মঙ্গলবার রাত ২:২১, ১০ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং

সাবধান! জুলুম করো না

৭৭২ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

বাহু কর্তিত এক লোক বাজারে দাঁড়িয়ে বলছিল : ‘যে ব্যক্তি আমার কাহিনি জানবে- সে কারো ওপর জুলুম করবে না।’ কেউ একজন জিজ্ঞাসা করল, ‘ভাই কী তোমার কাহিনি?’

“আমি পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তা ছিলাম। একদিন এক মৎস্যশিকারী একটি বড় মাছ নিয়ে যাচ্ছিল। মাছটি আমার খুব পছন্দ হল। ডেকে বললাম : ‘আরে মিয়া! মাছটি আমাকে দিয়ে দাও।’ : ‘জনাব! মাছ দিতে আমার আপত্তি নাই; মূল্য দিতে হবে। বাড়িতে কোন খাবার নেই। ক্ষুদার্থ বাচ্চারা -বাবা খাবার নিয়ে বাড়ি আসবে- অপেক্ষায় আছে। দীর্ঘ সময় ব্যয়ে বহু কষ্টে মাছটা ধরেছি।’

মূল্য দেওয়া তো পরের কথা; বেদম প্রহার শুরু করলাম। হাড়ি থেকে জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিলাম। মাছ হাতে বাড়ির দিকে যাচ্ছি- হঠাৎ নড়ে ওঠল। ভালোভাবে ধরার চেষ্টা করছি- ইতোমধ্যে আঙ্গুলে কামড় বসিয়ে দিল। ব্যথা শুরু হল। বাড়িতে পৌঁছার পর তীব্রতা বাড়তে থাকল। তখন ছিল রাত। সারারাত ছটফট করলাম। চোখের পাতা একত্র করা সম্ভব হল না।

খুব ভোরে গিয়ে ডাক্তারকে ক্ষতস্থান দেখালাম। বলল : ‘এ তো মারাত্মক বিষাক্ত ক্ষত। জানে রক্ষা চাইলে এক্ষণ আঙ্গুল কাটতে হবে। কালক্ষেপণে পুরো হাত হারাতে হবে।’ আঙ্গুল হারিয়ে বাড়ি এলাম। তখনো প্রচ- ব্যথা। স্বস্তি-স্থিরতা উবে গেল। তীব্রতা যেন বাড়ছেই। পরের রাতও চরম অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরালাম। দ্বিতীয় ভোরে ডাক্তার হাতের পাঞ্জা কাটার নির্দেশ দিল। বিষ উপরে ওঠছেই। আশা করলাম, এবার মুক্তি পাব। কিন্তু তীব্রতা আর প্রচ-তার মিটার দ্রুত থেকে দ্রুততর হয়েই চলছে। মৎস-বিষের প্রভাব সারাদেহে ছড়িয়ে পড়ছে। সহ্যের সকল মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ায় আমার বিলাপ-চিৎকারে লোকজন জড়ো হতে লাগল। সারা এলাকায় আলোচ্য হয়ে গেল- ‘পুলিশ অফিসারের হাত কাটার ঘটনা’। ডাক্তার বলল : ‘বাহু থেকে না কাটলে পূর্ণ শরীর ছেয়ে যাবে।’ পুরো হাত হারালাম।

ভাইজান, ঐ মুহূর্তে তুমি কী বলে বদদু‘আ করেছিলা? : আমি বলেছিলাম- আয় আল্লাহ! আমি দুর্বল। সে শক্তিশালী। শক্তির দাপটে আমার রিজিক ছিনিয়ে নিল। হে আমার মাওলা! ‘এই ব্যক্তিকে বিপদ ও পেরেশানিতে লিপ্ত করে আমাকে আপনার শক্তি ও কুদরতের কারিশমা দেখান।’ তাকে বললাম- হে ভাই, আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে তাঁর কুদরতের কারিশমা দেখিয়েছেন। তুমি ক্ষমা কর। আমি তওবা-ইস্তেগফার করছি। কৃত অপরাধের জন্য ক্ষমা চাচ্ছি।

দেখতে আসা লোকেদের সাথে সবকিছুতেই কেমন নিরাগ্রহ একজন এসে জিজ্ঞাসা করলেন- ‘তোমার ব্যথার মূল কারণ কী?’ মাছের ঘটনা খুলে বললাম। : ‘আরে আল্লাহর বান্দা! দংশনের সাথে সাথে যদি জেলের নিকট যেতে! ক্ষমা চাইতে! এখন একটি একটি করে অঙ্গ কাটা যাচ্ছে। এখনো সুযোগ আছে; যে কোন উপায়ে তাকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা কর। তার কথা আমার মনে লাগল। জেলের তালাশে বের হলাম। সে অন্য শহরে চলেগিয়েছিল। বহু খোঁজাখুঁজির পর সন্ধান পেলাম। দেখামাত্র পায়ে লুটিয়ে পড়লাম। কেঁদে কেঁদে বললাম, আল্লাহর জন্যে আমাকে ক্ষমা করে দাও। : ‘তুমি কে?’ আমি ঐ লোক যে তোমাকে প্রহার করে মাছ ছিনিয়ে নিয়েছিলাম। হাত দেখালাম। কেঁদে উঠল। তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল : ‘হে ভাই! এমন বিপদে পতিত হতে দেখে আমার মনে আর কোন ব্যথা নেই। আমি তোমাকে আল্লাহর জন্য ক্ষমা করে দিলাম।’

ভাইজান, ঐ মুহূর্তে তুমি কী বলে বদদু‘আ করেছিলা? : আমি বলেছিলাম- আয় আল্লাহ! আমি দুর্বল। সে শক্তিশালী। শক্তির দাপটে আমার রিজিক ছিনিয়ে নিল। হে আমার মাওলা! ‘এই ব্যক্তিকে বিপদ ও পেরেশানিতে লিপ্ত করে আমাকে আপনার শক্তি ও কুদরতের কারিশমা দেখান।’ তাকে বললাম- হে ভাই, আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে তাঁর কুদরতের কারিশমা দেখিয়েছেন। তুমি ক্ষমা কর। আমি তওবা-ইস্তেগফার করছি। কৃত অপরাধের জন্য ক্ষমা চাচ্ছি।

ইচ্ছায় যেমন হয়। চলার পথে অসতর্কতায়ও হয়ে যায়। অতি আপনজনের সাথেও আমরা অজ্ঞাতসারে অনেক জুলুম করে বসি। আমি অসতর্ক হলেও কিরামান কাতিবিন কিন্তু অসতর্ক হন না। জীবনের ছোট-বড় সব কিছুই লিপিবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে এমন এক কিতাবে; যা হাশরের ময়দানে হিসাবের জন্য উপস্থিত করা হবে। বলা হবে, “তোমার কিতাব তুমিই পড়, আজ হিসাবের জন্য তুমি নিজেই যথেষ্ট।” [বনি ইসরাইল : ১৪] জুলুমের পরকালীন ভয়াবহতা উল্লেখ করে অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে, “তুমি কিছুতেই মনে করো না, জালিমগণ যা কিছু করছে- আল্লাহ সে সম্পর্কে বেখবর। তিনি তো তাদেরকে সেই দিন পর্যন্ত অবকাশ দিচ্ছেন যে দিন চক্ষুসমূহ থাকবে বিস্ফারিত। তারা মাথা উপর দিকে তুলে দৌড়াতে থাকবে। তাদের দৃষ্টি পলক ফেলার জন্য ফিরে আসবে না। আর (ভীতি-বিহ্বলতার কারণে) তাদের প্রাণ উড়ে যাওয়ার উপক্রম করবে। [ইবরাহিম : ৪২-৪৩]

জালেমের পরিণতি বর্ণনা করে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন : “জুলুম কেয়ামতের ময়দানে বান্দার জন্য অতি অন্ধকার হয়ে দেখা দিবে।” [বোখারী :২৩১৫] হজরত ইবনে ওমর রাদি. থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইরশাদ : (ভাবার্থ) “এক মহিলা বিড়াল আটকে রেখে খানাপিনা না দেওয়ায় মারা যায়। ফলে তাকে জাহান্নামে যেতে হয়।” [বোখারী : ২২০৩] সুতরাং অন্য আমলের পাশাপাশি আমার দ্বারা যেন কারো ওপর জুলুম না হয়ে যায় সে ব্যাপারে খুব সাবধান থাকতে হবে। আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছাই আমাদের ‘বেঁচে’ থাকার এবং ‘বেঁচে’ থাকার একমাত্র উপায়।

হানিফ আল হাদী : প্রবন্ধকার, অনুবাদক, ভাষা প্রশিক্ষক

hanifalhadi@gmail.com

Some text

ক্যাটাগরি: মতামত

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply

আমি প্রবাসী অ্যাপস দিয়ে ভ্যাকসিন…

লঞ্চে যৌন হয়রানি