মঙ্গলবার রাত ৮:০০, ২১শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ৫ই নভেম্বর, ২০২৪ ইং

ধর্ষকরা ‘আসল ছাত্রলীগ’ না

জাহাঙ্গীর আলম বিপ্লব

এই বদ্ধদশা থেকে বেরোনোর উপায় নেই ভাঙ্গা ছাড়া। ভাঙবে কারা? যারা ভাঙবে তারা নিজেরাই আগে ভেঙে বসে আছে! আগে খবর দেখতাম, ‘এমন কোনো মাস নেই, যে মাসে একাধিক নারী-শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটে না।’ এখন ‘মাস- সপ্তাহ-দিন এর জায়গায় ‘মুহূর্ত’ বসাতে হবে।

পেছনের ঘটনাবলী বাদ রাখলেও সদ্য ঘটা ঘটনাগুলোই এই পচা-গলা, দুর্গন্ধময় বসবাসের অযোগ্য সমাজের দগদগে ক্ষতগুলো স্পষ্ট করে দেয়। সাভারের নীলা রায়কে হত্যা করা হয়েছে। তার আগে ধর্ষণ হয়েছে কি না সেটা কেউ তুলছে না। খাগড়াছড়িতে আদিবাসী কিশোরীকে ঘরে ঢুকে দলবেঁধে গণধর্ষণ করা হয়েছে। সেই খবর টাটকা থাকতেই সিলেটের এমসি কলেজের হোস্টেলে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে সাত-আটজন মিলে গণধর্ষণ করেছে। এই হোস্টেলের ঘটনার ২জন বাদে বাকিরা কলেজের ছাত্রলীগ সদস্য।

বিধি নিষেধ আর জেল-গুমের হুমকির পরও সামাজিক মাধ্যমে এখন পর্যন্ত খুব সামান্য পরিমাণে হলেও লেখার সুযোগ আছে। বাকি মিডিয়া তো সেই কবেই ‘বিক্রিত’। সুতরাং সেখানে কী কী বলা হবে, কোন্ পক্ষ কীভাবে নিজেদের দায় এড়াবে সব মুখস্ত। ছাত্রলীগ অপরাধ বা ধর্ষণ করলে বলা হবে- ওরা বহিষ্কৃত, ‘আসল ছাত্রলীগ’ না। ওরা বহিরাগত, অনুপ্রবেশকারী, হাইব্রীড। মাদ্রাসা শিক্ষক বা ধমীর্য় লেবাসধারী ধর্ষণ করলে বলা হবে- ওরা ‘অন্য আকিদার’ লোক, প্রকৃত ইসলাম এসব সমর্থন করে না। সামাজিক অবক্ষয়, উন্মত্ত চলা-ফেরা, বেপর্দাই এসবের জন্য দায়ী।

টুকটাক কবিরাজিতে কাজ হবে না। ডাইরেক্ট অপারেশন। স্টেটের সকল টুলস থেকে দলীয় কর্তৃত্ব গুটিয়ে নিতে হবে। শুধু গুটিকতক অপরাধীকে শাস্তি দিয়েও সুরাহা হবে না। মিডিয়াকে পুরোপুরি সরব হতে হবে।

রাষ্ট্রীয় বাহিনীসমূহের কেউ এমন করলে বলা হবে- ‘মিথ্যা অপবাদ দিয়ে রাষ্ট্রের বাহিনীকে হেয় করার বিদেশি ষড়যন্ত্র।’ একজন কথিত অপরাধীর জন্য পুরো বাহিনীকে দোষারোপ করা যাবে না। অন্য শ্রেণি-পেশার লোকজন করলে যার যার মত করে মলম লাগানোর ব্যবস্থা আছে। ধরা যাক রাষ্ট্রীয় বাহিনী। এরা রাষ্ট্রের বেতনভূক কর্মচারী। এদেরকে হতে হবে নির্দলীয়। এরা সরকারের নয়, জনগণের সেবক। কিন্তু বাস্তবে কী দেখা যাচ্ছে? নিয়োগ থেকে বদলি, প্রমোশন থেকে পোস্টিং, অপরাধ করলে বিচার, ভালো কাজের উপহার সবই দলীয় সংকীর্ণ রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত।

আজ থেকেই দলীয় কর্তৃত্ব উঠিয়ে দেওয়া হোক, কালকেই দেশের অর্ধেক অপরাধ কমে আসবে। ধরা যাক সাভারের মিজান, যে মাত্র ১৪ বছর বয়সের নীলা রায়কে খুন করেছে। মিজানের বাবা ক্ষমতাসীন দলের কেউ না হয়তো। এরপর যখন দেখলেন তার ছেলের যাবজ্জীবন সাজা হতে যাচ্ছে, তখন কী ঘটবে? তার বাপ সূতোয় সূতোয় গিঁট দিয়ে দলীয় সমর্থক সুবিধা নিতে চেষ্টা করবেন এবং পাবেনও। এবং চূড়ান্ত বিচারে মহামান্য প্রেসিডেন্টের সাধারণ ক্ষমা লাভের চেষ্টা করবেন এবং সফলও হবেন।

সুতরাং টুকটাক কবিরাজিতে কাজ হবে না। ডাইরেক্ট অপারেশন। স্টেটের সকল টুলস থেকে দলীয় কর্তৃত্ব গুটিয়ে নিতে হবে। শুধু গুটিকতক অপরাধীকে শাস্তি দিয়েও সুরাহা হবে না। মিডিয়াকে পুরোপুরি সরব হতে হবে। যে কোনো কেস এর শেষ না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার ফলোআপ করতে হবে। কিন্তু কোন্ মিডিয়া করবে?

লেখকের ব্লগ

জাহাঙ্গীর আলম বিপ্লব: লেখক, সাংবাদিক

ক্যাটাগরি: মিনি কলাম

ট্যাগ: জাহাঙ্গীর আলম বিপ্লব

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply