পাশের সিটে বসা যুবকও ব্যস্ত। শুনার জন্য খোদাপ্রদত্ত কান দুটোতে ছোট্ট দুটো শ্রবণযন্ত্র ঢোকানোই আছে। ওসব সরিয়ে পাশের যাত্রীর কথা শুনবে- সময় কই? কেউ কিছু বলতে চাইছে দেখার ফুরসত নেই। পাঁচ ইঞ্চি রঙ্গিন দুনিয়াটায় দেখার কত্ত কিছু! ওসব ফেলে বাস্তবনামক এই পানসে জগতটায় তাকানোর কী আছে?
পুরানা পল্টন মোড়। বিকাল বেলা। ট্রাফিক জ্যামে বাসে আটক। পাশের প্রাইভেটকারটায় সচিবালয়ের স্টিকার লাগান। ভিতরে বসা ভদ্র মহিলা ১৬ কোটি মানুষের কল্যাণ-চিন্তা কেন্দ্রের কর্মকর্তা। কোন মন্ত্রণালয়ের সচিব বা উপসচিব হবেন হয়ত। হাতে ১২-১৪ ইঞ্চি ট্যাব/আইপ্যাড। ইটের পর ইট গাঁথুনি হয়ে যাচ্ছে আর তিনি সর্বশক্তি দিয়ে ভেঙ্গে চলেছেন। সিগ্ন্যাল বাতি পরিবর্তন হল। চলতি রোড দুটি থেমে আটক গাড়িগুলোর চাকা সচল হল। প্রাইভেটকারটা চলে গেল দৃষ্টিসীমার বাইরে। দৃশ্যটা শুধু আটকে থাকল চোখে। বিঁধে থাকল অন্তরে।
পাশের সিটে বসা যুবকও ব্যস্ত। শুনার জন্য খোদাপ্রদত্ত কান দুটোতে ছোট্ট দুটো শ্রবণযন্ত্র ঢোকানোই আছে। ওসব সরিয়ে পাশের যাত্রীর কথা শুনবে- সময় কই? কেউ কিছু বলতে চাইছে দেখার ফুরসত নেই। পাঁচ ইঞ্চি রঙ্গিন দুনিয়াটায় দেখার কত্ত কিছু! ওসব ফেলে বাস্তবনামক এই পানসে জগতটায় তাকানোর কী আছে? আমার নানা সদালাপী মানুষ ছিলেন। বাস-ট্রেনে পরিচিতিতে সখ্য গড়ে উঠা বহু মেহমান আসত তার বাসায়। আজকের দিনে তিনি বেঁচে থাকলে …?
নেট-ইন্টারনেট, ফেইসবুক-টুইটারে নিমজ্জিতসমাজ ভ্রূ কুচকে তাকাবেন- স্বাভাবিক। দেশ দর্শনের চিন্তাশীল পাঠকসমাজ নিশ্চয় অমন বল্গাহীন নয়। যেভাবে চলছে, যে দিকে যাচ্ছে, যে পরিণতি ধেয়ে আসছে তা অনুভব-বিবেচনার মতো ষষ্ঠ ইন্দ্রীয়সমৃদ্ধ মানুষগুলোই জাতীয় ও মানবিক ঐক্যপ্রয়াসী এ ব্যতিক্রমী কাগজটার পাঠক বলে আমার বিশ্বাস।
একটি জাতিকে নিয়ে ভাবতে হলে, জাতীয় উন্নতি-অগ্রগতিতে অবদান রাখতে হলে, চারপাশের সমাজটাকে দেখার জন্য দুটি নয় চারটি চোখ থাকতে হয়- এ কথা স্বতঃসিদ্ধ। আমার শুধু একটি জিজ্ঞাসা, ছোট্ট শিশু থেকে পঞ্চাশোর্ধ্ব পর্যন্ত সবাই মোবাইলাসক্ত হয়ে পড়া জাতির মাঝে চার চোখসমৃদ্ধ মানুষের আকাঙ্ক্ষা- কাল্পনিক না বাস্তবসম্মত?
হানিফ আল হাদী : প্রাবন্ধিক, অনুবাদক, ভাষা প্রশিক্ষক
hanifalhadi@gmail.com
ক্যাটাগরি: পাঠকের মত, মিনি কলাম, সাহিত্য
[sharethis-inline-buttons]