, ১৯৬০-২০২০ সাল পর্যন্ত মোট ৩৭টি ছোট-বড় ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোনের তথ্য পাওয়া যায়। দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে বাংলাদেশের ওপর ঝড়-জলোচ্ছ্বাস প্রায় প্রতিবছরই আঘাত হানে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চলই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

আলোচিত ঘূর্ণিঝড়গুলো মধ্যে রয়েছে-
১৯৭০ সালের ভোলার ঘূর্ণিঝড়:
১৯৭০সালের ১২ই নভেম্বর (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) সবোর্চ্চ ২২৪ কিলোমিটার বেগে ভোলায় আঘাত হানা প্রলয়ঙ্করী সামুদ্রিক ঝড় ‘দ্য গ্রেট ভোলা সাইক্লোন’ নামে পরিচিতি পায়।ঐ সময় উপকূলীয় এলাকায় ১০-৩৩ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল।
জাতিসংঘের আওতাধীন বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা ২০১৭ সালের ১৮মে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়গুলোর একটি তালিকা প্রকাশ করে। ততে ভোলায় আঘাত হানা সাইক্লোনটিকেই ‘সবচেয়ে শক্তিশালী সাইক্লোন’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা।
এ প্রবলতম ঘূর্ণিঝড়ে ৫ লাখ মানুষ নিহত হন। অনেকে মনে করেন মৃতের সংখ্যা আসলে ৫ লাখেরও বেশি ছিল।

১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়: এই ঘূর্ণিঝড়কে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহতম ঘূর্ণিঝড় বলে আখ্যায়িত করা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ২০তম বছরে এসে বাংলাদেশ দেখে এই ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহতা। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল চট্টগ্রাম বিভাগের ওপর দিয়ে বয়ে যায় এই প্রলয়ঙ্করী ঝড়টি। এর সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৫০ কিলোমিটার। এতে ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয় সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চল। এই ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে। প্রায় ১০ লক্ষ ঘড়-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এতে প্রায় ১ কোটি মানুষ নিঃস্ব হয়। আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলার।

১৯৮৫ সালের ঘূর্ণিঝড়: উরিরচরের ঘূর্ণিঝড় নামে পরিচিত এই সাইক্লোনটি যার বাতাসের গতিবেগ ছিল ১৫৪ কিলোমিটার। তীব্র ঘূর্ণিঝড় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী এবং উপকূলীয় অঞ্চলে (সন্দ্বীপ হাতিয়া ও উড়ির চর) আঘাত হানে।

ঘূর্ণিঝড় সিডর: ২০০৭ সালে প্রথম স্পষ্ট নামকরণ করা ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’। ২২৩ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসা এবং ১৫-২০ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস নিয়ে আসা সেই ঘূর্ণিঝড় ছিল সিডর, যাকে সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম উইথ কোর অব হারিকেন উইন্ডস (সিডর) নাম দেয়া হয়।

ঘূর্ণিঝড় নার্গিস: ২০০৮ সালে ঘূর্ণিঝড় নার্গিস এর পূর্বাভাস দেয়া হলেও পরে তা বার্মার উপকূলে আঘাত হানে। মিয়ানমারে এর প্রভাবে বহু ক্ষতি হয়।

ঘূর্ণিঝড় আইলা: ২০০৯ সালে উত্তর ভারত মহাসাগরে জন্ম নেয়া দ্বিতীয় ঘূর্ণিঝড় ‘আইলা’। ওই বছরের ২১ মে ভারতের কলকাতা থেকে ৯৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে ঘূর্ণিঝড়টির উৎপত্তি। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে এই ঝড় আঘাত হানে ২৫ মে। এই ঝড় ভারতের দক্ষিণ-পূর্বাংশেও আঘাত হানে। মালদ্বীপের আবহাওয়াবিদরা আইলার নামকরণ করেন। আইলা অর্থ ডলফিন বা শুশুকজাতীয় জলচর প্রাণী। এতে সিডরের তুলনায় ক্ষয়ক্ষতি অনেক কম হয়েছিল।

ঘূর্ণিঝড় মহাসেন: বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণাংশে নিম্নচাপজনিত কারণে ২০১৩ সালের মে মাসের শুরুর দিকে উৎপত্তি ঘটে ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের। এতেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। কার্যত জনজীবন অচল হয়ে পড়ে।

ঝড়টির নাম প্রথমে মহাসেন দেয়া হলেও পরে নামটি নিয়ে বির্তক ওঠে শ্রীলংকার জাতীয়তাবাদী এবং সরকারী কর্মকর্তাদের মাঝে। দেশটির তৃতীয় শতকের সিংহল রাজার নাম থেকে মহাসেন নামকরণ হয় বলে জানা গেছে।
পরে শ্রীলংকার সংবাদমাধ্যমে মহাসেন নামহীন ঝড় বলে বর্ণনা করা হয় এবং রেকর্ডপত্রে ঝড়টির নতুন নাম নির্ধারণ করা হয় ‘ভিয়ারু’।

ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুঃ ২০১৬
রোয়ানু একটি ছোট ঘূর্নিঝড় যা ২১ মে বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চলে এবং ভারতে আংশিক আঘাত হানে। পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ১৩৫ কিলোমিটার দূরে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু এর উৎপত্তিস্থল। ধারনা করা হয় ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর ব্যাপ্তি ছিল দুটি বাংলাদেশের সমান আকৃতির। ঘূর্ণিঝড়টির প্রাক্কালে এটি চট্টগ্রাম তটরেখা বরাবর আঘাত হানার সম্ভবনা ছিল।আনুষ্ঠানিকভাবে ২০ লক্ষ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দে স্থানান্তর করার ঘোষণা দেওয়া হয়। ঘূর্নিঝড় এর ফলে অনেক বড় বড় ঢেউ উঠে। সরকারি হিসাবে ২৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বিভিন্ন স্থানে প্রায় ১০০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো বাতাস বয়ে যাওয়ায় লক্ষাধিক ঘরবাড়ি তছনছ হয়েছে। জলোচ্ছ্বাসে অধিকাংশ উপকূলীয় জেলার বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার ফলে মানুষের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, মাছের ঘের ইত্যাদি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।এখনো ৪০ জন নিখোঁজ রয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা: ২০১৭ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূলে প্রবল বেগের ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’। কক্সবাজারের টেকনাফে ১৩৫ কিমি বেগে আঘাত হানে এটি। এসময় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ও কক্সবাজার উপকূলে ১০ নম্বর মহা বিপদসংকেত জারি করা হয়। এছাড়া এতে মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর সংকেত দেখাতে বলা হয়। এই ঝড়ের আঘাতে কক্সবাজার উপকূলের শতাধিক বাড়ি-ঘর বিধ্বস্ত হয়।
‘মোরা’ একটি থাই শব্দ। এর ইংরেজি হচ্ছে- ‘স্টার অব দ্য সি’। বাংলায় ‘সাগরের তারা’।

ঘূর্ণিঝড় ফণী: ২০১৯ সালের ৪ মে সকালে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা, যশোর ও খুলনা অঞ্চল এবং এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ফণী। তবে আঘাতের পূর্বেই এটি দুর্বল হয়ে যায়। ফণীর প্রভাবে ও আঘাতে বাংলাদেশে মোট ১৮ জনের মৃত্যু হয়। ঘূর্ণিঝড় ফণীর কারণে বাংলাদেশে ৫৩৬ কোটি ৬১ লাখ ২০ হাজার টাকার ক্ষতি হয় বলে জানায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।

ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ নাম দিয়েছে বাংলাদেশ।
এর অর্থ সাপ বা ফণা তুলতে পারে এমন প্রাণী। ইংরেজিতে (Fani) লেখা হলেও এর উচ্চারণ ফণী।

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলঃ ২০১৯
বার বার দিক বদল করে ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর অতিপ্রবল এই ঘূর্ণিঝড় বুলবুল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সাগর দ্বীপ উপকূলে আঘাত হানার পর স্থলভাগ দিয়ে বাংলাদেশে আসায় ক্ষয়ক্ষতি আশঙ্কার চেয়ে কম হয়৷ ঝড়ে মারা যায় ২৪ জন৷ ৭২ হাজার ২১২ টন ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়, যার আর্থিক মূল্য ২৬৩ কোটি পাঁচ লাখ টাকা৷ ক্ষতি হয়েছে সুন্দরবনেরও৷

সুপার ঘুর্ণিঝড় আম্পানঃ ২০২০
২০২০ সালের ২০ মে বাংলাদেশে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় আম্পান। আম্পান সম্পর্কে বলা হচ্ছিল, এটি শতাব্দীর অন্যতম শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়, যার ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা অনেক বেশি হবে বলে সতর্ক করা হয়েছিল বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে। তবে দিক পরিবর্তন করে দূর্বল হয়ে বাংলাদেশে আঘাত হানায় এর ক্ষয়ক্ষতির পরিমান কম হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে এখন পর্যন্ত নারী ও শিশুসহ এগারোজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এদেরমধ্যে পটুয়াখালীতে শিশুসহ দু’জন, ভোলায় এক বৃদ্ধসহ দু’জন, পিরোজপুর দু’জন, যশোরে মা-মেয়ে, সাতক্ষীরায় এক নারী, বরিশালে এক কিশোর ও বরগুনায় একজনের মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে। দেশে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। তবে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তাণ্ডবে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের এক কোটি ৬৭ লাখ ৭৩ হাজার ৯০০ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ

আম্পান’কথার অর্থ আকাশ।এটি একটি থাই শব্দ। পুরাতন তালিকার সর্বশেষ নাম ছিল ‘আম্পান’।ঘূর্ণিঝড় আম্পানের নামকরণ প্রস্তাব করে থাইল্যান্ড।থাই ভাষায় ‘আম্পান’ অর্থ দৃঢ়তা, স্বাধীন চিত্ত, শক্তি।

ইয়াস/যশ ২০২১:
ইয়াস (আনন্দবাজার পত্রিকা ও ভারতীয় গণমাধ্যম একে বলছে যশ) এর নাম দিয়েছে ওমান। (ওয়াই ডাবল এ এস) ওমানের ভাষায় যশ মানে হচ্ছে দুঃখ বা হতাশা। ইয়াস একটি পার্সি শব্দ। এর অর্থ জেসমিন বা জুৃঁই ফুলের মতই সুগন্ধি ঝিরিঝিরে কোন সাদা ফুল।তবে এর সুমধুর নামের সাথে কাজের কোন মিল ছিলনা ।

