বুধবার রাত ১২:২৯, ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং

শত আপত্তি সত্ত্বেও শহরের মধ্যখানে করোনা হাসপাতাল

জাকারিয়া জাকির

জনসাধারণের প্রশ্ন, শহরের আশেপাশে এতো সুযোগ থাকার পরও কেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রাণকেন্দ্রে এই ভয়াবহ মারাত্মক ছোঁয়াছুঁয়ি রোগীদেরকে আনা হচ্ছে? এ ব্যাপারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,  হাসপাতালের পেছনের একটি জায়গার দেয়াল ভেঙে গেইট করা হচ্ছে। এ গেইট দিয়েই করোনা রোগীদেরকে ঢোকানো হবে।

সম্প্রতি “ব্রাহ্মণবাড়িয়া” নিয়ে স্থানীয় ও জাতীয় বিভিন্নমুখী ষড়যন্ত্রের আভাস পাওয়া যাচ্ছে বলে অনেকেই বলাবলি করছেন। কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে জাতীয় মিডিয়াগুলো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অপপ্রচারে মেতে ছিল পুরো একটি সপ্তাহ। এখনো থেমে নেই তাদের অপপ্রচার। এরমধ্যেই কে বা কাদের ইশারায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালকে করোনা হাসপাতালে রূপান্তরিত করার আরেক ‘খেলা’ শুরু হয়। এটি জানতে পারামাত্র স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ, মিডিয়া, সাধারণ মানুষ ও সাংবাদিগণ এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। তারা বলেন, শহর থেকে সামান্য দূরে কোথাও হলেই ভালো। কারণ শহরের মধ্যস্থলে হলে এর দ্বারা করোনা রোধ না হয়ে বরং বিস্তার হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

অথচ শহরবাসীর সমস্ত আপত্তি, অভিযোগ, মন্তব্য উপেক্ষা করে অবশেষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালেই করা হচ্ছে করোনা হাসপাতাল। শহরের বাইরে এটি করার কথা থাকলে শেষ পর্যন্ত তা করা হয়নি। জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতাল সংলগ্ন “নার্সিং ইনস্টিটিউটকে” করোনা হাসপাতালে রূপান্তর করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন অফিসের একজন প্রতিনিধি ডাক্তার সানজিদা দেশ দর্শনকে জানান, সদর হাসপাতালের ভিতরের অংশ “নার্সিং ইনস্টিটিউটটি” করোনা রোগীদের জন্য তৈরি করা হচ্ছে। যথাসম্ভব পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা হবে এবং বাইরে যেন রোগ জীবাণু ছড়াতে না পারে সে ব্যবস্থা করা হবে।

এদিকে এ হাসপাতালের চারপাশেই রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও ব্যাপক জনসমাগমস্থল। পূর্বপাশে ডাক্তার ফরিদুল হুদা রোড তথা পুরনো সিনেমা হল রোড। রয়েছে হাজারো রকমের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিবাড়িয়া টাওয়ার, আবাসিক বিল্ডিং, উত্তরে কুমারশীল মোড়, দক্ষিণে কে দাস মোড়। এরকম একটি ব্যস্ততম এলাকায় করোনা রোগীদেরকে রাখা স্বাস্থ্যসম্মত কি না- এ নিয়ে প্রশ্ন।

এটা এখানে না করে শহরের সাইডে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কিংবা মেডিকেল কলেজের আওতাধীন যে কোনো একটি বিল্ডিংয়ে স্থানান্তরিত করা যেত। এতে করে শহরবাসীর এই রোগ বিস্তারের ভয়-ভীতি থাকতো না। এ ব্যাপারে দীর্ঘ দুই সপ্তাহ যাবৎ আলোচনা-সমালোচনা চলাকালীন ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজের মালিক ডাক্তার মোহাম্মদ আবুু সাঈদ তার একটি ভিডিও বার্তায় বলেছিলেন, আমার হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা করা হলে আমার কোনো আপত্তি নেই।

তবুও জনসাধারণের প্রশ্ন, শহরের আশেপাশে এতো সুযোগ থাকার পরও কেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রাণকেন্দ্রে এই ভয়াবহ মারাত্মক ছোঁয়াছুঁয়ি রোগীদেরকে আনা হচ্ছে? এ ব্যাপারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,  হাসপাতালের পেছনের একটি জায়গার দেয়াল ভেঙে গেইট করা হচ্ছে। এ গেইট দিয়েই করোনা রোগীদেরকে ঢোকানো হবে।

পাশের রুমগুলো হবে করোনা রোগীদের থাকার স্থান। এ রুমগুলোতে নেই পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা। সম্ভবত এ রুমগুলো পরিত্যক্ত  ছিলো। এ ব্যাপারে তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি। করোনা রোগীদের কেন এখানে স্থানান্তর করা হচ্ছে, জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন, এটা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার। এই বলে আস্তে আস্তে তারা সটকে পড়ে। এ ব্যাপারে ফরিদুল হুদা রোডের ব্যবসায়ী সমিতির সেক্রেটারি ও জয়েনসেক্রেটারি কামরুল হাসান দেশ দর্শনকে বলেন, এখানকার সমস্ত ব্যবসায়ীরা বিষয়টি নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন । এ নিয়ে অন্য এক ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইনু মিয়া ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরবাসী তথা বিজ্ঞমহল আশা করছেন, এর একটা সুন্দর বিহিত হবে। তা না হলে করোনা থেকে নিস্তারের চেয়ে  আশপাশ এলাকাগুলো করোনার বিস্তার ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা। এর কারণ, আমাদের দেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তত উন্নত নয়। এমনিতেই হরহামেশা হাসপাতালের আশেপাশের এলাকায় সিরিজ, তুুলা, সুঁই ইত্যাদি বর্জ্য দেখা যায়। যদি করোনা রোগের বর্জ্য এভাবে আশপাশে পড়ে, তাহলে সমস্ত শহর আক্রান্ত হবে এই মারাত্মক রোগে। এজন্য সমস্ত শহরবাসী তথা ব্যবসায়ী সমিতির বলছেন, এ ব্যাপারে যেন একটা সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং  রোগীদের অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়।

শহরবাসী একজন বলেন, “বড়ই অভাগা আমরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরবাসী। শত আপত্তি থাকা সত্ত্বেও করোনা রোগীদের স্থানান্তরিত করা হচ্ছে সদর হাসপাতালে। তার মানে আমি বলতে চাই না, করোনা রোগের চিকিৎসা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় না হোক। আমিও একজন ভুক্তভোগী হতে পারি। সমস্যাটা হলো, যেহেতু এই রোগটা খুব দ্রুতগতিতে বিস্তার ঘটায়, সেজন্য লোকালয় থেকে একটু দূরে কোনো হাসপাতালে এর ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।”

উল্লেখ্য, আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের সদর হাসপাতাল একবারে শহরের মাঝ পয়েন্টে অবস্থিত। এমনিতেই এ হাসপাতালের  সমস্যার শেষ নেই,  এ কারণে বিভিন্ন সময়ে হাসপাতাল স্থানান্তরের প্রস্তাবও এসেছে। এরইমধ্যে এই করোনা রোগীদেরকে এখানে স্থানান্তরিত করা হলে বিস্তার ঘটতে পারে আশপাশের এলাকাগুলোতেও।

জাকারিয়া জাকির: সহ সম্পাদক, দেশ দর্শন

ক্যাটাগরি: ব্রাহ্মণবাড়িয়া,  শীর্ষ তিন

ট্যাগ:

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply