সবচেয়ে বড় সমস্যা এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে, ফ্লাইওভারের দুই পাশের রাস্তা, মাত্র আট থেকে সাড়ে আটফুট। বিশেষ করে শহরের বাইরে থেকে এসে মিলিত হওয়া এ রোডের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে নয় ফুটের উপরে পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ ফ্লাইওভারের দুইপাশের রাস্তা এখন পাড়া-মহল্লার চিপা-গলির সমান। এতে করে পশ্চিম পাশের ফারুকী বাজারের দুটো গলি, রফিকুল ইসলাম রোড, ডাকবাংলা মোড়, পুনিয়াউট প্রবেশের মুন্সি আব্দুল কাদির রোড, পূর্ব পাশের মিশন হাসপাতাল, খ্রিস্টান চার্চ, কলেজপাড়া প্রবেশের রোড, শিমরাইলকান্দি প্রবেশের রোড, শওকত ডাক্তারের বাসার গলিসহ দুই পাশের প্রায় বিশ-ত্রিশটি মোড় অকেজো হয়ে যায়। এসব মোড় দিয়ে এখন সহজে রিক্সা-সিএনজি আসা-যাওয়া করতে পারে না।
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী, সুবিখ্যাত এবং ভৌগলিকভাবে অতিগুরুত্বপূর্ণ এক জেলা শহর ব্রাহ্মণবাড়িয়া। এটি ঢাকার সঙ্গে বিভাগীয় শহর সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লার (প্রস্তাবিত) নৌ-পথ, রেল-পথ ও সড়ক-পথের সংযোগস্থল। ব্রাহ্মণবাড়িয়া অচল হলে সারা বাংলাদেশ কার্যত অচল হয়ে পড়ে। এ শহরটির প্রধান সড়ক টি.এ রোড। বিশেষ করে কাউতলী থেকে কুমারশীল মোড় পর্যন্ত এ রোডের পাশেই সরকারি কলেজ, মহিলা কলেজ, সদর থানা, রেলস্টেশন, সদর হাসপাতাল, ভূমি অফিসসহ সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। ১৯৮৫ সালের আগে এ রোডে বাস চলাচল করত। পরে পৈরতলা দিয়ে বিকল্প মহাসড়ক স্থাপিত হলে ধীরে ধীরে বাস স্টেশন, সিএনজি স্টেশনগুলো এ রোডের বাইরে নেয়া হয় শহরকে যানজটমুক্ত করতে। কেননা এ রোডটি অচল হলে পুরো ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্তব্ধ হয়ে পড়ে। কিন্তু দীর্ঘদিন বিএনপির এক অযোগ্য মন্ত্রী সংসদ নির্বাচনে পাশ করে আসায় এবং বিএনপি-জাতীয় পার্টির ব্যাপক লুটপাটের কারণে এ শহরের মৌলিক কোনো আয়-উন্নতি বিন্দুমাত্র হয়নি। তাই এ জেলার ৮টি উপজেলা ক্রমাগত উন্নত হতে থাকলেও মূল জেলার গুরুত্ব ও সাজ-সৌন্দর্য দিন দিন কমছে। অন্যদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মিলিত লুটপাট এবং সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যাপক দুনীর্তির কারণে শহরটি এখন মৃতপ্রায়। সরকারি বিদ্যুত, টেলিফোন, চিকিৎসা, শিক্ষাসহ সমস্ত সরকারি সেবা ভেঙ্গে পড়েছে।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সরকারের সংসদ সদস্য র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী প্রায় শতকোটি টাকা ব্যয়ে এ রোডের উপর এক গুরুত্বপূর্ণ ফ্লাইওভার বা রেলগেইট-ওভারপাস নির্মাণ করেন, যা আরো দশ বছর আগেই নির্মাণ করা অপরিহার্য ছিল। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে, ফ্লাইওভারের দুই পাশের রাস্তা, মাত্র আট থেকে সাড়ে আটফুট। বিশেষ করে শহরের বাইরে থেকে এসে মিলিত হওয়া এ রোডের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে নয় ফুটের উপরে পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ ফ্লাইওভারের দুইপাশের রাস্তা এখন পাড়া-মহল্লার চিপা-গলির সমান। এতে করে পশ্চিম পাশের ফারুকী বাজারের দুটো গলি, রফিকুল ইসলাম রোড, ডাকবাংলা মোড়, পুনিয়াউট প্রবেশের মুন্সি আব্দুল কাদির রোড, পূর্ব পাশের মিশন হাসপাতাল, খ্রিস্টান চার্চ, কলেজপাড়া প্রবেশের রোড, শিমরাইলকান্দি প্রবেশের রোড, শওকত ডাক্তারের বাসার গলিসহ দুই পাশের প্রায় বিশ-ত্রিশটি মোড় অকেজো হয়ে যায়। এসব মোড় দিয়ে এখন সহজে রিক্সা-সিএনজি আসা-যাওয়া করতে পারে না।
জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, যেসব প্রকৌশলীর দ্বারা এর ডিজাইন করা হয়েছে, তারা সঠিক ডিজাইন করেছে কি না, সঠিক ইনফরমেশন দিয়েছে কি না, আর সেসব মানা হয়েছে কি না। এদিকে দুপাশের রাস্তার নীচে ড্রেনেজ ব্যবস্থার জন্য অনেক মোটা মোটা পাইপ বসানো হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ গ্যাসলাইন-পানির লাইন নতুন করে বসানো হয়েছে। অথচ এখন রাস্তা বাড়াতে চাইলে সব আবার নতুন করে ওলট-পালট করতে হবে, অথবা অদূর ভবিষ্যতে ফ্লাইওভারটি ভেঙ্গে ফেলতে হবে।
এদিকে মানুষ হাঁটারও কোনো জায়গা নেই। পশ্চিম-পূর্ব পাশের ফুটপাত মাত্র দেড় ফুট। তাও প্রায় জায়গাতে খুব বেশি উঁচু-নিচু। তার উপর পনের-বিশ গজ পর পর রয়েছে সাড়ে তিন ফুট মোটা বিদ্যুতের খুঁটি। আর বাকি জায়গাগুলো রাস্তার পাশের দোকানদারদের দখলে। আট-নয় ফুট রাস্তার পাশের এ দেড়-দুই ফুট ফুটপাতও দোকানদের কাছ থেকে দখলমুক্ত করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ। আরো আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, পুরো ফ্লাইওভারটি অনেক বেশি আঁকাবাঁকা। তাই অধিক চার্জ খরচের কারণে রিক্সা-অটোরিক্সাগুলো ফ্লাইওভারটি ব্যবহার করতে চায় না। এতে যানযট না কমে বরং আরো বেড়েছে। তাছাড়া এ রোডটি মূলত প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাসের নয়। এসবের জন্য বিকল্প রাস্তা রয়েছে। এ রোডটি মূলত রিক্সা-অটোরিক্সা-সিএনজির। আর এরা ফ্লাইওভারটি ব্যবহার করছে না।
নগর পরিকল্পনাবিদগণ বলছেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ জেলাশহরের এ রোডটিতে ফ্লাইওভার নির্মাণ করতে গেলে দুই পাশে কমপক্ষে পনেরো থেকে বিশ ফুটের মতো রাস্তা রাখা অবশ্য কর্তব্য। তা না হলে রোডটি কোনোভাবেই ব্যবহারযোগ্য হবে না। বরং মানুষের হাঁটাচলার সমস্যা, জ্যাম ও দুর্ঘটনা পুরো শহরের গুরুত্ব ম্লান করে দেবে। এখন হচ্ছেও তাই। সুতরাং জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, যেসব প্রকৌশলীর দ্বারা এর ডিজাইন করা হয়েছে, তারা সঠিক ডিজাইন করেছে কি না, সঠিক ইনফরমেশন দিয়েছে কি না, আর সেসব মানা হয়েছে কি না। এদিকে দুপাশের রাস্তার নীচে ড্রেনেজ ব্যবস্থার জন্য অনেক মোটা মোটা পাইপ বসানো হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ গ্যাসলাইন-পানির লাইন নতুন করে বসানো হয়েছে। অথচ এখন রাস্তা বাড়াতে চাইলে সব আবার নতুন করে ওলট-পালট করতে হবে, অথবা অদূর ভবিষ্যতে ফ্লাইওভারটি ভেঙ্গে ফেলতে হবে। অন্যদিকে কালীবাড়ি মোড় থেকে ফারুকি বাজার পর্যন্ত রাস্তার দুপাশের জমির মালিকরা জায়গা কতটুকু ছাড়বেন, আদৌ ছাড়বেন কি না, যদি ছাড়েনই তবে কেন পর্যাপ্ত জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়নি তা জানা এখনো সম্ভব হয়নি।
এ সম্পর্কে আগের নিউজটি পড়ুন-
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ফ্লাইওভার এখন মরণফাঁদ, বাড়ছে জ্যাম-দুর্ঘটনা
ক্যাটাগরি: প্রধান খবর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
[sharethis-inline-buttons]