বাংলাদেশে আঘাত হানা যত ঘূর্ণিঝড়,ঝড় ও ওজলোচ্ছ্বাসের কালপঞ্জি:

১৫৮৪ বাকেরগঞ্জ এবং পটুয়াখালী জেলায় আঘাত হানে। বজ্রবিদ্যুৎসহ হারিকেনের বৈশিষ্ট্য সম্বলিত এ ঝড় পাঁচ ঘণ্টা স্থায়ী ছিল; কেবল উঁচু স্থানে স্থাপিত মন্দিরগুলি ছাড়া সমস্ত ঘরবাড়ি নিমজ্জিত হয় এবং বহু নৌযান ডুবে যায়। মানুষ ও গৃহপালিত জীব মিলিয়ে প্রায় ২০,০০,০০০ প্রাণহানি ঘটে।

১৫৮৫ মেঘনা মোহনায় আঘাত হানে। প্রচন্ড ঝড়ো প্লাবনের ফলে বাকেরগঞ্জের পূর্বাঞ্চল সম্পূর্ণ প্লাবিত হয়। প্রাণহানি এবং ফসলের ক্ষতি ছিল সামান্য।

১৭৯৭ (নভেম্বর) তীব্র ঘূর্ণিঝড় চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপর দিয়ে বয়ে যায়। সাধারণ ঘরবাড়ি মাটির সঙ্গে মিশে যায় এবং চট্টগ্রাম বন্দরে দুটি জাহাজ নিমজ্জিত হয়।

১৮২২ (মে) বরিশাল, হাতিয়া দ্বীপ এবং নোয়াখালী জেলায় তীব্র ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানে। সরকারি নথিপত্রাদি পানিতে ভেসে যায়, ৪০,০০০ মানুষের মৃত্যু এবং ১,০০,০০০ গবাদিপশুর জীবনহানি ঘটে।

১৮৩১ (অক্টোবর) জলোচ্ছ্বাস ও প্লাবনে বরিশাল অঞ্চল আক্রান্ত হয়। মানুষ ও গবাদিপশুর প্রাণহানি ঘটে (ক্ষয়ক্ষতির সঠিক হিসাব পাওয়া যায় না)।

১৮৭২ (অক্টোবর) কক্সবাজারের উপর দিয়ে ঘূর্ণিঝড় বয়ে যায়। ক্ষয়ক্ষতির সঠিক হিসাব পাওয়া না গেলেও বহু মানুষ ও গবাদিপশুর প্রাণহানি ঘটে।

১৮৭৬ (৩১ অক্টোবর) মেঘনা মোহনা এবং চট্টগ্রাম, বরিশাল ও নোয়াখালী উপকুলে তীব্র ঝড়ো জলোচ্ছ্বাস ও প্লাবন সংঘটিত হয়। এ ঝড়ের সঙ্গে সংঘটিত ভয়ংকর জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা ছিল ১২.২ মিটার (৪০ ফুট)। এ সময় বিক্ষুব্ধ বঙ্গোপসাগরের জোয়ারের জলস্রোত মেঘনার মোহনা পর্যন্ত বিস্তৃত হওয়ায় ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। এতে প্রায় ২,০০,০০০ মানুষ মারা যায়। আরও অধিক মানুষ মারা যায় দুর্যোগ পরবর্তী মহামারী এবং দুর্ভিক্ষে।

১৮৯৭ (২৪ অক্টোবর) হারিকেনের তীব্রতাসহ প্রচন্ড ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস চট্টগ্রাম ও কুতুবদিয়া দ্বীপে আঘাত হানে। সমুদ্র তীরবর্তী মূলভূমির গ্রামসমূহ ভেসে যায়। দুর্যোগে প্রাথমিকভাবে মৃত্যু হয় ১৪,০০০ মানুষের এবং পরবর্তী সময়ে মহামারীর ( কলেরা) কারণে আরও ১৮,০০০ জনের মৃত্যু হয়।

১৮৯৮ (মে) ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও প্লাবন টেকনাফে আঘাত হানে। ক্ষয়ক্ষতির সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না।

১৯০৪ (নভেম্বর) সোনাদিয়ার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া ঘূর্ণিঝড়ে ১৪৩ জনের মৃত্যু এবং বহু মাছ ধরার নৌকা ধ্বংস হয়।

১৯০৯ (১৬ অক্টোবর) খুলনা অঞ্চলে সংঘটিত ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও প্লাবনে ৬৯৮ জন মানুষ ও ৭০,৬৫৪টি গবাদিপশুর প্রাণহানি ঘটে।

১৯১৩ (অক্টোবর) ঘূর্ণিঝড়ে মুক্তাগাছা উপজেলার (ময়মনসিংহ) ৫০০ মানুষের মৃত্যুসহ বহু গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়।

১৯১৭ (২৪ সেপ্টেম্বর) হারিকেনের তীব্রতাসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড়ে খুলনায় ৪৩২ ব্যক্তি নিহত এবং ২৮,০২৯ গবাদিপশু মারা যায়।

১৯৪১ (মে) মেঘনা মোহনার পূর্ব অংশে সংঘটিত ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে বহু মানুষ ও গবাদিপশুর প্রাণহানি ঘটে।

১৯৪২ (অক্টোবর) তীব্র ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবনের প্রচুর বন্যপ্রাণী মারা যায় এবং নৌযানের ক্ষয়ক্ষতি হয় (সঠিক হিসাব পাওয়া যায় না)।

১৯৪৮ (১৭-১৯ মে) চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীর মধ্যবর্তী এলাকার উপর দিয়ে প্রবাহিত ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ১,২০০ মানুষ ও ২০,০০০ গবাদিপশুর প্রাণহানি ঘটে।

১৯৫৮ (১৬-১৯) মেঘনা মোহনার পূর্ব ও পশ্চিমাংশ এবং বরিশালের পূর্বাঞ্চল ও নোয়াখালীতে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ৮৭০ জন মানুষ ও ১৪,৫০০ গবাদিপশুর প্রাণহানি ঘটে এবং ফসল বিনষ্ট হয়।

১৯৫৮ (২১-২৪ অক্টোবর) চট্টগ্রামের সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চল ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত হয়। এতে অসংখ্য মানুষ নিহত হয়, প্রায় এক লক্ষ পরিবার গৃহহীন হয় এবং সরকার গৃহনির্মাণ ঋণ বিতরণ করে।

১৯৬০ (৯-১০ অক্টোবর) মেঘনার মোহনার পূর্বাঞ্চলে (নোয়াখালী, বাকেরগঞ্জ, ফরিদপুর এবং পটুয়াখালী) ঘণ্টায় ২০১ কিমি বেগে বায়ু প্রবাহিত হয় এবং সর্বোচ্চ ৩.০৫ মিটার জলোচ্ছ্বাসসহ তীব্র ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয় চর জববার, চর আমিনা, চর ভাটা, রামগতি, হাতিয়া এবং নোয়াখালীতে। প্রায় ৩,০০০ মানুষের মৃত্যু, ৬২,৭২৫টি বাড়িঘর ধ্বংস এবং প্রায় ৯৪,০০০ একর জমির ফসল সম্পূর্ণ বিনষ্ট ও হাজার হাজার গবাদিপশু মারা যায়।

১৯৬০ (৩০-৩১ অক্টোবর) চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, বাকেরগঞ্জ, ফরিদপুর, পটুয়াখালী এবং মেঘনা মোহনার পূর্বাঞ্চলে ঘণ্টায় ২১০ কিমি বায়ুপ্রবাহ ও ৪.৬ মিটার থেকে ৬.১ মিটার জলোচ্ছ্বাসসহ তীব্র ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। এতে ৫,৬৮,১৬১টি বাড়িঘর ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়, বিশেষত হাতিয়া দ্বীপের ৭০% ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়। দুটি বৃহৎ সমুদ্রগামী জাহাজ তীরে আছড়ে পড়ে, কর্ণফুলি নদীতে ৫-৭টি জাহাজ নিমজ্জিত হয় এবং মোট প্রায় ১০,০০০ মানুষের মৃত্যু ঘটে।

১৯৬১ (৯ মে) ঘণ্টায় ১৬১ কিমি বায়ুপ্রবাহ ও ২.৪৪-৩.০৫ মিটার জলোচ্ছ্বাসসহ তীব্র ঘূর্ণিঝড় বাগেরহাট ও খুলনা সদরের উপর দিয়ে বয়ে যায়। নোয়াখালী-হরিনারায়নপুরের রেলযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয় এবং চর আলেকজান্ডারে বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটে। মোট ১১,৪৬৮ জনের মৃত্যু এবং প্রায় ২৫,০০০ গবাদিপশু ধ্বংস হয়।

১৯৬২ (২৬-৩০ অক্টোবর) ঘণ্টায় ১৬১ কিমি বায়ুপ্রবাহ ও ২.৫-৩.০ মিটার জলোচ্ছ্বাসসহ তীব্র ঘূর্ণিঝড় ফেনীতে আঘাত হানে। প্রায় ১,০০০ জনের মৃত্যু এবং বহু গবাদিপশুর প্রাণহানি ঘটে।

১৯৬৩ (২৮-২৯ মে) তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কক্সবাজারসহ উপকুলবর্তী দ্বীপ কুতুবদিয়া, সন্দ্বীপ, হাতিয়া, মহেশখালি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চট্টগ্রামে ৪.৩-৫.২ মিটার উঁচু জলোচ্ছ্বাস সংঘটিত হয়। সর্বোচ্চ বায়ুপ্রবাহ ছিল ঘণ্টায় ২০৩ কিমি এবং কক্সবাজারে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৬৪ কিমি। এ দুর্যোগে বিপুল সম্পদ বিনষ্ট হয়; কমপক্ষে ১১,৫২০ জন মানুষের মৃত্যু ঘটে, ৩২,৬১৭ গবাদিপশু মারা যায়, বাড়িঘর ধ্বংস হয় ৩,৭৬,৩৩২টি, ৪,৭৮৭টি নৌযান নিমজ্জিত হয় এবং বহু ফসল বিনষ্ট হয়।

