সোমবার দুপুর ১২:০৮, ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং

বাবা! তুমি আমার বেশিই প্রিয়: নাঈমা আক্তার সোনিয়া

১৭১৫ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ১ টি
বাবার সঙ্গে মেয়ে

উৎসর্গ: আমার বাবা- মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। মাননীয় সংসদ সদস্য (দশম জাতীয় সংসদ), লক্ষ্মীপুর -৪ (রামগতি ও কমলনগর)

১। বাবা আমার অনেক প্রিয়!

বাবা শব্দটার ওজন আমার কাছে অনেক বেশি। জানিনা আর সবার জন্য এমন কিনা। আজকে তাই আমি বাবাকে নিয়ে লিখব। কারো ভালো লাগার জন্য নয়। শুধু লিখছি আমার বাবার জন্য। কারন বাবাকে আমি অনেক ভালোবাসি।

আমার জন্মের এক বছর পর আমার বাবা হংকং চলে যায় চাকরির জন্য। বাবাকে খুব একটা চেনা হয়নি আমার তখনও। যখন হাসতে শিখেছি, বলতে শিখেছি তখন নাকি আমি বাবাকে মামা বলেই ডাকতাম। চিনতে পারতামনা বাবাকে। ৫ বছর বয়স পর্যন্তই এমনটা চলে গেলো।আমার বড় মামার সাথে চেহারা মিল লাগতো বলেই বাবাকে নানা বে ডাকা শুরু।কিন্তু আমার মন মানতে চায়না আমি বাবাকে চিনতামনা।বাবা ডাকের শুরুর গল্পটা বেশ নাটকীয় আর । কাহিনীটা আমার মায়ের কাছ থেকেই শুনেছিলাম ছোটবেলা। কোনও একবার বাবা আমাদের জন্য অনেক জিনিষপত্র নিয়ে এসেছিলেন বাংলাদেশে আসার সময়। তখন শুধু আমি আর আমার আপুই ছিলাম।আপুর জন্য বাবা একটি লাল টেবিল ঘড়ি আনলেন। আমার বাবার লাল রঙটা বেশ প্রিয় এখনও।

তাঁকে বেশ মানায়ো। যায় হোক। কাহিনী বলি।আমি হাতে করে ঘড়ি নিয়ে আমার এক খালাকে দেখিয়ে বললাম “দেখো আমার মামা আমার জন্য কি এনেছে?” তখন খালাটা হেসে বলল “ ওহ! উনি তো তোমার মামা হয় আর আমার বাবা হয়, তাই বাকি যা কিছু আছে সবকিছুই আমার জন্য এনেছে” সাথে সাথে আমার রাগ হলো। ঘড়িটা তাঁর গায়ের দিকে ছুঁড়ে মেরে বললাম এটা আমার বাবা””। ওই থেকেই আমার বাবা ডাকের শুরু। মায়ের কাছ থেকে ছোটবেলা অনেক শুনতাম বাবা চিঠি লিখত তখন হয়তো এই চিঠির আবেগ বুঝে উঠার বয়স হয়নি তাই অতটা আগ্রহি ছিলামনা।পরে একটু বড়ো যখন হলাম চিঠিগুলো পড়লাম।এতো আবেগ এত ভালোবাসা ছিলো প্রতিটি লিখায়।বাবা লিখেছিল – “ আম্মু তুমি বাবাকে চিনতে পারো? আম্মু তুমি কি এখন বাবা লিখতে পারো? তোমার কয়টা জামা লাগবে?”। অথচ তখন আমার বয়স ২-৩ হবে। জানতো আমি পড়তে পারবোনা চিঠি, কিন্তু তাও লিখতো।

বাবা তুমি আমার অনেক প্রিয়!
অনেককেই বলতে শুনেছি নিজেরা বাবা-মা না হলে নাকি বুঝা যায়না বাবা-মা কি?আসলেই কি তাই?আমার কাছে ব্যাপারটা কিন্তু একেবারেই আলাদা।আমার কাছে মনে হয় বাবা-মা আমাদের জীবনে কি সেটা কেবল তাঁরাই আমাদেরকে বুঝাতে পারে। বাবা-মা বুঝতে হলে সন্তান জন্ম দিতে হয়না। আবার শুধু সন্তান জন্ম দিলেই বাবা-মা হওয়া যায়না।এই অনুভুতি কেবল বাবা-মা’ই আমাদেরকে করাতে পারবে যেমন ভাবে আমাদের বাবা-মা করিয়েছেন আমাদেরকে। আজ আমি গর্ব করে বলতে পারি আমি আমার বাবা-মায়ের সন্তান। গর্ব আমাকে নিয়ে নয় বরং তাঁদের নিয়ে। আমি আর বাকিদের মতো বলবনা আগে হইত কোনও পুণ্য করেছিলাম বলে আমি তাঁদের ঘরে জন্মেছি, আমি বলব পৃথিবীতে তাদের সন্তান হয়ে এসেছি মনে হয় ভালো মানুষ হিসেবে বড় হওয়া। আলহাদুলিল্লাহ।

বাবা তুমি আমার অনেক প্রিয়!
বাবা যে আমার কতোটা আপন আমি বাবা ডাকার পর থেকেই বুঝে গিয়েছিলাম। আমার বাবা তখনও দেশে ফেরত আসেনি।আমাদের জন্য চিঠি লিখত, কথা বলতো। আর যখন দেশে আস্ত আমি বাবাকে আমাকে রেখে কোথাও যেতেও দিতে চাইতামনা। খুব পরিষ্কার মনে আছে আমার একবার বাবা দেশে আসবে আর গ্রামের বাড়ি যাবে ঠিক করলো। আমি তখন থেকেই ফন্দি করছিলাম কি করে বাবার সাথে যাওয়া যায়। তাই তাড়াতাড়ি খাতা বের করে লিখে রাখলাম “ বাবা তুমি আমকে এসে রামগতি নিয়ে যাবা, আর আমি পরে ঢাকা যাবনা” আমি ভালো করেই জানতাম আমাকে না নিয়ে যেতেই পারবেনা পরে। সেইজন্য ঢাকা যেতে পারবোনা নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা ছিলনা খুব একটা। এরপর খুশির দিন আমার আর আমার বোনের বাবা আসছে। সবাই এয়ারপোর্ট এ গিয়ে দাঁড়িয়ে আছি অপেক্ষাই। তখনও নিরাপত্তা ব্যাবস্থা এতো বেশি কঠোর ছিলনা। আমি একেবারে গ্লাসের উপড়ে নাক ঘষে বাবা কে খোঁজার চেষ্টা করছিলাম। আর যখনই দেখলাম বাবাকে কাস্টমস অফিসারের সাথে আস্তে করে দরজাটা খুলে দৌড়ে চলে গেলাম কাছে। বাবা আমাকে খেয়াল করলনা, আমিও ঠিকই চুপ করে ছিলাম। অফিসার বাবা কে জিজ্ঞেস করলো আপনার মেয়ে আসছে আপনার সাথে? বাবা বলল- “না তো!” পাশে তাকিয়ে দেখে আমি দাঁড়ানো। বাবা অবাক, আমিও অবাক বাবাযে আমাকে দেখেই অবাক হলো তা দেখে। সাথে সাথে আমাকে কোলে তুলে নিলো, অনেক আদর করলো। বাবার ক্লে করে এয়ারপোর্ট থেকে বের হলাম আমার সেই কি ভাব!!! এরপর সেইবার চলে গেলাম রামগতি বাবার সাথে। বাবা অনেক রাত পর্যন্ত বাজারে থাকতে হতো। সাথে আমাকে নিতে হবে। যখন রাত করে বাজারে নিয়ে যেতো আমাকে মটরসাইকেলের মাঝখানে দিত যাতে আমি না পড়ে যায়। আর শক্ত করে ধরে রাখত। এরপর বেশ কিছুদিন বাবর সাথে রামগতি ছিলাম আমি ।যেখানেই যেতো সোনিয়া নামের একটা ব্যাগ সাথে থাকতোই। চট্টগ্রাম i এসে ঠিকই আবার ঢাকা চলে গেলাম।তখন বাবা হংকং চলে যাবে।আমি আর আমার বড় বোন অনেক কান্নাকাটি করতাম।

২। যখন আমরা আরও বড় হেয়েছি তখন বুঝতে পারলাম বাবার ভালবাসা শুধু পরিবার কেন্দ্রিক না। বাইরের মানুষের জন্যও আছে অনাবিল ভালবাসা। ভালো কিছু করবে আগে থেকেই ছিল তাঁর, আছে আর থাকবে। আমার বাবা জীবনে অনেক কিছু দেখেছেন, শিখেছেন,অনেক খারাপ সময় আর খারাপ মানুষের সম্মুখীন হয়েছেন। সবকিছুতেই দেখেছি দক্ষতার সাথে শামাল দিতে। আমার বাবার কঠিন পরিস্থিতিগুলো সামলানোর খুব চমৎকার ক্ষমতা আছে। খারাপ সময়েও আমাদেরকে বুঝতে না দেয়া ,নিজেকে আবার গুছিয়ে নেয়া – এটা এক অন্যধরণের বৈশিষ্ট তাঁর। একবার ব্যবসা নিয়ে অনেক বড় কষ্ট পেয়েছিলেন। ঐবার দেখেছি ওনার এই কোমল মনের মাঝে যে কতো স্ট্রং মানসিকতার মানুষ আছে। আমাদের কারও হাজার টাকা নষ্ট হলে চিন্তাই আমরা অস্থির হয়ে যাই ,আর এই মানুষ শত কোটি টাকার ধোকা একা সামলে নিয়েছেন।

পারিবারিক ঝামেলা থেকে শুরু করে সব ধরণের ঝামেলাই সবাই আসে তাঁর কাছে ছুটে। খুব সুন্দরভাবে সমাধান করার চেষ্টা দেখেছি সবসময়। সবাইকে হয়তো সাহায্য করার ক্ষমতা তাঁর সবসময় হয়ে উঠেনা ,তাও চেষ্টা থাকে সবার জন্য। ওনার মাঝে ক্ষমা করার এক অদ্ভুত ব্যাপার আছে। অনেককে দেখেছি ওনার সাহায্য আর ভালোবাসা পাওয়ার পর অথবা কাজ হয়ে যাওয়ার পর কিছুই মনে রাখেনি। আমাদের যখন রাগ হতো আমরা কিছু বলতে চাইলেও বলে – “থাক কিছু বলার দরকার নাই। তোমরা যখন ছোট ছিলে তোমাদের জন্য অনেক কিছু করেছে। “ অথবা বলে -“আসলে মনে আছে সব ,কিন্তু সময় পায়না স্বীকার করার ”। ওনারো এরকম লোকজনের প্রতি রাগ হয় -মানুষ বলে কথা। কিন্তু এদেরকে এরপরও যেভাবে আপনভেবে ক্ষমা করে দেয় তা হয়তো আমরা অনেকেই পারবোনা। মানুষের জন্য করে বিনিময়ে কিছু চাইতে হয়না বাবা -মায়ের কাছ থেকেই শিখেছি।

সবার মাঝেই কিছু ভালো দিক আর কিছু খারাপ দিক থাকে। ওনার মন সমুদ্রের মতো বড় কিনা জানিনা ,তবে অন্য অনেক মানুষের চাইতে অনেক বড়ো। তাই হয়তো ওনার ছোট ছোট ভুলগুলো চোখে পড়েনা।আমার বাবার একধরণের ক্যারিশম্যাটিক ব্যাপার আছে। যাকে প্রথম দেখাতেই মানুষের ভালো লেগে যায়।ছোটবেলা থেকেই দেখেছি আমাদের বন্ধু -বান্ধব ,পরিচিত -অপরিচিত যেই একবার কথা বলেছে সবাই এক কথায় বলে দিয়েছে ”তোমার বাবা একজন ভালো মানুষ ”।এই কথার যে ওজন কতটুকু তা হয়তো আমরা ছাড়া আর কেউ বুঝতে পারবেনা। একটা ছোট গল্প বলি – কিছুদিন আগে আমার ছোট্ট একটা অপারেশন হয়েছিল। আর সবার সাথে আমার বাবাও বাইরে অপেক্ষা করছিলো। খুব বেশি হলে ডাক্তারের সাথে ওনার ৩ থেকে ৪ মিনিট নাকি কথা হয়েছিল। ডাক্তার ওটি তে এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো আপনাদের কে দেখে বুঝাই যায়না আপনার বাবা একজন এম.পি।আপনাদেরকে খুব চমৎকার ভাবে মানুষ করেছে। ঊনি খুব ভালো মানুষ। “ এটা যে কতো বড়ো পাওয়া সেটা কেবল ওনার সন্তানরাই উপলব্ধি করতে পারবে।

মোহাম্মদ আবদুল্লাহ: সংসদ সদস্য (দশম জাতীয় সংসদ), লক্ষ্মীপুর -৪

৩। যে ভালো পিতা, সেই ভালো একজন নেতা

পিতা হিসেবে আমাদের প্রতি তিনি যেরকম যত্নশীল সেইরকম নেতা হিসেবেও অনেক দায়িত্বশীল।তাঁকে রাজনীতির নোংরামি , আদর্শের কেনা-বেচা , কাজের অবহেলা এরকম কোনোকিছুই গ্রাস করতে পারেনি।সবসময় পরিষ্কার আর সুস্থ রাজনীতি করেছেন।তিনি ক্ষমতার ব্যবহার করেছেন কাজের জন্য ,মানুষের উন্নয়নের জন্য কিন্তু অপব্যবহার করেননি। এমন কৃতজ্ঞতার আর আদর্শের রাজনীতির উদাহরণ বিরল। যখন রাজনৈতিক জীবনে পা রেখেছেন তখনও দেখেছি কতটা দায়িত্বশীল তিনি। কাজ করতে এতবেশি পছন্দ করেন দিন রাত রামগতি -কমলনগর চলে যেতেন। আমরা রাগ হতাম এতো পরিশ্রম কেন করছে। সপ্তাহে দুই- তিনবার জার্নি করা খুব কষ্টের। তাও শুনতোনা। বুঝলাম মানুষের কাছাকাছি থাকাই ওনার পছন্দ। এইজন্য এখন আর তেমন কিছু বলিনা। অনেক চিন্তা করে দেখলাম আজীবন ঊনি কারও না কারও জন্যই কিছু করে গেলেন। আমাদের জন্য-মানুষের জন্য এখন যদি এটাতে ওনার নিজের আনন্দ খুঁজে পায় এটা অন্তত নিজের জন্য করুক ।

সাধারণ মানুষের চোখে এম.পি বলতে যা বুঝায় তিনি তার চেয়ে অনেক ব্যতিক্রম। আর দশজনের মতো ভাব -গাম্ভীর্য নেই অথবা আসনের আশায় ছলনাও করেননি। যা করেছেন একান্তই নিজের ব্যক্তিগত ভালো লাগা থেকে।এম.পি আসনের জন্য মিথ্যা অথবা পরিবারের ব্যবহার কোনোটাই করেননি। নিজে কখনো অভিনয় করেননি পাশাপাশি নিজের পরিবরকেও অভিনয় করতে বলেননি।তিনি সবসমই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতিতে বিশ্বাসী এবং অনুসারী। শুধু তিনিই নয় ,ওনার সহধর্মিনী (আমাদের মা ) ওনাকে দেখে অনেকেই ভাবতেন হয়তো ঊনি দোতালায় চেয়ার এ বসে চকচকে চায়ের কাপে চুমুক দিবেন তা না করে বরং দিন রাত রান্না ঘরে বসে থেকে নিজের হাতে চা বানিয়েছেন।পরিবারের পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবেও আব্বুর অনেক বড় সাপোর্ট তিনি। ভোটের আশায় হলে আরও অনেকের মতো কেবল ভোটের আগে সানগ্লাস চোখে পড়ে ,দলবল সাথে নিয়ে মাইক হাতে মানুষের কাছে গিয়ে ভোট চাইলেই হয়ে যেতে পারতো।বছরের অধিকাংশ সময় এলাকায় কাটানোর প্রয়োজন হতোনা। কাজ না থাকলেও মাসের পর মাস গিয়ে থাকেন বাড়িতে। আমরা তো প্রায় আম্মু ঢাকা আসলে আম্মুকে আগে জিজ্ঞাসা করি -“কতদিনের ছুটিতে আসলা এবার ?” শুধুযে গত পাঁচ বছরের কথা বলছি তা না, এরমকম যাওয়া আসার ঘটনা বছরের পর বছর ধরে চলছে।গ্রাম আর গ্রামের মানুষ তাঁদের অনেক প্রীয়।শুধু আসন সংরক্ষণের চিন্তায় থাকলে অনেকের মতো এলাকায় সময় না দিয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়েই হয়তো বেশি থাকতেন।তিনি তা কখনই চিন্তা করেননা কারণ তিনি ভালো করেই জানেন “আসন সংরক্ষণ ” করলে কেবল আসন পাবেন কিন্তু “কাজ করলে ” মানুষের ভালোবাসা সংরক্ষণ হবে। রাজনীতিতে আসার পর তাঁর মানিয়ে চলার ক্ষমতা আরও বেড়ে গেছে।

এই পথে আসার পর সহযোগীর পাশাপাশি অনেক শত্রু হয়েছে ,তাদের প্রতি রাগ -ঘৃণা ওনার হয়না বললে হয়তো মিথ্যা বলা হবে। কিন্তু হলেও খুব বেশি হলে মেজাজ খারাপ করে ,কারও ক্ষতি কখনও করেনা।ছোট একটি ঘটনা বলি। কিছুদিন আগে একজন বলছিলো ২০১৪ সালে ভোট দিয়েছে এই ঋণ জীবনেও শোধ করতে পারবে কিনা আব্বু ? ২০১৪ সালে আব্বু ১ লাখের উপরে ভোট পেয়েছে এখন এই লাখ মানুষের ঋণ যদি তাদের সবাইকে চেয়ারম্যান,মেম্বর বানিয়ে করতে হয় তাহলে ঋণখেলাপির মামলা এই দেশের সব নেতার হয়ে যেত। একজন এম.পি ভোটের ঋণ শোধ করতে পারে নির্বাচনের সময় কাজ করার যে কথা দিয়েছে তা পূরণের মাধ্যমে। আর সেই হিসেবে ঋণ শোধ মনে হয় হয়ে গেছে।রাজনীতি আমি বুঝিনা। কিন্তু এটুকু জানি নিজের দলকে যতটুকু দেয়ার ততটুকু দেয়ার ১০০ ভাগ চেষ্টা করেছে। নিজের মানুষকে যতটুকু ভালোবাসার দরকার তার চেয়ে বেশি বেসেছে।অনেক রাজনৈতিক -পারিবারিক মানুষ তাঁর ক্ষতি করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। সবকিছুকে শিক্ষা হিসেবে নিয়ে তাও এগিয়ে গেছে।আব্বু গত পাঁচ বছর কি করেছে হিসাব কষে লাভ হবেনা।কিন্তু গত ৪০ বছরে যা কেউ করতে পারেনি তা এই পাঁচ বছরে হয়েছে| এমনকি এবারের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পরও যখন মহাজোটের কারণে লক্ষীপুরের একটি আসন ছাড়তে হলো তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নির্দ্বিধায় আসনটি মান্নান সাহেবকে ছেড়ে দেন এবং সবাইকে দলবদ্ধ করে কাজ করার উৎসাহ দিয়েছেন।একবারও চিন্তা করেননি এতো কাজ করার পরও আসন ছাড়তে কেন হবে অথবা দল তাঁকে কি দিবে। আগে চিন্তা করেছেন যে দায়িত্ব দিয়েছেন সেটা শেষ করার| কৃতজ্ঞতাবোধ আর দলের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থেকে কোনোরকম বিদ্রোহী মনোভাব ছাড়াই আসন ছেড়ে দিয়েছেন।লিখাটা আমি যত সহজে লিখে ফেললাম আব্বুর জন্য কাজটা এর থেকেও অনেক অনেক বেশি কঠিন ছিল।

তিনি গত পাঁচ বছর একটা দিনও নিজের জন্য দিয়েছেন বলে আমার মনে পড়েনা।নিজের চিকৎসা ,ব্যক্তিগত ব্যবসা সব কিছু বন্ধ রেখে জনগণ আর এলাকার প্রতি দায়িত্ব পালন করেছেন। এতো কিছু করার পরও মূল্যায়নের দায়িত্বটা দলের উপরেই ছেড়ে দিয়েছেন। সবার মেনে নেয়ার ক্ষমতার চেয়ে কিছুটা আলাদাই বলা চলে।আমি নিজে দেখেছি অনেক মানুষ এসেছে ,কান্না করেছে ,মন খারাপ করে বলেছে “কি পেয়েছেন তাহলে আপনি?“ আব্বু মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালে তাঁকে এতো বড়ো দায়িত্ব দিয়েছেন তা বুঝে শুনেই দিয়েছেন।আর তিনি সবসময় চেয়েছেন এলাকায় কাজ হোক। সেটি সম্ভব হয়েছে এটাই যথেষ্ঠ। আর কিছু না পেলেও জনগণ পেয়েছেন-দলের আস্থা পেয়েছেন।২০১৪ ‘র আগ পর্যন্ত যেরকম অগোছালো একটি দল ছিল সেটাকে তিনি গত পাঁচবছর গুছিয়ে দিয়েছেন। নতুন নেতাদের পথ চলা অনেকখানি সহজ করে দিয়েছেন। কিন্তু কাজ করার ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত এমন যে নতুন নেতাদের কাজ করতেই হবে এলাকার জন্য। ওনার কাজ করার দৃষ্টান্ত পরবর্তী প্রতিনিধিদেরও অনুপ্রাণিত করবে।তিনি আরও বলেন-“ একজন ভালো নেতা হিসেবে ,মানুষের ভালোবাসা নিয়ে এম.পি পদ থেকে যেতে পেরেছি এটা সবার ভাগ্যে জোটেনা।”

৪। অনেক বেশি প্রাপ্তি

কিছু ভূল- অনেক কষ্ট – অনেক বাঁধা পাড় করে নিজেকে শুধরে একজন খাঁটি মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছো। তুমি যে শুধু আমার বাবা বলেই এতো ভালোবাসি তা না , একজন মানুষ হিসেবে তোমাকে আরও বেশি ভালোবাসি। ভালো খারাপ মিলেই মানুষ হয়। কিন্তু যারা অনেকগুলো ভালো কাজ করে তাদের ছোটছোট ভূল গুলো ঐসব ভালো কাজের মাঝে বিলীন হয়ে যায়। এরকমই একজন আমার বাবা। বাবার মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে সামলানোর এক অদ্ভুদ শক্তি আমরা দেখেছি। যে মানুষটা আজীবন পরিশ্রম করেছে, সহযোগিতা করেছে মানুষকে , সঠিক পথে চলেছে সেই মানুষ সব না পেলেও একটা মাটির মন পেয়েছে যেটা অতুলনীয়। সেই মানুষ টা হয়তো সবার ভালোবাসা পাবেনা কিন্তু এতো লোকের ভালাবাসা পেয়ে গেছে এখন কে ভালোবাসবেনা তা আর চোখেই পড়েনা।একজন প্রতিষ্ঠিত মানুষের যতরকম সময় আছে সবকিছুই বাবা দেখেছে।একজন ভালো ছেলে , ভালো বড়ো ভাই ,একজন ভালো আত্মীয় , দায়িত্ববান স্বামী , পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবা, প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ,একজন সৎ জননেতা ,একজন কোমল হৃদয়ের মানুষ , একজন বেস্ট নানা — তুমি একজন ভালোমনের মানুষ সবার কাছে।তুমি হাজার হাজার মানুষের ভালোবাসা পেয়েছো তাদেরকে ভালোবাসাও যেমন দিয়েছো, যারা তোমার সাহায্য আর ভালোবাসার বদলে কৃতজ্ঞতা দেখায়নি তাদেরকেও কখনও ফেলে দাওনি।সবচেয়ে বড়ো প্রাপ্তি তুমি আমাদেরকে দিয়েছো সেটা হলো আমাদের বাবা একজন সৎ ব্যক্তি যা হয়তো অনেক পরিবারের সন্তানরা নিজের অবচেতন মনে ভয়ে থাকতে হয়।আমাদের সেরকম ভয় -লজ্জা কখনোই কাজ করেনা।

আর এতো মানুষের মধ্যে এই ব্যক্তিটিই আমার বাবা হয়েছেন আল্লাহর কাছে আমরা শুকরিয়া আদায় করি। আমি চাকুরীজীবী বাবা, ব্যবসায়ী বাবা, রাজনীতিবিদ বাবা— তোমার সব ধরনের রূপই দেখেছি। সব ধরনই আমার খুব প্রিয়। তবে ব্যক্তি বাবা আমার সবচাইতে কাছের-সবচাইতে প্রিয়। এমনই আশা করি তুমি আজীবন নিজের পরিবারকে এভাবেই ভালবাসবে আর দেশের মানুষের জন্য এভাবেই স্বেচ্ছাই কাজ করে যাবে।
বাবা তুমি আমার বেশিই প্রিয়!!! অসাধারণতার মাঝে একজন সাধারণ মানুষ তুমি।ভালোবাসা , শ্রদ্ধা আর অনেক দোআ তোমার জন্য।

নাঈমা আক্তার সোনিয়া

চেয়ারম্যান: অলিভিন লিমিটেড

 

Some text

ক্যাটাগরি: স্মৃতিচারণ

[sharethis-inline-buttons]

১ কমেন্ট “বাবা! তুমি আমার বেশিই প্রিয়: নাঈমা আক্তার সোনিয়া

Leave a Reply

আমি প্রবাসী অ্যাপস দিয়ে ভ্যাকসিন…

লঞ্চে যৌন হয়রানি