যানজটমুক্ত করার উদ্দেশ্যে ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হলেও এর যথোপযুক্ত ব্যবহার না হওয়ায় এবং ভুল ইনফরমেশনের উপর এটি করায় যানজট সমস্যা আরো বেড়েছে। সাথে বেড়েছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। প্রায় প্রতিদিনই বিশ-পঁচিশটি দুর্ঘটনা ঘটছে। একই সড়কে পাশাপাশি চলছে ব্যক্তিগত ব্যবহারের মোটরসাইকেল, সিএনজি, ইজিবাইক, টমটম, পথচারী। ট্রাফিক আইন থাকলেও তার প্রয়োগ নেই।
ব্রাক্ষণবাড়িয়া শহরে প্রতিদিন প্রায় পঞ্চাশ হাজার লোক প্রবেশ করে এবং কাজ শেষে বের হয়। এ শহরের প্রধান রাস্তা হচ্ছে- কুমারশিলমোড় টু কাউতলী রাস্তাটি। এটি টি.এ রোড (তোফায়েল আজম রোড) নামে পরিচিত। রাস্তাটি সবসময় বেশ ব্যস্ত থাকে। শহরের বাইরের সবগুলো রাস্তা বিভিন্ন দিক থেকে এসে এতে মিলিত হয়েছে। ব্রাহ্মণবড়িয়া সদর হাসপাতাল, জামিয়া ইউনুছিয়া মাদরাসা, আশিক প্লাজা, নিয়াজ মোহাম্মদ হাই স্কুল, ব্রাক্ষণবাড়িয়া সরকারি কলেজসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো এ রাস্তার পূর্ব পার্শ্বে অবস্থিত। সদর থানাও এখানেই।
এর নয়টি উপজেলার পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণের সবাই শহরে প্রবেশ করতে এ রাস্তাটি ব্যবহার করেন। এর মাঝামঝি স্থানে রেলওয়ে স্টেশনের নিকট রেলগেইট অবস্থিত। ট্রেন আসা-যওয়ার সময় গেইট পড়ে চরম যানজটের সৃষ্টি হয়। এ অসুবিধা দূর করার লক্ষ্যে ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ৭৬০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৭ দশমিক ৬ মিটার প্রস্থ এ ফ্লাইওভারের কাজ চলতি বছরের জুন মাসে শেষ হয়। ফ্লাইওভার নির্মাণে প্রথমে ৭৯ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। তবে অনেকেই বলছেন, এর ইনফরমেশন ও পরিকল্পনায় প্রচুর ভুল আছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার কাউতলী থেকে টি.এ রোডের ব্রিজ পর্যন্ত অটোরিকশার ভাড়া ছিল পাঁচ টাকা। বছর দুই হলো ভাড়া বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ টাকা। একইভাবে রিকশা ভাড়া বেড়ে ২০-২৫ থেকে ৩০-৪০ টাকা হয়েছে। পৌর এলাকার অনেক বাসিন্দার সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়। তাদের প্রায় সবাই দাবি করছেন, ভাড়া বাড়ার কারণ নব ণির্মিত টি.এ রোডের এ ফ্লাইওভার। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের সামনে থেকে দক্ষিণ কালীবাড়ি মোড় পর্যন্ত নবনির্মিত এ ফ্লাইওভারের নিচের সড়কের অবস্থা বড় করুণ! সে কারণে অটোরিকশা ও রিকশাচালকরা ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে।
এখানেই শেষ নয়। নবনির্মিত ফ্লাইওভার বিভিন্নভাবে দুর্ভোগ ও দুর্ঘটনা বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যাপকহারে। ফ্লাইওভারের নিচের দুপাশের সড়ক অতিমাত্রায় সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় যানজট ও দুর্ঘটনা বেড়েছে। আশপাশের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বেচাকেনা কমে গিয়েছে। সড়ক নির্মাণ করতে গিয়ে গ্যাসের পাইপলাইন কাটা পড়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে অনেকে। ফ্লাইওভারের নিচে সড়কের বিভিন্ন অংশ ভাঙ্গচোড়া ও রাস্তা ছোট হওয়ার কারণে এর নিচের অংশজুড়ে বেশির ভাগ সময়ই যানজট লেগে থাকে। ট্রেনের কারণে রেলগেইট ফেললে যানজট আরো বেড়ে যায়। স্টেশন রোডে কথা হয় মধ্যাপাড়া মহল্লার গৃহিনী শেখ সালমা আকতার হেলেনের সাথে। তিনি বলেন, ফ্লাইওভারের নিচের সড়ক দিয়ে রিকশা, অটোরিকশায় করে আসতে ভয় হয়। তাই মঠের গোড়া থেকে পায়ে হেঁটে কান্দিপাড়া আত্মীয়ের বাসায় যাই। কিন্তু তাতেও সস্তি নেই। কারণ এ রোডে এখন হেঁটে চলারও কোনো জায়গা নেই।
কথা হয় এ রোডের ইলেকট্রনিকস পণ্য বিক্রির প্রতিষ্ঠান অল-ইলেক্ট্রো সেন্টারের মালিক বাবুর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ফ্লাইওভার নির্মাণের পর থেকে আমাদের ব্যবসা কমে আসে। দোকানের সামনের রাস্তা পূর্বের তুলনায় খুব বেশি ছোট হয়ে যাওয়ায় এখন খুব একটা কাস্টমার আসে না। ভ্যানসহ কোনো যান দোকানের সামনে আনা যায় না বলে মালামাল ওঠানামা করাও সম্ভব হয় না।’
টি.এ রোডের ব্রিজের সামনে অটোরিকশা থেকে নামলেন ইকবাল আহমেদ নামের একজন। তিনি বলেন, ‘কাউতলী থেকে টি.এ রোড ব্রিজ পর্যন্ত আগে পাঁচ টাকা ভাড়া দিতে হতো। এখন দিতে হয় ১০ টাকা। এ ছাড়া রাস্তা খুব খারাপ হওয়ায় আসতেও মন চায় না।’
যানজটমুক্ত করার উদ্দেশ্যে ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হলেও এর যথোপযুক্ত ব্যবহার না হওয়ায় এবং ভুল ইনফরমেশনের উপর এটি করায় যানজট সমস্যা আরো বেড়েছে। সাথে বেড়েছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। প্রায় প্রতিদিনই বিশ-পঁচিশটি দুর্ঘটনা ঘটছে। একই সড়কে পাশাপাশি চলছে ব্যক্তিগত ব্যবহারের মোটরসাইকেল, সিএনজি, ইজিবাইক, টমটম, পথচারী। ট্রাফিক আইন থাকলেও তার প্রয়োগ নেই। যানজটের কারণে রাস্তা পারাপার হতে প্রায় ১৫/২০ মিনিট সময় লেগে যায়। প্রতি দিন ২০/৩০ জন যানজটের কবলে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। টি.এ রোডের ফ্লাইওভার যেন এখন মরণফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ক্যাটাগরি: অপরাধ-দুর্নীতি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
[sharethis-inline-buttons]