করোনা ভাইরাসের কারণে যখন পুরো দেশের শ্রমজীবী মানুষ কর্মহীন এমন পরিস্থিতে হাওরের কৃষকদের সোনালী ধান ঘরে তোলা নিয়ে বাড়ছে শঙ্কা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার আকাশী হাওর জুড়ে শুরু হয়েছে বোরো ধান কাটার উৎসব। করোনা ভাইরাসের কারণে অবরূদ্ধ থাকায় তীব্র শ্রমিক সংকট চলছে সরাইলে। পহেলা বৈশাখ কৃষকরা পাকা ধান কাটার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। অনেকেই ধান কেটে গোলায় তুলতে শুরু করেছেন। হাওর জুড়ে এখন পাকা, আঁধা পাকা ধানের শীষ দুলছে।
কোনো কোনো কৃষক ধান কাটছেন আবার কোন কোন কৃষক বাড়ির আঙ্গিনা প্রস্তুত রাখছেন। শ্রমিক প্রতি দৈনিক ধান কাটার মূল্য গত বছর ছিল ৩-৪’শ টাকা। আর এবার ৬-৭’শ টাকা। কৃষকরা জানান, পোকা-মাকড়ের আক্রমণ ও কোন ধরণের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে না পড়ায় বোরো ফলন হয়েছে ভাল। এখন ধান গোলায় তুলতে পারলে তাদের কষ্টার্জিত স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে। ৩০ শতাংশ জমির ধান কাটতে কৃষকের খরচ হচ্ছে ৪-৫ হাজার টাকা।
কৃষক মোমিন মিয়া বলেন, সে ২০০ শতাংশ জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে ধান কেটে আনতে পাড়ছে না। ধান কাটার শ্রমিক পাচ্ছে না। একজন শ্রমিক ৬০০-৭০০ টাকায়ও পাওয়া যাচ্ছে না। এ খরচ বহন করতে নাভিশ্বাস দরিদ্র কৃষকদের। উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে লাভের আশা করতে পারছেন না কৃষকরা।
ধরন্তী গ্রামের মো. ফজল মিয়া বলেন, শ্রমিকের তীব্র সংকট। শ্রমিক পাওয়া গেলেও মূল্য অনেক বেশী। জমি চাষের খরচই ওঠবে না।
সূর্যকান্দি গ্রামের কৃষক শাহ আলম বলেন, এবার তিনি ৯০ শতাংশ জমিতে বোরো আবাদ করেন। বোরো ফলন ভাল হয়েছে তাই কৃষকরা খুশি।
কালীকচ্ছ গ্রামের কৃষক সুরুজ আলী বলেন, বোরো ফলনে খুশি হলেও ন্যায্য দাম না থাকায় কৃষকরা ভাল নেই। তিনি কৃষকদের বাঁচাতে ধানের ন্যায্য দাম নিশ্চিতের দাবি জানান।
সরাইল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের কৃষি কর্মকর্তা নয়ন মনি সুত্রধর জানান, এবার সরাইলে হাওরে ১৪ হাজার ৮৮০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ৫৯ হাজার ৪৩১ মেট্রিক টন। তিনি বলেন,বোরো মওসুমে বি-২৮ এবং বি-২৯ দুইটা ফসলই বেশি করা হয়েছে, বি-২৮ ফসলটা পেঁকে গেছে। অনেক জায়গায় কাটা শুরু হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এখানকার শ্রমিক গুলো বেশির ভাগই আসে ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, এলাকা থেকে এবং কিছু আসে উত্তরবঙ্গ থেকে। করোনার প্রভাবে বাইরের শ্রমিকরা আসতে পারছেন। তিনি বলেন,পরিবেশ অনুকূলে থাকাই এবার হাওরের ফসল লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।
শেখ মো. ইব্রাহীম, সহ-সম্পাদক
ক্যাটাগরি: ব্রাহ্মণবাড়িয়া, শীর্ষ তিন
[sharethis-inline-buttons]