প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর প্রাথমিক থেকে উচ্চামাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠা গত ১২ সেপ্টেম্বর খুলেছে। আর ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে দেশের সকল মেডিকেল কলেজেও সশরীরে ক্লাস শুরু হয়েছে। কিন্তু খুলেনি দেশের সব সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বার। সরকার বাহাদুরের এহেন সিদ্ধান্তে উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা চড়ম ক্ষুদ্ধ ও হতাশাগ্রস্ত।
এই অবস্থায় দেশের সকল প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বিশ্ববিদ্যায় খোলার ব্যাপারে বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। এইদিকে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার উল্লেখ্যযোগ্য হারে কমতে শুরু করেছে। স্বাস্থ্য অধিতপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ২৮ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ,যা আগের দিন ৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ ছিল।
অবশেষে সরকারের বোধোদয় হয়। এমতাবস্থায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে দশটায় বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এক ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত ভার্চুয়াল বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনিসহ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষামন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সভাপতি উপস্থিত হন এবং নানান দিক বিচার-বিশ্লেষন করে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বরের পর থেকে যেকোনো সময় সব বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। সরকারের এই যুগোপযোগী সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে এখন স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সেপ্টেম্বরের ২৭ তারিখের পর সুবিধাজনক সময়ে তাদের স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিতে পারবে। অতঃপর দেশের সব বিশ্ববিদ্যালের বন্ধ দ্বার উন্মুক্ত হবে। এটি সত্যিই উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিদ্যার্থীদের জন্য একটি মহাআনন্দের সংবাদ!
২৭ সেপ্টেম্বরের পর থেকে নতুন করে প্রাণ ফিরে পাবে আমাদেরদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনিন্দ্যসুন্দর ক্যাম্পাসগুলো। দীর্ঘ দেড় বছর পর এক সহপাঠির সাথে আরেক সহপাঠির দেখা হবে। বিভিন্ন অনুষদ ভবনগুলো শিক্ষার্থীর কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠবে তারুণ্যের উচ্ছ্বাস ও উল্লাসে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখা খুবই জরুরি। বিষয়টি হলো-আগামী ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীকে অবশ্যই করোনার টিকা পাওয়া জন্যে নিবন্ধন করতে হবে। এক্ষেত্রে যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন সনদ নেই তারাও শুধু স্টুডেন্ট আইডি দিয়ে টিকা নিবন্ধন করতে পারবে। এছাড়াও নিবন্ধিত টিকা প্রদান কেন্দ্রের পাশাপাশি নিজ নিজ ক্যাম্পাাসের মেডিকেল সেন্টারে গিয়েও টিকা গ্রহন করতে পারবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় আনার ব্যাপারে সরকারের এই চমতকার পরিকল্পনা সত্যিই অতুলনীয়। বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার ব্যাপারে সরকারের আন্তরিকতা ও বিদ্যার্থীর করোনার টিকা পাওয়ার সহজলভ্যতা নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। করোনর টিকা নেওয়ার পরও শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে ও সামাজিক দূরত্ব অটুট রাখার ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের দেশের উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আবার মুখরিত হবে শিক্ষার্থীদের সরব উপস্থিতির মাধ্যমে, সেই প্রত্যাশাই করছি।
লেখক : খায়রুল আকরাম খান
সাংবাদিক ও কলামিষ্ট।
Some text
ক্যাটাগরি: চিন্তা, মতামত, সমকালীন ভাবনা
[sharethis-inline-buttons]