শনিবার রাত ১১:৪৮, ১৪ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২৮শে ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিদ্যুৎব্যবস্থা বিপর্যস্ত : ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিবেদক

সরকার এত টাকা কোথায় খরচ করছে? কাদের পেছনে খরচ করছে? প্রতিবছর এভাবে বিদ্যুতবিল বাড়িয়েও এমন ভোগান্তি কেন ইত্যাদি। বিশেষ কিছু কর্মর্তার ব্যাপারে অনেক অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। কেন অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিষয়ে অধিকতর তদন্ত এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না? সামান্য একটু বাতাস বা বৃষ্টি-বাদল হলেই সবার আগে বিদ্যুৎ উধাও!

গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ও বাণিজ্যিক জেলাশহর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিদ্যুৎব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরেই বিপর্যস্ত হয়ে আছে। বিতরণেও চলছে চরম অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা। মাঝে মধ্যেই শহরজুড়ে মাইকিং করা হয়, ‘সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকবে না, কাজ চলছে।’ অথচ দেখা যায় তখন প্রায়ই থাকে। আবার বলা নাই কওয়া নাই, সপ্তাহের গুরুত্বপূর্ণ দিন শনিবার ও রবিবারে সারাদিন বিদ্যুৎ নেই। এমন বিশৃঙ্খলা এখন অহরহ। শিমরাইলকান্দি, কলেজপাড়া, কাজীপাড়া, ট্যাংকের পাড় তো বটেই, শহরের মূল প্রশাসনিক ও বাণিজ্যিক স্পট টি.এ রোড, ফকিরাপুল, কুমারশীল মোড়েও যখন তখন বিদ্যুত থাকে না। গত জানুয়ারিজুড়েই এমন খেলা শহরবাসী দেখেছে। সপ্তাহে দুতিন দিন প্রায়ই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিদ্যুত থাকে না। তেমনি গতকাল সারাদিনও ছিল না। রাতে এসেও কয়েকবার গিয়েছে। আবার আজ রোববার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত অন্তত ২০বার বিদ্যুত যাওয়া আসা করছে। এতে আবার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারগুলো। বিদ্যুতের এ রকম আসা-যাওয়ায় প্রচুর দামি কম্পিউটার নষ্ট হয়ে যায়।

আল-মদিনা আইটির সত্ত্বাধিকারী মানজুর রহমান জানান, আমরা শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট কোর্সের জন্য নির্দিষ্ট একটা ফি নেই। কিন্তু বিদ্যুতের সমস্যায় ঠিকমতো তাদের প্রশিক্ষণ দিতে পারি না। এতে অভিভাবকগণও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অপটিমাম আইটির চেয়ারম্যান দেলোয়ার হুসেন জানান, আমাদের পুরো ব্যবস্থাটাই বিদ্যুৎনির্ভর। কম্পিউটার, প্রজেক্টর এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ক্লাসরুম। কিন্তু বিদ্যুতবিপর্যয়ের কারণে পুরো প্রতিষ্ঠানটাই প্রতিবছর লস গুণে। এছাড়া টি.এ রোডের সমস্ত ব্যবসায়ীরাই এ ব্যাপারে দাতিয়ারা ওয়াপদার সরকারি-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওয়াপদায় উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ নিয়মিত উপস্থিত থাকেন না। ফোন করে প্রায়ই দায়িত্বশীল কাউকে পাওয়া যায় না। আবার ওয়াপদার একমাত্র টিএন্ডটি সংযোগটিও বিচ্ছিন্ন থাকে। ওতে ফোন ঢুকে না, ঢুকলেও কেউ ধরে না। বিদ্যুত বিপর্যয়ের ব্যাপারে ওয়াপদায় গতমাসে যোগাযোগ করা হলে (01841121244) নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুজ্জামান দেশ দর্শনকে জানান, তাদের প্রয়োজনীয় লোকবল ও সরঞ্জামের অভাব আছে। এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কাউকে জানিয়েছেন কি না জিজ্ঞেস করলে কোনো উত্তর দিতে পারেননি। আজ (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে তিনটায় ফোন করা হলে (01797282625) জনৈক লাইনম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এ মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ কেউ উপস্থিত নেই। তাছাড়া প্রায়ই তারা থাকেন না। অধিকাংশ কাজ আমরা লাইনম্যানরাই চালিয়ে নেই। একজন সিও’র পদবীও নাকি শূন্য আছে।

এদিকে আরো অনুসন্ধান করতে গেলে এ বিষয়ে অনেকেই কথা বলতে রাজি হননি। ভেতরে ভেতরে প্রচুর ‘রাজনীতি’ ও দুর্নীতি চলে বলে জানান। অন্যদিকে তাদের সরকারি ওয়েবসাইটও (pdb.brahmanbaria.gov.bd/) অসম্পূর্ণ দেখা যায়। প্রয়োজনীয় কোনো তথ্য ওতে পাওয়া যায়নি। জনগণ প্রায় বলাবলি করছে, সরকার এত টাকা কোথায় খরচ করছে? কাদের পেছনে খরচ করছে? প্রতিবছর এভাবে বিদ্যুতবিল বাড়িয়েও আমাদের এমন ভোগান্তি কেন ইত্যাদি। আমাদেরও প্রশ্ন, কেন এমনটা হচ্ছে? বিশেষ কিছু কর্মর্তার ব্যাপারে অনেক অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। সামান্য একটু বাতাস বা বৃষ্টি-বাদল হলেই সবার আগে বিদ্যুৎ উধাও! গত বছর কলেজপাড়াবাসী এ নিয়ে একাধিকবার বিক্ষোভ মিছিলও করেছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য এ অবস্থা জানেন কি না। কারণ তারা তো আবার এ বিপর্যয়ের বাইরে থাকেন। কেন অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিষয়ে অধিকতর তদন্ত এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না?

ক্যাটাগরি: ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ট্যাগ:

[sharethis-inline-buttons]

Leave a Reply