১৯৬৫ (১১-১২ মে) ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৬২ কিমি বেগে ৩.৭ মিটার উঁচু ঝড়ো জলোচ্ছ্বাসসহ তীব্র ঘূর্ণিঝড় বরিশাল ও বাকেরগঞ্জে আঘাত হানে। জীবনহানি ছিল প্রায় ১৯,২৭৯, বরিশালেই মৃতের সংখ্যা ছিল ১৬,৪৫৬।

১৯৬৫ (১৪-১৫ ডিসেম্বর) কক্সবাজার ও সংলগ্ন সমুদ্র তীরবর্তী এলাকা, পটুয়াখালী ৪.৭-৬ মিটার উঁচু জলোচ্ছ্বাসসহ তীব্র ঘূর্ণিঝড়ের শিকার হয়। কক্সবাজারে সর্বোচ্চ বায়ুপ্রবাহ ছিল ঘণ্টায় ২১০ কিমি; কক্সবাজার, পটুয়াখালী এবং সোনাদিয়া, রাঙ্গাদিয়া ও হামিদিয়া দ্বীপের উপকূল এলাকায় ১০ নম্বর বিপদ সংকেত প্রদর্শন করা হয়। কক্সবাজারের ৪০,০০০ লবণ ক্ষেত্র প্লাবিত এবং মোট ৮৭৩ জন মানুষ নিহত হয়।

১৯৬৬ (১ অক্টোবর) সন্দ্বীপ, বাকেরগঞ্জ, খুলনা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও কুমিল্লায় ঘণ্টায় ১৪৬ কিমি বায়ুপ্রবাহসহ তীব্র ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে এবং ৪.৭-৯.১ মিটার উঁচু জলোচ্ছ্বাস সংঘটিত হয়। এ দুর্যোগে মোট ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ১৫,০০,০০০; নোয়াখালী ও বাকেরগঞ্জ এলাকায় মানুষ ও গবাদিপশুর মৃত্যু যথাক্রমে ৮৫০ এবং ৬৫,০০০।

১৯৬৯ (১৪ এপ্রিল) ঢাকা জেলার ডেমরায় টর্নেডো আঘাত হানে। বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৬৪৩ কিমি; মৃতের সংখ্যা ৯২২ এবং ১৬,৫১১ জন আহত; উপদ্রুত অঞ্চলে আর্থিক ক্ষতি হয় ৪ থেকে ৫ কোটি টাকা।

১৯৭০ (১২-১৩ নভেম্বর) বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা বেশি প্রাণ ও সম্পদ বিনষ্টকারী ধ্বংসাত্মক ঘূর্ণিঝড় সংঘটিত হয়। হারিকেনের তীব্রতা নিয়ে প্রচন্ড বাতাস দু’দিন ধরে বারবার আঘাত হানে চট্টগ্রামে এবং সে সঙ্গে বরগুনা, খেপুপাড়া, পটুয়াখালী, চর বোরহানউদ্দিন-এর উত্তরাঞ্চল, চর তজিমুদ্দিন, মাইজদির দক্ষিণাঞ্চল ও হরিণঘাটায়। স্মরণকালের সর্বাপেক্ষা বেশি জীবন, সম্পদ ও ফসলের ধ্বংস সাধন হয় এ দুর্যোগে। সরকারি হিসাব মোতাবেক ৫,০০,০০০ মানুষের মৃত্যু ঘটেছিল এবং ৩৮,০০০ সমুদ্রনির্ভর মৎস্যজীবী ও ৭৭,০০০ অভ্যন্তরীণ মৎস্যজীবী মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এক হিসাবে দেখা যায় যে ৪৬,০০০ জন অভ্যন্তরীণ মৎস্যজীবী ঘূর্ণিঝড় চলাকালে মাছ ধরার সময় মৃত্যুবরণ করে। মোট ২০,০০০ এর অধিক মাছ ধরার নৌকা ধ্বংস হয়। সম্পদ ও ফসলের ক্ষতির পরিমাণ বিশাল; দশ লক্ষেরও অধিক গবাদিপশুর মৃত্যু হয়; ৪,০০,০০০ ঘরবাড়ি এবং ৩,৫০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভয়ানকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৯৭০ সালের এ ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় প্রায় ২২২ কিমি এবং জলোচ্ছ্বাসের সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল প্রায় ১০.৬ মিটার। সমুদ্রে ভরাজোয়ারের সময় ঘূর্ণিঝড়টি সংঘটিত হওয়ায় এমন প্রলয়ঙ্করী জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়েছিল।

১৯৭১ (৫-৬ নভেম্বর) চট্টগ্রামের উপকূলবর্তী অঞ্চলে তীব্র ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। মানুষ ও গবাদিপশুর প্রাণহানি ঘটে (ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ পাওয়া যায় নি)।

১৯৭১ (২৮-৩০ নভেম্বর) সুন্দরবনের উপকূলীয় অঞ্চলে ঘণ্টায় ৯৭-১১৩ কিমি বায়ুপ্রবাহ ও এক মিটারের কম উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসসহ ঘূর্ণিঝড় সংঘটিত হয়। সমগ্র খুলনা অঞ্চলে ঝড়ো আবহাওয়া বিরাজ করে এবং খুলনা শহরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়।

