শনিবার সকাল ৮:২১, ১৪ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২৮শে ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং

আমি কার পক্ষে, শ্রমিক না স্টুডেন্ট!

জান্নাতুল মাওয়া ড্রথি

“কে অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন আর কে অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন নয়, তা বড় কথা নয়। বড় কথা হচ্ছে, আমরা সবাই মানুষ। আমরা সবাই বাংলাদেশি। আমরা সবাই মিলেই আমাদের বাংলাদেশ। কোনো এক পক্ষ বলতে বাংলাদেশ বোঝায় না।”

আজ একজন আমাকে প্রশ্ন করলো, আপনি কার পক্ষে? শ্রমিক না স্টুডেন্ট? বঙ্গবন্ধু এমন কথা বলেছিলেন কি না জানি না। তবুও বলছি, কোন্ হাতটা কাটবো? শ্রমিক বা স্টুডেন্ট কেউ তো আলাদা নয়। আমরা সবাই বাংলাদেশি। হ্যাঁ, আমি স্টুডেন্টদের দাবীর পক্ষে। তাই বলে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে নই। আমি একজন স্টুডেন্ট। যারা আজ এই ন্যায্য দাবীর পক্ষে আন্দোলন করছে, তারা আমারই ভাই-বোন। তেমনি এটাও আমি মনে রাখার পক্ষে, এই শ্রমিকরাও বাইরের কেউ নয়, আমাদেরই আপনজন। এদের রক্ত আর ঘামেভেজা পরিশ্রম দিয়েই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।

একটা কথা বলি, আমাদের দুটো হাতের কোনো একটায় যদি ফোঁড়া হয়, আমরা কি তা কেটে ফেলি? না ঔষধ দিয়ে সে জায়গা সারাবার চেষ্টা করি? অবশ্যই ঔষধ দিয়ে সারাবার চেষ্টা করি। হাতে ফোঁড়া হলেই তা নিয়ে আশা হারাই না। আজ যারা মহা-উৎসাহে শ্রমিক এবং স্টুডেন্টদের মুখোমুখি সংঘর্ষে দাঁড় করাতে চাচ্ছে, তারা কি একটিবারও ভেবে দেখেছে, এর ফলাফল কী হতে পারে? রক্ত কার ঝরবে? আমাদের ভাইবোনদের, আমাদের বাবা-মা’দের, আমাদেরই আপনজনদের।

আমি বিশ্বাস করি, সব শ্রমিক এক নয়। যে অন্যায় করেছে তার শাস্তি হোক, ফাঁসি হোক। তাই বলে সবাইকে এক কাতারে দাঁড় করাতে পারি না। মনে রাখা উচিত, পরিবহন আর যোগাযোগ খাতে আজ যে সমস্যা তৈরি হয়েছে তার জন্য একতরফা শ্রমিক নয়, আমাদের ৪৭ বছরের সিস্টেম দায়ী। ওরা শুধু এই সিস্টেমের সাথে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে। আমরা ডিসিপ্লিন তৈরি করতে পারিনি দেশে। আমাদের লজ্জা হওয়া উচিত, আজ আমাদের ছোট ভাইবোনদের রাস্তায় নেমে আসতে হয়েছে। আমরা ঘরে বসে কেউ সরকারকে গালি দিচ্ছি, স্টুডেন্টদের কাজকে বাড়াবাড়ি বলছি, আবার শ্রমিকদের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করছি। মনে হচ্ছে মোরগ লড়াইয়ের অপেক্ষা করছি, কখন রক্তপাত শুরু হবে।

“আমি বিশ্বাস করি, সব শ্রমিক এক নয়। যে অন্যায় করেছে তার শাস্তি হোক, ফাঁসি হোক। তাই বলে সবাইকে এক কাতারে দাঁড় করাতে পারি না। মনে রাখা উচিত, পরিবহন আর যোগাযোগ খাতে আজ যে সমস্যা তৈরি হয়েছে তার জন্য একতরফা শ্রমিক নয়, আমাদের ৪৭ বছরের সিস্টেম দায়ী। ওরা শুধু এই সিস্টেমের সাথে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে।”

এদিকে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা ও রক্তপাত শুরু হলে বিদেশিদের চ্যানেলগুলো লাইভ কাস্ট করবে। অস্থিতিশীলতার অভিযোগ তুলবে। এটা যে কত লজ্জার, অপমানের, এই ধারণা কি আছে আমাদের? আমরা আমাদের নিজেদের উপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছি। আমাদের উচিত, এখনই সময়, স্টুডেন্ট ও শ্রমিক- উভয়কে নিয়ে বসার। শ্রমিকদের বোঝাতে হবে যে এই শিশুরা আপনাদেরই সন্তান। আজ যে মেয়েটা গাড়ি চাপায় নিহত হয়েছে, তাঁর বাবাও শ্রমিক। আজ তিনি কলিজার টুকরো সন্তান হারিয়েছেন, কাল আপনারাও হারাবেন।

লেখকের সব লেখা

প্রকৃত সিস্টেম মানতে তাদের বাধ্য করতে হবে। আপনাকে-আমাকেই বোঝাতে হবে যে আপনাদের সন্তানদের ‍জন্যই আপনাদের শোধরাতে হবে। এক শাহাজাহান খানকে দিয়ে সকল শ্রমিক ও শ্রমিক-নেতাদের এক কাতারে দাঁড় করানোর পক্ষে আমি নই। আমার জানামতে, আন্দোলনরত আমাদের কোমলমতি ভাই-বোনেরাও সবাইকে এক কাতারে দাঁড় করাচ্ছে না। তাহলে এতটা শৃঙ্খলা তাঁরা কোনদিনই দেখাতে পারতো না। কে অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন আর কে অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন নয়, তা বড় কথা নয়। বড় কথা হচ্ছে, আমরা সবাই মানুষ। আমরা সবাই বাংলাদেশি। আমরা সবাই মিলেই আমাদের বাংলাদেশ। কোনো এক পক্ষ বলতে বাংলাদেশ বোঝায় না।

তাই লড়াই ও রক্তপাতের উসকানী না দিয়ে, প্রতিশোধের উন্মাদনা না শিখিয়ে আসুন আমরা আমাদের শ্রমিক আর স্টুডেন্টদের নিয়ে বসি। সমস্যা সমস্যা বলে দুনিয়ার সামনে না চেঁচিয়ে আসুন নিজেরা ‍সমস্যার সমাধান করি। এই কোমলমতি শিশুদের মতো আমরাও ডিসিপ্লিন অনুযায়ী এগোই। আমরা আমাদের ভাই-বোন, পিতা-মাতাদের রক্ত রাজপথে ঝরতে দেখতে চাই না। সেটা দুর্ঘটনা ঘটিয়ে হোক কিংবা লড়াই-মারামারি করেই হোক। দেশটা আমাদের। দায়িত্বভারও আমাদের সকলের।

জান্নাতুল মাওয়া ড্রথি: কলামিস্ট

ক্যাটাগরি: প্রধান কলাম,  সম্পাদকের বাছাই

ট্যাগ: জান্নাতুল মাওয়া ড্রথি

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply