শুক্রবার রাত ৪:১১, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ইং

ব্রাহ্মণবাড়িয়া টাউন খালটি ধ্বংস করা হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে

রুহুল আমীন সজল

অব্যাহত দখল ও দূষণের শিকার হয়ে সম্পূর্ণ ধ্বংস হতে চলেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া একমাত্র টাউন খালটি। গত প্রায় ৩০ বছর ধরে খনন না হওয়ায় এক সময়ের খরস্রোতা এ খালটি এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত।

বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জেলাশহর ব্রাহ্মণবাড়িয়া। এর ইতিহাস নতুন করে বলার কিছু নেই। প্রশাসনিক, বাণিজ্যিক, ভৌগলিক এবং অন্যতম সীমান্ত এলাকা হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গুরুত্ব এবং কদর সবসময়ই সবার কাছে ছিল। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, স্বয়ং এখানকার কারো কাছে নেই। বিশেষ করে কোনো রাজনৈতিক, প্রশাসনিক এবং সামাজিক দায়িত্বশীল কারো কাছে। তারা সবসময় নিজের ও পরিবারের কথিত সম্মান, শক্তি, ক্ষমতা ও ব্যাংক ব্যালেন্স বাড়াতেই সর্বদা তৎপর। ফলে দীর্ঘ শোষণের পর এর কিছু উপজেলার সামান্য উন্নতি (তাও যথেষ্ট নয়) হলেও স্বয়ং জেলা সদর দিন দিন ধ্বংসের গহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছে।

এরই একটা সামান্য উদাহরণ ব্রাহ্মণবাড়িয়া টাউন খাল। বলতে গেলে শহরের পরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্য রক্ষায় এ খালটির খনন ও প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের বিকল্প নেই। অথচ এর দিকে কোনো মন্ত্রী-এমপির ফিরে তাকাবারও সময় নেই। এলাকাবাসীর অভিযোগ, গত প্রায় ৯ বছর আগে সৌন্দর্য বর্ধণের নামে এ খালটিকে পৌর কর্তৃপক্ষ সংকুচিত করে ফেলায় খালটি এখন মৃতপ্রায়। সৌন্দর্য বর্ধনের প্রকল্প হাতে নিয়ে প্রচুর টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন সে সময়কার পৌর মেয়রসহ সংশ্লিষ্টরা। যা সাধারণ মানুষের মুখে মুখে প্রচার আছে। কিন্তু এই খাল যতটুকু খনন বা সংস্কার করা হয়েছে এতে সৌন্দর্য বর্ধন তো দূরের কথা, শহরবাসীর কোনো কাজেই লাগেনি।

কারো কারো অভিযোগ, ক্ষমতাসীনদের অনেকেই ভূমিদস্যুদের সঙ্গে মিলে এ খালটি পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করছে দীর্ঘদিন ধরে

দুবছর আগে জেলার সাবেক পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানের উদ্যোগে এ খালটি একরকম দায়সারাভাবে পরিষ্কার করা হলেও প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে খালটি ফের আগের চেহারায় ফিরেছে। কাগজে-কলমে খালটির মালিক জেলা পরিষদও এটি রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে কার্যত কোন ভূমিকা পালন করছে না।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার সামনে একমাত্র টাউন খালটির মরণদশা, কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ উদাসীন

সরেজমিন খালপাড়ে গিয়ে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই, এটি খাল নাকি ড্রেন। অবশ্য এখন ড্রেনও বলা যাবে না, বরং একটি ময়লার ভাগাড়। বর্জ্য ফেলতে ফেলতে খালটিকে ভাগাড়েই পরিণত করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, খালটির দু’পাড় দখল করে পাকা-দালান ঘরসহ সহস্রাধিক স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। তারা বলছেন, এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করলে চিরতরে খালে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাবে। খালের বর্তমান পরিস্থিতিটা এমনই।

তিতাসের এক প্রান্তে শহরের টানবাজার থেকে শহরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত খালটি গোকর্ণঘাট হয়ে তিতাস নদীতে গিয়ে মিশেছে। বর্ষা এলেই পানিতে টইটুম্বুর হতো খালটি। ইঞ্জিনচালিত নৌকাসহ ছোট-বড় নৌকাও চলাচল করতো এ খাল দিয়ে। কাজীপাড়া উচাপুল থেকে এ খালের পানিতে লাফিয়ে পড়তো দুরন্তশিশুরা। নদীর মতো এ খালের পানিতেও স্রোত ছিল। খালের স্বচ্ছ পানিতেই স্থানীয়রা স্নান করতেন। তাছাড়া খালপাড়ের অনেক বাসিন্দা জাল ফেলে মাছ ধরে জীবন-জীবিকাও নির্বাহ করতেন। কিন্তু এসব কিছু এখন শহরবাসীর কাছে অতীত।

রাহ্মণবাড়িয়া জেলা নাগরিক ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক হাবিবুর রহমান পারভেজ বলেন, ফকিরাপুল সংলগ্ন ক্যাফে আবদুল­াহ, খানাবাসমতি, মসজিদ রোডের ঝুমুর হোটেলসহ খালের দুইপাড়ের বাসা-বাড়ি ও স্থাপনার ময়লা-আবর্জনা ফেলতে ফেলতে খালটি এখন মৃতপ্রায়। কাজীপাড়া এলাকার বাসিন্দা শফিকুল হক শাকিল বলেন, আমরা সকলেই চোখের সামনে খালটি ধ্বংস হওয়া দেখছি, অথচ কেউ কোন কিছু বলছি না। অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও এটি রক্ষণাবেক্ষণে কোন উদ্যোগ নিচ্ছেন না।

এই ছবিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বর্তমান ও সাবেক প্রধান দায়িত্বশীলদের দেখা যাচ্ছে

এ বিষয়ে বর্তমান পৌর মেয়র নায়ার কবির, সাবেক পৌর মেয়র হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি এবং জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম এমএসসি- এদের প্রত্যেকেরই সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে আমাদের পক্ষ থেকে। কিন্তু এদের কারো বক্তব্যই সন্তোষজনক নয়। তাই উল্লেখেরও প্রয়োজনবোধ করছি না। তারা প্রত্যেকেই নিজেদের সাফাই গাইতে এবং দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে ব্যস্ত। এদিকে বাস্তবতা হচ্ছে, এটি খনন ও সংরক্ষণের অভাবে শহরে জ্যাম, দুর্ঘটনা, যাতায়াত খরচ বৃদ্ধিসহ অসংখ্য সমস্যা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। কারো কারো অভিযোগ, ক্ষমতাসীনদের অনেকেই ভূমিদস্যুদের সঙ্গে মিলে এ খালটি পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করছে দীর্ঘদিন ধরে।

ক্যাটাগরি: ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ট্যাগ:

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply