ভালোবাসা যেখানে মুখ্য; অর্থ-বিত্ত, যশ-খ্যাতি সেখানে গৌণ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যে কয়জন গুণী মানুষের সাথে আমার মেশার সুযোগ হয়েছে বা যাদের সম্পর্কে জানার সুযোগ হয়েছে, তাদের কয়েক জনকে কাছ থেকে দেখে এই ভেবে আমি অবাক হয়েছি- তাঁদের এতো গুণ, যোগ্যতা, পরিচিতি থাকার পরও তাঁরা কেনো ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে পড়ে থাকেন। অথচ তাঁরা শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিয়ে ব্যস্ত না থেকে জাতীয় পর্যায়ে নিজেদের যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে দেশময় খ্যাতি অর্জন করতে পারতেন। পারতেন প্রচুর অর্থ বা ক্ষমতার মালিক হতে। কিন্তু তাঁরা তা না করে শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে নিয়েই কেন ব্যস্ত থাকেন? নিজের কাছে করা আমার সে প্রশ্নর উত্তর হচ্ছে “ভালোবাসা যেখানে মুখ্য; অর্থ-বিত্ত, যশ-খ্যাতি বা ক্ষমতা সেখানে গৌণ”।
আর তাইতো কিছু মানুষের কাছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া অতি আপন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষ, রাস্তা-ঘাট, আলো-বাতাস, নদী-খাল, গাছ-পালা, পশু-পাথী তাদের কাছে এতো আপন যে; তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সবকিছুকে ভালোবেসে নিজের জীবন যৌবন কাটিয়ে দেন এখানেই। তাঁরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইতিহাস আর ঐতিহ্যের ধারক-বাহক হয়ে ভুলে যান দেশজুড়ে তাঁর নিজের নাম-ডাক তুলে ধরতে, অর্থের লোভকে দু’হাতে ঠেলে, ক্ষমতাকে পদদলিত করে, খ্যাতির মোহকে পিছু ফেলে কিছু মানুষ ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে আপন করে নেন।
সদ্য পরলোকগত মুহম্মদ মুসা স্যার তেমনি একজন মানুষ। যিনি আপাদমস্তক ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে ভালোবাসার মানুষ। এই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পবিত্র মাটিতে যার জন্ম, এর আলোবাতাসেই যার বেড়ে ওঠা, এর মাটিতেই তার চিরশয্যা। আলোকিত, বর্ণাঢ্য জীবনের আধিকারী তিনি। একজন মানুষ তাঁর সময়ের সব চেয়ে সঠিক যে কাজটি করা প্রয়োজন। মূসা স্যার সেগুলিই করে গেছেন। কৈশরে তিনি ভাষা আন্দোলনে সংযুক্ত হয়ে “ভাষা সৈনিক” হয়েছেন। তরুণ বয়সে ছাত্র নেতৃত্ব দিয়ে কলেজের ভিপি হয়েছেন। যৌবনে সংযুক্ত হয়েছেন সাংবাদিকতায়।পরিণত বয়সে হয়েছেন একজন শিক্ষক।
শিক্ষক হয়ে ছাত্র পড়িছেন, আলোকিত মানুষ গড়েছেন। সাংবাদিক হয়ে সাংবাদিকবৃন্দের নেতা হয়েছেন, অনেক গুণী সাংবাদিক তৈরী করেছেন তিনি। পত্রিকা প্রতিষ্ঠা করেছেন। নিজে লেখালেখি করেছেন। লেখক-পাঠক তৈরী করছেন। বৃক্ষপ্রেমীক মানুষ ছিলেন তিনি। তাঁর হাতে লাগানো অনেক গাছ আজো ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে সবুজ করে রেখেছে। ফল, ফুল, ছায়া দিচ্ছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অনেক প্রতিষ্ঠান তৈরীর পেছনের সুনিপুণ পরিকল্পনা, বলিষ্ঠ হাত এবং সুক্ষ্ম কারিগর মুসা স্যার।
কৈশরে তিনি ভাষা আন্দোলনে সংযুক্ত হয়ে “ভাষা সৈনিক” হয়েছেন। তরুণ বয়সে ছাত্র নেতৃত্ব দিয়ে কলেজের ভিপি হয়েছেন। যৌবনে সংযুক্ত হয়েছেন সাংবাদিকতায়।পরিণত বয়সে হয়েছেন একজন শিক্ষক। শিক্ষক হয়ে ছাত্র পড়িছেন, আলোকিত মানুষ গড়েছেন। সাংবাদিক হয়ে সাংবাদিকবৃন্দের নেতা হয়েছেন, অনেক গুণী সাংবাদিক তৈরী করেছেন তিনি। পত্রিকা প্রতিষ্ঠা করেছেন।
মুসা স্যারকে চেনেন না ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এমন কোন বিশিষ্ট ব্যক্তি নেই। তরুণ প্রজম্মের কাছেও তিনি সমধিক পরিচিত। গত সত্তর বছরে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে যত উচ্চপস্থ সরকারি কর্মকর্তা এসেছেন তাঁরা সবাই মুসা স্যারকে চেনেন। তাঁরা কখনো ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে স্মরণ করলে সাথে মুসা স্যার কেও স্মরণ করেন। যেন মুসা স্যার আর ব্রাহ্মণবাড়িয়া এক অপরের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
মানুষ অনেক ভাবে নিজেকে খ্যাতিমান করে তোলেন, সুখ্যাতি আর দুখ্যাতি। মুসা স্যারের বেলায় শুধুই সুখ্যাতির পরিচিতি।এই যে এই মানুষটির এতো পরিচিত, জনপ্রিয়তা।তিনি কিন্তু নিজের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে কোন ক্ষমতায় আধিষ্ঠ হতে চাননি।নিজের পরিচিতিকে কাজে লাগিয়ে অর্থের প্রাচুর্য সংগ্রহে ব্যস্ত হননি। তিনি সংগ্রহ করেছেন বই, বিলিয়েছন বই, বিলিয়েছেন জ্ঞান।
ব্রহ্মণবাড়িয়ার প্রিয় মানুষ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রেমী মানুষ মুসা স্যারের অমর সৃষ্টি “ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইতিবৃত্ত” নামক বই সম্পাদনা। যা যুগ থেকে যুগের মেলবন্ধন রচনা করবে প্রতিটি ব্রাহ্মণবড়িয়া প্রেমিক মানুষের মাঝে। যুগের সাথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইতিহাস আর ঐতিহ্যের সূতিকাগার হয়ে থাকবে এই বইটি। আর মুসা স্যারও তাঁর সকল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আকাশে একটি উজ্জ্বলতম নক্ষত্র হয়ে থাকবেন। যে নক্ষত্র সদা প্রোজ্জ্বল্যমান।
চলবে…
মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ
০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯
(বিঃদ্রঃ বানান ভুল মার্জনীয়, শুধরে দিলে উপকৃত হব)
Some text
ক্যাটাগরি: নাগরিক সাংবাদিকতা, সাহিত্য, স্মৃতিচারণ
[sharethis-inline-buttons]