আমর স্মৃতিতে যতটুকু আছে তাতে ভেসে ওঠে, আব্বা বিদেশ থাকায় বড় খালাম্মার সাথে আমাদের সম্পর্ক বেশ ভাল ছিল। আব্বার বিদেশের টাকা পয়সা সব বড় খালাম্মার জামাইয়ের হাতে এসে পৌঁছাত। আব্বা চলে আসার পর তার সাথে আমাদের দূরত্ব বেড়ে যায়। আজকের সম্পর্কগুলো ফাটলের অন্যতম কারণ স্বার্থান্বেষণ। যতক্ষণ পর্যন্ত স্বার্থ ঠিক থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত সম্পর্কও বেশ জোড়ালো থকাবে। যেই মাত্র তার থেকে পাওনা শেষ হয়ে যাবে আস্তে আস্তে তাকে সাইড লাইনে রেখে দেবে। সেই বড় খালাম্মার বাড়িতে ছোটবেলা আমার কত যাওয়া আসা ছিল। কিন্তু আব্বা বিদেশ থেকে আসার পর পাঁচ বছরে একবার গিয়েছি এমনও হয়েছে।
রফিক মাদ্রাসের কলোনিতে যখন থাকতাম তখন আমার বয়স নয় বছরের মত ছিল। আশেপাশের আট-দশটা ছেলেমেয়র মতো ঘর থেকে বের হতে পারতাম না যখন ইচ্ছা তখন। বের হলেই রাতে আমার ছোট খালাম্মা অফিস থেকে আসলে উনার কাছে বিচার চলে যাবে সেই ভয়ে। উনি চাইতেন আমি সবসময় পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত থাকি। খুব অল্পই নিজের ইচ্ছায় পড়তে বসতাম। তবে তার চাপের কারণে পড়াশুনাটা ভালভাবেই করতাম। যা শিখতাম তা ভালভাবেই আর না শিখলে নাই। কত যে এই অভ্যাসের জন্য আন্টিও বাসার স্যারদের কাছে মার খেতে হতো। তার হিসাব কাগজে কলমে লিখে শেষ করতে পারব না। খুব বেশি ভাল ছাত্র ছিলাম না। তবু ক্লাসে সবসময় সেরা দশের ভেতর থাকতাম। বাহিরে কোনো ছেলেমেয়ে খেলতে দেখলে খুব আফসো করতাম কবে যে তাদের মতো করে আমিও এভাবে বাঁধনহারা হয়ে ছুটতে পারব? আজ আর এমনটি হয় না। নিজের স্বাধীনমতোই জীবনযাপন করছি।
ঐখানে থাকালিন অবস্থায় আহাদ নামে একটি ছেলে আমার পাশের বাসায় ছিল। সে একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুলের ফার্স্ট বয় ছিল। প্রচুর শাসন করত তার মা। আমার মতো সেও ঘর থেকে বের হতে পারতো না। আব্বা আর আমি যখন তার স্কুলের সামনে দিযে যাতায়াত করতাম তা দেখিয়ে আমাকে বলতেন, ‘তুই কিন্ডারগার্টেন স্কুলের ছেলেদের সাথে প্রতিযোগিতা করে টিকতে পারবি না। তোর সে মেধা নেই। প্রাইমারি স্কুল বলে তুই ফলাফল কিছুটা ভাল করছিস।’ নিজ হাইস্কুলের লাইফটা পার করেছি এসব কিন্ডার গার্টেন থেকে পড়াশুনা করা ছেলেদের সাথেই লড়াই করেছি। বরাবরই রোল ১-৫ ভেতর ছিল। এইটি আমার সম্পূর্ণ আত্মজীবনী নয়। তাই এখানে শুধু আমার সম্পর্কে আব্বার দৃষ্টিভঙ্গিটা তুলে ধরলাম।
আব্বা বিদেশ থেকে আসায় অবসর থাকতেন। তিনি আমার আরবি পড়াটার প্রতি যতœ নিতেন বেশি। কোরআন শরীফ পড়তে পারি সাত বছর বয়স থেকেই। তবে তা সহিহ ছিল কিনা আমার মনে নেই । আজকে এসে মনে হয় তা সহিহ ছিল না। কারণ তখন তো শুধুমাত্র ঘরের চাপে পড়ে ঐ শেখাটা শিখেছিলাম। না বুঝেই সবকিছু করতে হতো। এখনো মনে পড়ে আব্বা শুধু ক্বারী সাহেব খুঁজতেন আমার কুরআন তেলাওয়াত শুদ্ধ করার জন্য। তবে আমার পরিবারে আট-দশটা পরিবারের মতই ধর্ম চর্চা হতো। যার কারণে এর গ-ির বাইরে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তারা মানতে বলত আমি তাই মানতাম। কিন্তু আজ আর এমনটি হয় না।
Some text
ক্যাটাগরি: মতামত
[sharethis-inline-buttons]