“পৃথিবীর এই বিরাট পাঠশালায় চিন্তা ও শেখার জন্য রয়েছে বহু উপকরণ ও বিষয়। এ উপকরণ ও বিষয়গুলো যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করে প্রকৃত জ্ঞানের দ্বার উন্মোচন করা যায়, তবে হয়তো একদিন এই পৃথিবী হয়ে উঠবে স্বপ্নের চেয়েও সুন্দর।”
একজন মানুষ সঠিক ধর্মের সন্ধান পেলে বা তাকে সঠিক ধর্ম ও সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার ব্যবস্থা করে দিতে পারলে সে এই পৃথিবীর বিরাট খাতায় নিশ্চয় ভালো কিছু যোগ করতে পারে। এই ভালো বিষয়গুলো মানব জাতির কল্যাণে ব্যবহার করা গেলে সুন্দর একটি সমাজ উপহার পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়। আমাদের সামনে প্রচলিত যে অতীত উপস্থাপিত, যে অতীত আমরা দেখতে পাই বা যে অতীতের গল্প শুনি, সেখানেও কিন্তু দেখি বড় বড় সব ব্যক্তিরাই তখনকার বর্তমানকে ভেঙ্গে দিয়েছেন। গতানুগতিক ধ্যান-ধারণা, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, অনুষ্ঠঅনসর্বস্ব ধর্ম ও চিন্তাভাবনার বাইরে গিয়ে ভেবেছেন, কাজ করেছেন। ঠিক তেমনিভাবে বর্তমানেও তাই করতে হবে।
সবসময়ই বর্তমান শিক্ষা-ধর্ম যদি সঠিক হতো, সমৃদ্ধ হতো, আদর্শিক হতো, সঠিক লাইনে থাকতো তবে ইতিহাসস্বীকৃত সেসব খ্যাতিমান মানবরা তাদের সময়ে গতানুগতিক শিক্ষাব্যবস্থা ও ধর্মপালনের বাইরে এসে চিন্তাভাবনা ও বিপ্লব করতে হতো না। তাই একজন মানুষের সার্বিক দিক বিবেচনা করে প্রতিটি শিক্ষা ব্যবস্থায় যে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন, ঢেলে সাজানো প্রয়োজন, ধর্মীয় ভাবনা ও পালনে পরিবর্তন প্রয়োজন। তা তৎসংশ্লিষ্ট সকলের দায়িত্ব। আর প্রকৃত ধর্ম ও শিক্ষাই নিয়ে আসে মানব জীবনে পরম মুক্তি।
আরো পড়ুন> প্রযুক্তির সুষম বণ্টন ও বিজ্ঞাননীতির প্রয়োগ জরুরি
বর্তমানে আমাদের দেশের স্কুল-কলেজগুলোয় কী শেখানো হয় তা আমরা বিভিন্ন সভা-সমিতি, অনুষ্ঠানে দেখতে পাই। ভালো ফলাফল করেও ছাত্রদের হতে হচ্ছে সমালোচিত। শিক্ষকগণ তো শুধু পাঠ্যবইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান করে থাকেন। তাও আবার শ্রেণিকক্ষে এসে শুধুমাত্র ধরাবাধা কিছু সূত্র মুখস্থ করান এবং সেগুলো পর্যাপ্ত পর্যালোচনা ছাড়াই পুনরায় মুখস্থ করে আসতে বলা হয়। এতেই যেন তাদের দায়িত্ব শেষ। অথচ বাস্তব জীবনে তাদের এই শেখানো সংজ্ঞা-সূত্র কতটুকু উপযোগী তা বর্তমান সমাজের দিকে তাকালেই বোঝা যায়।
“সবসময়ই বর্তমান শিক্ষা-ধর্ম যদি সঠিক হতো, সমৃদ্ধ হতো, আদর্শিক হতো, সঠিক লাইনে থাকতো তবে ইতিহাসস্বীকৃত সেসব খ্যাতিমান মানবরা তাদের সময়ে গতানুগতিক শিক্ষাব্যবস্থা ও ধর্মপালনের বাইরে এসে চিন্তাভাবনা ও বিপ্লব করতে হতো না। তাই একজন মানুষের সার্বিক দিক বিবেচনা করে প্রতিটি শিক্ষা ব্যবস্থায় যে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন, ঢেলে সাজানো প্রয়োজন, ধর্মীয় ভাবনা ও পালনে পরিবর্তন প্রয়োজন।”
পৃথিবীর এই বিরাট পাঠশালায় চিন্তা ও শেখার জন্য রয়েছে বহু উপকরণ ও বিষয়। এ উপকরণ ও বিষয়গুলো যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করে প্রকৃত জ্ঞানের দ্বার উন্মোচন করা যায়, তবে হয়তো একদিন এই পৃথিবী হয়ে উঠবে স্বপ্নের চেয়েও সুন্দর। একটি আদর্শ সমাজ বা সভ্যতা কখনো একক প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠে না। গড়ে উঠে বহু মানুষের শ্রম ও ত্যাগে। একটি আদর্শ সমাজ গড়ে তুলতে হলে সবার শ্রম ও চিন্তার সমন্বয় অপরিহার্য। অথচ আধুনিক শিক্ষার বেশির ভাগ পাঠই মানুষকে শেখায় স্বার্থপর হতে। স্বার্থপর হয়ে শুধূু নিজেই একা সুখে জীবনযাপন করাই যেন সবচেয়ে শান্তির। চারপাশে কত মানুষ অনাহারে মরছে, নানা সমস্যায় ভুগছে, তাদের দেখার কেউ নেই। শিক্ষার প্রধান লক্ষ মানবতা। মানবতার শিক্ষাই প্রকৃত শিক্ষা।
লেখকের সব কলাম
বর্তমানে বহুলোক মুখে শুধু মানবতার কথা বলে, আর কাজ করে ভিন্ন। যদিও মানবতার কিছু কথা ও গাল-গল্প আমাদেরকে তোতা পাখির মতো শেখানো হয়। তাও আবার পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করে শ্রেষ্ঠ সফল ব্যক্তি হয়ে যেন সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারি সে লক্ষ্যে। সেসব মহামানবের গল্প শুনে আমরা মনে তৃপ্তি পেয়ে বলি, “আমরাও তাদের মতো সৃষ্টির সেবা করে পৃথিবীকে সুন্দর ও শান্তিময় করে তুলব।” প্রকৃতপক্ষে তারা যে কঠোর সাধনা করে নিজের লোভ লালসা ত্যাগ করে মানবতার জন্য নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন; আমরা সে জায়গাটাতে ব্যর্থ বলে তাদের মতো উদ্দেশ্য থাকা সত্ত্বেও বাস্তবায়িত করতে পারি না। শিক্ষার আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে যেন এও থাকে যে কীভাবে নিজের সব কিছুকে নিয়ন্ত্রণ করে মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করা যায়। মানুষের কল্যাণে যদি শিক্ষাকে ব্যবহার না করা যায় তবে সে শিক্ষার কোনো মূল্য নেই।
শিক্ষা ও ধর্ম মানুষকে গড়ে তুলে মনুষ্যত্বের অধিকারী এক আদর্শ মানুষ হিসেবে। আর শিক্ষার উদ্দেশ্য শুধু ভাল ফলাফল করে একজন মানুষকে সফল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা নয়। বরং তার প্রধান লক্ষ্য হলো মানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করে মানবিক ঐক্যে প্রয়াসী একটি মহৎ জাতি গড়ে তোলায় নিবেদিত করা। ধর্মও আর দশজন মানুষের মতো কেবল খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার জন্য নয়, বরং ইহলোকে সর্বোচ্চ মানবতা প্রতিষ্ঠিত করা শেখায়।
শরীফ উদ্দীন রনি : বার্তা সম্পাদক, দেশ দর্শন
sharifuddin420953@gmail.com
ক্যাটাগরি: প্রধান কলাম, সম্পাদকের বাছাই
[sharethis-inline-buttons]