১৯৭৩ (৬-৯ ডিসেম্বর) সুন্দরবনের উপকূলীয় অঞ্চলে জলোচ্ছ্বাসসহ তীব্র ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। পটুয়াখালীর উপকুলবর্তী নিম্নাঞ্চল এবং সমুদ্র তীরবর্তী দ্বীপসমূহ প্লাবিত হয়।

১৯৭৪ (১৩-১৫ আগস্ট) ঘণ্টায় ৮০.৫ কিমি বায়ুপ্রবাহসহ ঘূর্ণিঝড় খুলনার উপর দিয়ে বয়ে যায়। প্রায় ৬০০ মানুষের মৃত্যু ও প্রচুর গবাদিপশুর প্রাণহানি ঘটে।

১৯৭৪ (২৪-২৮ নভেম্বর) কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের উপকূলীয় অঞ্চল এবং সমুদ্র তীরবর্তী দ্বীপসমূহে ঘণ্টায় ১৬১ কিমি বেগে বায়ুপ্রবাহসহ তীব্র ঘূর্ণিঝড় ও ২.৮-৫.২ মিটার উঁচু জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানে। প্রায় ২০০ মানুষ ও ১,০০০ গবাদিপশু নিহত হয় এবং ২,৩০০ ঘরবাড়ি নিশ্চিহ্ন হয়।

১৯৭৫ (৯-১২ মে) ভোলা, কক্সবাজার এবং খুলনায় ঘণ্টায় ৯৬.৫ থেকে ১১২.৬ কিমি বায়ুপ্রবাহসহ ঘূর্ণিঝড় সংঘটিত হয়। ৫ ব্যক্তির মৃত্যু এবং কিছুসংখ্যক মৎস্যজীবী নিখোঁজ হয়।

১৯৭৭ (৯-১২ মে) খুলনা, নোয়াখালী, পটুয়াখালী, বরিশাল, চট্টগ্রাম এবং উপকূলবর্তী দ্বীপসমূহে ঘণ্টায় ১১২.৬৩ কিমি বেগে ঘূর্ণিঝড় প্রবাহিত হয়। মানুষ ও গবাদিপশুর প্রাণহানি এবং বেশ কিছু নৌযান নিখোঁজ (ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায় নি) হয়।

১৯৮৩ (১৪-১৫ অক্টোবর) উপকূলবর্তী দ্বীপসমূহ এবং চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীর চরাঞ্চলে ঘণ্টায় ১২২ কিমি বায়ুপ্রবাহসহ তীব্র ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। ৪৩ ব্যক্তি নিহত, ৬টি মাছধরার ট্রলার ও ১টি যন্ত্রচালিত নৌকা নিমজ্জিত হয়। ১৫০ জন মৎস্যজীবী ও ১০০ মাছধরার নৌকা নিখোজ হয় এবং ২০% আমন ফসল বিনষ্ট হয়।

১৯৮৩ (৫-৯ নভেম্বর) ঘণ্টায় ১৩৬ কিমি বেগে বায়ুপ্রবাহ ও ১.৫২ মিটার উঁচু জলোচ্ছ্বাসসহ তীব্র ঘূর্ণিঝড় চট্টগ্রাম, কুতুবদিয়ার সন্নিকটস্থ কক্সবাজার উপকূল ও সেন্ট মার্টিন দ্বীপের নিম্নাঞ্চল, টেকনাফ, উখিয়া, ময়িপং, সোনাদিয়া, বরিশাল, পটুয়াখালী এবং নোয়াখালীর উপর দিয়ে বয়ে যায়। ৫০টি নৌকা সহ ৩০০ মৎস্যজীবী নিখোঁজ হয় এবং ২,০০০ ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়।

১৯৮৫ (২৪-২৫ মে) তীব্র ঘূর্ণিঝড় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী এবং উপকূলবর্তী দ্বীপসমূহে (সন্দ্বীপ, হাতিয়া এবং উড়িরচর) আঘাত হানে। বাতাসের গতিবেগ ছিল চট্টগ্রামে ১৫৪ কিমি/ঘণ্টা, সন্দ্বীপে ১৪০ কিমি/ঘণ্টা, কক্সবাজারে ১০০ কিমি/ঘণ্টা এবং সেইসঙ্গে ৩.০-৪.৬ মিটার উঁচু জলোচ্ছ্বাস সংঘটিত হয়। এতে ১১,০৬৯ ব্যক্তি নিহত হয় এবং ৯৪,৩৭৯টি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত ও মোট ১,৩৫,০৩৩ পশুসম্পদ বিনষ্ট হয়। মোট ৭৪ কিমি সড়ক ও বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

১৯৮৬ (৮-৯ নভেম্বর) উপকূলবর্তী দ্বীপসমূহ এবং চট্টগ্রাম, বরিশাল, পটুয়াখালী ও নোয়াখালীর চরাঞ্চল ঘূর্ণিঝড়ের শিকার হয়। বাতাসের গতিবেগ ছিল প্রতি ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ১১০ কিমি এবং খুলনায় ৯০ কিমি। এতে ১৪ ব্যক্তি নিহত হয় এবং ৯৭,২০০ হেক্টর জমির ফসল বিনষ্ট হয়।

১৯৮৮ (২৪-৩০ নভেম্বর) যশোর, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, উপকূলবর্তী দ্বীপসমূহ এবং খুলনা-বরিশালের চরাঞ্চলের উপর দিয়ে ঘণ্টায় ১৬২ কিমি বেগে বায়ুপ্রবাহসহ তীব্র ঘূর্ণিঝড় বয়ে যায়। মংলায় ৪.৫ মিটার উঁচু জলোচ্ছ্বাস সংঘটিত হয়। এতে ৫,৭০৮ ব্যক্তি নিহত হয় এবং ৬৫,০০০ গবাদিপশু মারা যায়। বহুসংখ্যক বন্য পশু মারা যায় – তার মধ্যে হরিণ ১৫,০০০ ও রয়েল বেঙ্গল টাইগার ৯; এবং ফসল বিনষ্ট হয় প্রায় ৯৪১ কোটি টাকার।

১৯৯১ (২৯ এপ্রিল) এ ঝড়টিকে ‘১৯৯১-এর প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়’ নামে চিহ্নিত করা হয়। এটি ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল রাত্রে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করে। ঝড়টির উৎপত্তি হয় প্রশান্ত মহাসাগরে, বাংলাদেশের ভূখন্ড থেকে ৬,০০০ কিমি দূরে। বাংলাদেশের উপকূলে পৌঁছাতে ঝড়টির সময় লেগেছিল ২০ দিন। আকারের দিক থেকে ঘূর্ণিঝড়টির বিস্তার ছিল বাংলাদেশের আকৃতির চেয়েও বড়। কেন্দ্রীভূত মেঘপুঞ্জের ব্যাস ছিল ৬০০ কিমি। বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল সন্দ্বীপে ঘণ্টায় ২২৫ কিমি। এ ছাড়া অন্যান্য ঝড় কবলিত অঞ্চলে বাতাসের গতিবেগ ছিল নিম্নরূপ: চট্টগ্রামে ঘণ্টায় ১৬০ কিমি, খেপুপাড়া (কলাপাড়া) ১৮০ কিমি, কুতুবদিয়া ১৮০ কিমি, কক্সবাজার ১৮৫ কিমি এবং ভোলা ১৭৮ কিমি। নোয়া-১১ (NOAA-11) উপগ্রহের ২৯ এপ্রিল ১৩ঃ ৩৮ ঘণ্টায় তোলা দূর অনুধাবন চিত্র অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়টির বাতাসের প্রাক্কলিত সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় প্রায় ২৪০ কিমি। স্পারসো (SPARRSO) সর্বপ্রথম ২৩ এপ্রিল তারিখে নোয়া-১১ এবং জিএমএস-৪ (GMS-4) উপগ্রহগুলি থেকে গৃহীত চিত্র বিশ্লেষণ করে ঘূর্ণিঝড়টিকে একটি নিম্নচাপ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল (যার বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৬২ কিমি এর নিচে)। নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয় ২৫ এপ্রিল। প্রাথমিক অবস্থায় ঘূর্ণিঝড়টি কিছুটা উত্তরপশ্চিম দিকে পরে উত্তর দিকে সরে যায়। ২৮ এপ্রিল থেকে এটি উত্তরপূর্ব দিকে সরে আসা শুরু করে এবং ২৯ এপ্রিল রাতে চট্টগ্রাম বন্দরের উত্তর দিয়ে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করে। ঘূর্ণিঝড়টি ওই দিন সন্ধ্যা থেকেই উপকূলীয় দ্বীপ সমূহে (যেমন নিঝুম দ্বীপ, মনপুরা, ভোলা, সন্দ্বীপ) আঘাত হানতে শুরু করেছিল। ঘূর্ণিঝড়কালীন ঝড়ো জলোচ্ছ্বাসের প্রাক্কলিত উচ্চতা ছিল ৫ থেকে ৮ মিটার। এ দুর্যোগে জীবন ও সম্পদ ক্ষতির পরিমাণ বিশাল। সম্পদের প্রাক্কলিত আর্থিক ক্ষতি ৬,০০০ কোটি টাকা। মোট ১,৫০,০০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল, গবাদিপশু মারা যায় ৭০,০০০।

১৯৯১ (৩১ মে থেকে ২ জুন) উপকূলবর্তী দ্বীপসমূহ এবং পটুয়াখালী, বরিশাল; নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের চরাঞ্চলে ঘণ্টায় ১১০ কিমি বায়ুপ্রবাহ ও ১.৯ মিটার উঁচু জলোচ্ছ্বাসসহ তীব্র ঘূর্ণিঝড় সংঘটিত হয়। মানুষ ও গবাদিপশুর প্রাণহানিসহ বেশ কিছু নৌযান নিখোঁজ হয় এবং ফসল বিনষ্ট হয়।

১৯৯৪ (২৯ এপ্রিল ৩মে) উপকূলবর্তী দ্বীপ এবং কক্সবাজারের চরাঞ্চল ঘণ্টায় ২১০ কিমি বায়ুপ্রবাহসহ তীব্র ঘূর্ণিঝড়ের শিকার হয়। প্রায় ৪০০ মানুষের মৃত্যু এবং ৮,০০০ গবাদিপশুর প্রাণহানি ঘটে।

১৯৯৫ (২১-২৫ নভেম্বর) উপকূলবর্তী দ্বীপ এবং কক্সবাজারের চরাঞ্চলে ঘণ্টায় ২১০ কিমি বেগে বায়ুপ্রবাহসহ তীব্র ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। প্রায় ৬৫০ জনের মৃত্যু ও ১৭,০০০ গবাদিপশুর প্রাণহানি ঘটে।

১৯৯৭ (১৬-১৯ মে) উপকূলবর্তী দ্বীপসমূহ এবং চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী ও ভোলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল ঘণ্টায় ২২৫ কিমি বায়ুপ্রবাহ ও ৩.০৫ মিটার উঁচু জলোচ্ছ্বাসসহ তীব্র ঘূর্ণিঝড়ের (হারিকেন) শিকার হয়। সরকার ও জনসাধারণের যথাযথ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে এ মহাদুর্যোগে মাত্র ১২৬ জন ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে।

১৯৯৭ (২৫-২৭ সেপ্টেম্বর) হারিকেনের তীব্রতাসম্পন্ন প্রবল ঘূর্ণিঝড় ও ১.৮৩ থেকে ৩.০৫ মিটার উঁচু জলোচ্ছ্বাস উপকূলবর্তী দ্বীপসমূহ এবং চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী এবং ভোলার চরাঞ্চলের উপর দিয়ে বয়ে যায়।

১৯৯৮ (১৬-২০ মে) উপকূলবর্তী দ্বীপসমূহ এবং চট্টগ্রাম কক্সবাজার ও নোয়াখালীর চরাঞ্চল ঘণ্টায় ১৫০ কিমি বায়ুপ্রবাহ ও ১.৮৩ থেকে ২.৪৪ মিটার উঁচু জলোচ্ছ্বাসসহ তীব্র ঘূর্ণিঝড়ের শিকার হয়।

১৯৯৮ (১৯-২২ নভেম্বর) উপকূলবর্তী দ্বীপসমূহ এবং খুলনা বরিশাল ও পটুয়াখালীর চরাঞ্চল ঘণ্টায় ৯০ কিমি বায়ুপ্রবাহ ও ১.২২ থেকে ২.৪৪ মিটার উঁচু জলোচ্ছ্বাসসহ ঘূর্ণিঝড়ের শিকার হয়।

২০০৭ (১৫-১৭ নভেম্বর) ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’ বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে ভূমিধ্বসের মাধ্যমে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি সাধন করে যাতে প্রায় তিন সহস্রাধিক মানুষের প্রাণহানী ঘটে।

২০০৮ (৩ মে) ঘুর্ণিঝড় ‘নার্গিস’ উত্তর ভারত মহাসাগরে সৃষ্টি হয়। যা মায়ানমারের উপকূলে আঘাত হানে। এতে প্রায় ১,৩৮,০০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।

২০০৮ (২৭ অক্টোবর) ঘুর্ণিঝড় ‘রেশমী’ বাংলাদেশের দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানে। বাতাসের গতি ছিল ঘণ্টায় ৮০ কিমি এবং প্রচুর ঝড়বৃষ্টিতে জাহাজ ও মৎস্যশিল্পের ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়।

২০০৯ (১৯-২১ এপ্রিল) ঘূর্ণিঝড় ‘বিজলি’ বাংলাদেশে মৃদুভাবে আঘাত হানে এবং এই ঝড়ের প্রভাবে চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার অঞ্চলে কিছু কাঁচা ঘরবাড়ি ও ফসলী জমি ক্ষয়ক্ষতি ছাড়া তেমন বৃহত্তর কোন ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।

২০০৯ (২৭-২৯ মে) ঘুর্ণিঝড় ‘আইলা’ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিাঞ্চলে ১৫টি উপকূলীয় জেলায় আঘাত হানে যাতে প্রায় দেড় শতাধিক মানুষের প্রানহানি ঘটে, দুই লক্ষাধিক ঘরবাড়ি এবং তিন লক্ষাধিক একর আবাদি জমি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়।

তারপরও সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে আমরা আশা হারাতে চাই না। শেষ করি কবি আল মাহমুদের কবিতার মাধ্যমে।

‘যে বাতাসে বুনোহাঁসের ঝাঁক ভেঙে যায়
জেটের পাখা দুমড়ে শেষে আছাড় মারে
নদীর পানি শূন্যে তুলে দেয় ছড়িয়ে
নুইয়ে দেয় টেলিগ্রাফের থামগুলোকে।
সেই পবনের কাছে আমার এই মিনতি
তিষ্ঠ হাওয়া, তিষ্ঠ মহাপ্রতাপশালী,
গরিব মাঝির পালের দড়ি ছিঁড়ে কী লাভ?
কী সুখ বলো গুড়িয়ে দিয়ে চাষীর ভিটে?
বেগুন পাতার বাসা ছিঁড়ে টুনটুনিদের
উল্টে ফেলে দুঃখী মায়ের ভাতের হাঁড়ি
হে দেবতা, বলো তোমার কী আনন্দ,
কী মজা পাও বাবুই পাখির ঘর উড়িয়ে?

সংকলক: এস এম শাহনূর
কবি ও গবেষক

Some text

ক্যাটাগরি: ইতিহাস

[sharethis-inline-buttons]

আমি প্রবাসী অ্যাপস দিয়ে ভ্যাকসিন…

লঞ্চে যৌন হয়রানি