করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ ঠেকাতে দেশে একটানা ১৪ দিনের সম্পূর্ণ শাটডাউন দেওয়ার সুপারিশ করেছে করোনা সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। গত বুধবার কমিটির ৩৮তম সভায় বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে সারা দেশেই উচ্চ সংক্রমণ।
করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ রোধে সারাদেশে কমপক্ষে ১৪ দিনের পূর্ণ ‘শাটডাউনের’ সুপারিশ করেছে করোনা সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। লকডাউন এবং কঠোর লকডাউনের মতো শাটডাউনেও থাকতে পারে কঠোর থেকে কঠোরতর বিধিনিষেধ।
বৃহস্পতিবার করোনা কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি এ তথ্য জানানো হয়েছে। সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ জানিয়েছেন, শাটডাউন মানে হচ্ছে সবকিছু বন্ধ থাকবে, শুধু জরুরি সেবা ছাড়া। অফিস-আদালত, বাজার-ঘাট, গণপরিবহণসহ সব বন্ধ থাকবে। সবাই বাসায় থাকবে।
তিনি বলেন, জরুরি সেবা বলতে ওষুধ, ফায়ার সার্ভিস, গণমাধ্যম ছাড়া সবকিছু দুই সপ্তাহ বন্ধ করে মানুষ যদি এই স্যাক্রিফাইস-কষ্টটুকু মেনে নেয়, তাহলে আগামীতে ভালো হবে।
অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ জানান, দিল্লি এবং মুম্বাইতে শাটডাউন দিয়ে ফলাফল পেয়েছে। সেখানে ৬ সপ্তাহ গণপরিবহন বন্ধ ছিল, এছাড়া দিল্লিতে আরও ৩ সপ্তাহ ছিল। দিল্লিতে প্রতিদিন একসময় ২৮ হাজার শনাক্ত হতেন, কিন্তু এখন সেখানে ১৫০ শনাক্ত হচ্ছেন। মৃত্যুও কমে এসেছে।
এদিকে এক প্রশ্নের জবাবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, উনারা (জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি) সুপারিশ দিয়েছেন। আসলে আমাদের চারপাশে তো করোনা বেড়েছে। আমরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন জায়গাতে কঠোর বিধিনিষেধ দিয়েছি এবং প্রতিদিনই আমরা সেটা পর্যবেক্ষণ করছি যে এটা বেড়ে যাচ্ছে। ৬ হাজার প্লাস হয়ে গেছে আজকে। তো জাতীয় পরামর্শক কমিটি যেটা দিয়েছে এটা সরকারের কাছে এসেছে। সরকার অবশ্যই এটাকে মূল্যায়ন করবে। আমরা দেখছি এটাকে কীভাবে আরও কঠোরভাবে এই পরিসরটিকে আরও বাড়াতে পারি তাদের পরামর্শগুলো দেখে।
করোনা মোকাবেলায় সরকার গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ঢাকার চারপাশে বসবাসকারী যেসব মানুষ ঢাকায় চাকরি বা কাজ করে, তাদের চাপে ভেঙে পড়েছে লকডাউনের সুরক্ষাবলয়। এখন আর এই লকডাউন দিয়ে কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলবে বলে মনে হয় না। বড়জোর সংক্রমণের গতি কিছুটা ধীর হতে পারে। কিন্তু ভারতীয় ভেরিয়েন্টের যে চেহারা দেখছি, তাতে এই ধীরগতি রাখার পরিকল্পনা বা কৌশল খুব একটা কাজে খাটবে না। মোটের ওপর পরিস্থিতি এখন এমন যে মানুষও এক রকম মহামারির সঙ্গে গা-সওয়া অবস্থায় আছে, আর সরকারও হয়তো তেমনি গাছাড়া ব্যবস্থায় আটকে আছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে বিশেষজ্ঞরা তো নিয়মিতই পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। সরকারও সে অনুসারে নির্দেশনা দিচ্ছে। কিন্তু পরামর্শ বা নির্দেশনা যদি বাস্তবায়ন করা না যায় তবে তো সংক্রমণ ঠেকানো মুশকিল হবেই। এ ক্ষেত্রে সবাইকেই দায়িত্বশীল হয়ে কাজ করতে হবে। মানুষকেও সতর্ক ও সচেতন হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে নিজেদের স্বার্থেই। কিন্তু মানুষ যেভাবে বেপরোয়া আচরণ করছে, সেটা তো থামানো যাচ্ছে না। তবে সবার মনে রাখা উচিত সংক্রমণ যদি হাসপাতাল উপচে পড়ে তবে কিন্তু কিছুই করার থাকবে না।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ঢাকাকে সুরক্ষার জন্য আশপাশের জেলায় লকডাউন দেওয়া হয়েছে। তার পরও মানুষ ছুটছে ঢাকায়। ঢাকায় সব কিছু খোলা থাকায় মানুষ নানা অজুহাতে হেঁটে আসা-যাওয়া করছে। কিন্তু দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধে অন্ততপক্ষে কিছুটা হলেও চলাচল নিয়ন্ত্রণ হয়েছে। এতে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি কিছুটা হলেও কম থাকবে।
ক্যাটাগরি: শীর্ষ তিন, সারাদেশ
[sharethis-inline-buttons]